TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

প্রজন্মের সবচেয়ে কঠোর প্রাণীকল্যাণ নীতি আনছে যুক্তরাজ্যের লেবার সরকার

ইংল্যান্ডে প্রাণীকল্যাণ মান উন্নয়নে বড় ধরনের সংস্কার আনতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য সরকার। এই পরিকল্পনার আওতায় মুরগির খাঁচা ব্যবস্থার ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা এবং শূকরের প্রসবকালীন ফ্যারোয়িং ক্রেট ধাপে ধাপে প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে এসব পরিবর্তন বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।

 

পরিবেশমন্ত্রী এমা রেনল্ডস বলেন, নতুন এই প্রাণীকল্যাণ কৌশল এক প্রজন্মের মধ্যে সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী উদ্যোগ। তিনি জানান, সরকার ইতোমধ্যে চিড়িয়াখানার মান উন্নয়ন, পাপি পাচার বন্ধ এবং কুকুরের আক্রমণ থেকে গবাদিপশু সুরক্ষায় ব্যবস্থা নিয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় এখন খাঁচাবন্দি মুরগি, নিষ্ঠুর স্নেয়ার ফাঁদ, ট্রেইল হান্টিং এবং নিম্নমানের কুকুর প্রজননের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

নতুন কৌশলে খাঁচাবিহীন পোলট্রি ব্যবস্থায় রূপান্তরের কথা বলা হয়েছে এবং একাধিক মুরগি রাখা ‘এনরিচড কলোনি’ খাঁচা বন্ধের বিষয়ে পরামর্শ নেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে। পাশাপাশি কৃষিখাতের সঙ্গে আলোচনা করে শূকর খামারে ব্যবহৃত ফ্যারোয়িং ক্রেটের বিকল্প পদ্ধতি চালুর পথ খোঁজা হবে।

সরকার দ্রুত বর্ধনশীল মুরগির জাত—যাকে প্রাণীকল্যাণ কর্মীরা ‘ফ্রাঙ্কেনচিকেন’ বলে অভিহিত করেন—নিষিদ্ধ করার বিষয়টিও বিবেচনা করছে। কম্প্যাশন ইন ওয়ার্ল্ড ফার্মিং ইউকের প্রধান অ্যান্থনি ফিল্ড বলেন, এই উদ্যোগ খামারে পালিত প্রাণীদের কল্যাণে নতুন মানদণ্ড স্থাপন করবে।

যুক্তরাজ্যে একক মুরগির জন্য প্রচলিত ব্যাটারি খাঁচা আগেই নিষিদ্ধ হয়েছে। আরএসপিসিএর হিসাবে, বর্তমানে প্রায় ৮০ শতাংশ মুরগি ফ্রি-রেঞ্জ ব্যবস্থায় পালিত হচ্ছে। সংস্থাটির জনবিষয়ক প্রধান ডেভিড বোলসের মতে, বাকি ২০ শতাংশ মুরগিকে খাঁচা থেকে সরিয়ে নেওয়া বাণিজ্যিকভাবে বড় কোনো সমস্যা তৈরি করবে না।

তবে ন্যাশনাল ফার্মার্স ইউনিয়ন আমদানিকৃত খাদ্যের মান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সংগঠনের সভাপতি টম ব্র্যাডশ বলেন, যুক্তরাজ্যে যে মানদণ্ডে উৎপাদন বাধ্যতামূলক করা হবে, আমদানির ক্ষেত্রেও তা নিশ্চিত না করলে ব্রিটিশ কৃষকেরা সস্তা বিদেশি পণ্যের সঙ্গে অন্যায্য প্রতিযোগিতায় পড়বেন।

খাদ্য ও গ্রামীণ বিষয়ক দপ্তর (ডেফরা) জানিয়েছে, সরকার খাদ্যমান কমাবে না এবং বাণিজ্য চুক্তির ক্ষেত্রেও উচ্চ প্রাণীকল্যাণ মান বজায় রাখবে। বিদেশি পণ্য কোনো অন্যায্য সুবিধা পাচ্ছে কি না, সেটিও নিয়মিত মূল্যায়ন করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
নতুন কৌশলে পাপি ফার্মিং নিষিদ্ধের উদ্যোগকেও গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

পাপি ফার্মিং বলতে খারাপ পরিবেশে কুকুর রেখে বছরে একাধিক লিটার উৎপাদনের মাধ্যমে মুনাফা বাড়ানোর চর্চাকে বোঝায়। প্রাণী অধিকারকর্মীদের মতে, এতে কুকুরছানাদের দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়। সরকার সব কুকুর প্রজনকের জন্য নতুন নিবন্ধন ব্যবস্থা এবং লাইসেন্সের স্বাস্থ্যমান উন্নয়নে পরামর্শ গ্রহণ করবে।

এ ছাড়া গ্রামাঞ্চলে স্নেয়ার ফাঁদ ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং ২০২৬ সালে ট্রেইল হান্টিং নিষিদ্ধে পরামর্শ প্রক্রিয়া শুরুর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সরকার বলছে, অনেক ক্ষেত্রে ট্রেইল হান্টিং শিয়াল শিকারের আড়াল হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যা আইন প্রয়োগকে দুর্বল করে।

এই সংস্কার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে কনজারভেটিভ ও গ্রামীণ সংগঠনগুলো ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। কাউন্ট্রিসাইড অ্যালায়েন্স একে অপ্রয়োজনীয় ও বিভাজনমূলক ইস্যু বলে আখ্যা দিয়েছে। কনজারভেটিভ পার্টির মতে, এটি গ্রামীণ ব্রিটেন ও ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির ওপর সরাসরি আঘাত এবং আইন মেনে চলা শিকারিদের শাস্তি দেওয়ার শামিল।

সূত্রঃ বিবিসি

এম.কে

আরো পড়ুন

যুক্তরাজ্যে বাড়ছে ব্যবহৃত ইভির বাজার

যুক্তরাজ্যের ক্যানারি ওয়ার্ফে হোটেলে আশ্রয়প্রার্থীদের বসবাস নিয়ে উত্তেজনা, পুলিশি নজরদারি জোরদার

যুক্তরাজ্যের নতুন উপপ্রধানমন্ত্রী অলিভার ডাউডেন