11.6 C
London
May 4, 2025
TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

প্রতিদিন হোম অফিসের তত্ত্বাবধানে আশ্রয়প্রার্থীদের উপর ১০টি হামলা হয়ঃ রিপোর্ট

যুক্তরাজ্যের হোম অফিসের অভ্যন্তরীণ সরকারি তথ্য অনুযায়ী, আশ্রয়প্রার্থীদের উপর প্রতিদিন গড়ে ১০টি হামলা নথিভুক্ত করা হচ্ছে। এই ঘটনার তথ্য তখন প্রকাশিত হল, যখন সরকারের কড়া বক্তব্য চ্যানেল পার হয়ে আসা অভিবাসীদের বিরুদ্ধে চলমান রয়েছে।

তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত হোম অফিসের তত্ত্বাবধানে থাকা অবস্থায় আশ্রয়প্রার্থীদের উপর মোট ৫,৯৬০টি হামলার রেফারেল করা হয়েছে। একই সময়ে ঘৃণাজনিত অপরাধের শিকারদের জন্য ৩৮০টি রেফারেল পাঠানো হয়েছে হোম অফিসের অভ্যন্তরীণ সুরক্ষা কেন্দ্রে।

ফ্রিডম অব ইনফরমেশন (FoI) আইনের মাধ্যমে পাওয়া এই তথ্য থেকে জানা যায়, হোম অফিস এই সময়ে মানব পাচারের শিকার ১১,৫৪৭টি এবং নির্যাতনের শিকার ৪,৬৮৬টি রিপোর্ট পেয়েছে।

সরকারের মন্ত্রীরা ছোট নৌকায় করে যুক্তরাজ্যে আগতদের বিরুদ্ধে একাধিক কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছেন, যেমন জোরপূর্বক প্রত্যাবাসন বাড়ানো, ব্রিটিশ নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া এবং তাদের ফ্রান্স বা বালকান অঞ্চলে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা।

চ্যারিটি সংস্থা কেয়ারফোরকালেইস-এর সিইও স্টিভ স্মিথ বলেন, “এই পরিসংখ্যান ভয়াবহ, কিন্তু আমি অবাক হইনি। আমাদের স্থানীয় দলগুলো প্রায় প্রতিদিনই হোম অফিস এবং তাদের কন্ট্রাক্টরদের বিরুদ্ধে সুরক্ষা সংক্রান্ত গুরুতর উদ্বেগ জানায়, কিন্তু সেগুলো সাধারণত উপেক্ষা করা হয় বলে মনে হয়।”

কেয়ারফোরকালেইস কর্তৃক প্রাপ্ত আলাদা FoI তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে মাইগ্রান্ট হেল্প থেকে হোম অফিস ১,৪৭৬টি গুরুতর অভিযোগ পেয়েছে। মাইগ্রান্ট হেল্প হোম অফিসের সাথে যুক্ত একটি সংস্থা যারা আশ্রয়প্রার্থীদের সমস্যা নিয়ে কাজ করে। এর মধ্যে ৩৬৭টি অভিযোগ ছিল আশ্রয়প্রার্থীদের প্রতি কন্ট্রাক্টরদের আচরণ নিয়ে।

তবে ধারণা করা হচ্ছে এই তথ্য সমূহ প্রকৃত অবস্থার তুলনায় কম। কারণ অনেকেই আশ্রয় প্রার্থনার আবেদনের ক্ষতির আশঙ্কায় অভিযোগ করেন না, অথবা অভিযোগ করলেও তাতে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

হোম অফিস সূত্র জানায়, অনেক সময় একজন ব্যক্তির ব্যাপারে একাধিকবার রেফারেল করা হতে পারে। gov.uk-এর নির্দেশিকা অনুযায়ী, আশ্রয় বাসস্থানে কোনো ধরনের ক্ষতি, নির্যাতন বা শোষণের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা গ্রহণ করা হয়।

পার্লামেন্টের সর্বদলীয় হোম অ্যাফেয়ার্স সিলেক্ট কমিটি আশ্রয় বাসস্থান সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে তদন্ত করছে। শতাধিক ব্যক্তি ও সংগঠন লিখিত প্রমাণ জমা দিয়েছে, যা তদন্তাধীন রয়েছে এবং ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।

ব্রিটিশ রেড ক্রস তাদের লিখিত প্রমাণে “অপ্রতুল সুরক্ষা সংস্কৃতি” চিহ্নিত করেছে, যেখানে অনেক বাসিন্দা “শারীরিক বা মানসিকভাবে নিরাপত্তা অনুভব করেন না” বলে জানা যায়।

ব্রিটিশ রেড ক্রস একটি হোটেলের উদাহরণ দেয়, যেখানে নারীরা এবং কিশোরীরা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে এবং হোটেলের স্টাফদের কাছে অভিযোগ করলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

একটি ঘটনায় জানা যায়, একজন নিরাপত্তারক্ষী হামলা চালিয়ে একজন আশ্রয়প্রার্থীকে গুরুতরভাবে আহত করলেও, সেই আশ্রয়প্রার্থীকে অন্য কোথাও কেন্দ্রে স্থানান্তরের অনুরোধে কোনো সাড়া দেওয়া হয়নি। আত্মহত্যার চেষ্টা করে হাসপাতালে ভর্তি এক ব্যক্তিকে এমন একটি ঘরে ছাড়া হয়েছিল যেখানে জানালা ছিল না—যা তার মানসিক অবস্থার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ছিল।

হেলেন ব্যাম্বার ফাউন্ডেশনের নীতিমালা পরিচালক কামেনা ডার্লিং বলেন: “মানব পাচার ও নির্যাতনের শিকারদের নিয়ে এই বিপুল সংখ্যক সুরক্ষা রেফারেল অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আমরা দীর্ঘদিন ধরে আশ্রয়কেন্দ্রের বাসস্থানের ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করে আসছি, যার মধ্যে আত্ম-নির্যাতন এবং আত্মহত্যার প্রবণতা রয়েছে, কিন্তু কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।”

হোম অফিসের এক মুখপাত্র বলেন: “যেখানে ব্যক্তিগত কল্যাণ নিয়ে উদ্বেগ দেখা যায়, সেখানে তাদের সুরক্ষা কেন্দ্রে রেফার করা যায়। আমরা আমাদের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের কল্যাণকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখি।”

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে
২২ এপ্রিল ২০২৫

আরো পড়ুন

অবৈধভাবে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করা আশ্রয়প্রার্থীদের বিল নিয়ে যুক্তরাজ্য ইইউ টানাপোড়েন

অর্ধেকে নেমে গেছে হিথ্রোর যাত্রী

যুক্তরাজ্যের প্রতিটি পরিবার ৪০০ পাউন্ড জ্বালানি ছাড় পাবে