সাবেক মেজর সিনহাকে যেখানে হত্যা করা হয় সেই শামলাপুর চেকপোস্টের পাশেই বাইতুন নুর জামে মসজিদ। এই মসজিদের ইমাম গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, দুই হাত উপরে তোলা অবস্থায় সিনহা রাশেদকে গুলি করেছেন ইন্সপেক্টর লিয়াকৎ। এরপর থেকেই কে বা কারা তাকে ‘দেখে নেয়ার’ হুমকি দিচ্ছে বলে তার অভিযোগ।
এদিকে ১৩ দিন ধরে লাপাত্তা সিনহা নিহতের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কক্সবাজারের শামলাপুর মসজিদের মুয়াজ্জিন মোহাম্মদ আমীন। এছাড়াও পুলিশ ভোররাতে বাড়িতে গিয়ে ভাঙচুর চালিয়েছে এমন অভিযোগ করেছেন ঘটনার আরেক সাক্ষী এক সিএনজি চালক।
শুক্রবার (১৪ আগস্ট) বাইতুন নুর জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা শহিদুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, কয়েকজন সিভিল ড্রেসে আর কয়েকজন পুলিশ পোশাক পরেই এসেছিলেন। এসে বললেন, আপনি মসজিদের ইমাম সাহেব এটা নিয়ে আপনার এতো কিছু করার দরকার নাই। আপনি আর এমন কিছু করবেন না। এমন করলে আপনাকেও ‘ইয়ে’ করা হবে!
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী শামলাপুর মসজিদের রোহিঙ্গা মুয়াজ্জিন মোহাম্মদ আমীন ঘটনার একদিন পর থেকে নিখোঁজ বলে জানিয়েছেন তার স্ত্রী। তার অভিযোগ, স্বামীর খোঁজে এখন পর্যন্ত চারবার বাড়িতে এসেছে পুলিশ।
আমীনের স্ত্রী জানান, কোরবানির ঈদের পরদিন বের হয়েছিলেন তার স্বামী। এখনও ফিরে আসেনি। কোথায় গিয়েছে তাও জানেন না তিনি। এরইমধ্যে পুলিশ এসে ভিডিও করে নিয়ে গিয়েছে। আর হুমকি দিয়ে গেছে যে তার স্বামীকে না পেলে সমস্যা হবে।
পুলিশের বিরুদ্ধে ভোর রাতে এসে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে গালমন্দ করার অভিযোগ করেছেন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সিএনজিচালক কালাম। নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কথা টেলিভিশন সাংবাদিকদের জানান তিনি।
কালাম জানান, সেদিন পুলিশ এসে তার কাছে জানতে চেয়েছিলো সাক্ষী দেয়ার ব্যাপারে। ‘যেটা দেখছি সেটাই সাক্ষী দিয়েছি’ বলে জানিয়ে দেন পুলিশকে। এরপর পুলিশ তাকে মারতে চেয়েছিল, ঘরের দুইটা দরজা ভেঙে দিয়ে গেছে।
গত ৩১ জুলাই রাত ১০টার দিকে টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা রাশেদ খান। এ ঘটনায় সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এরপর ৫ আগস্ট টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ ও বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ লিয়াকত আলীসহ ৯ জনকে আসামি করে সিনহার বোন কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলায় অভিযুক্ত ৯ পুলিশ সদস্যকেই বরখাস্ত করা হয়। মামলাটি তদন্ত করছে কক্সবাজার র্যাব-১৫। এই ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলায় সিনহার সহযোগী শিপ্রা দেবনাথ ৯ আগস্ট ও সাহেদুল ইসলাম সিফাত ১০ আগস্ট জামিনে কারাগার থেকে মুক্তি পান।
১৪ আগস্ট ২০২০
এনএইচটি