6 C
London
December 29, 2025
TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

প্রথমেই আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘুষ-দুর্নীতির দিকে দৃষ্টি দিবেন প্রধান বিচারপতি

দেশের ২৬তম প্রধান বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী। ২৮ ডিসেম্বর শপথ নিয়ে তার কার্যকাল শুরু করেছেন প্রধান বিচারপতি হিসেবে। নবনিযুক্ত এই প্রধান বিচারপতির কাছে একগুচ্ছ প্রত্যাশা আইনজীবীদের নেতা সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজলের। একান্ত আলাপচারিতায় ‍তিনি নানা কথা বললেন বর্তমান প্রধান বিচারপতির সততা, নিষ্ঠা ও যোগ্যতা সম্পর্কে।

ব্যারিস্টার কাজল বলেন, একজন আইনজীবী হিসেবে প্রধান বিচারপতির কাছে আমার বেশ কয়েকটি প্রত্যাশা রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা অনেকগুলো অনিয়ম আমাদের নিয়মে পরিণত হয়েছে। যেমন সুপ্রিম কোর্টসহ নিম্ন আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কিছু ঘুষ-দুর্নীতি কথা প্রতিনিয়ত আমরা দেখি। যার সরাসরি শিকার আমরা হই।
একটা প্রশাসনিক অচলাবস্থা বা শৃঙ্খলার অভাব আমরা লক্ষ্য করি বিভিন্ন আদালতে, প্রশাসনে। আমি মনে করি প্রধান বিচারপতি এই বিষয়টার দিকে প্রথমেই দৃষ্টি দিবেন। এখানে আরেকটি বিষয় হচ্ছে বিগত দিনে বেশ কয়েকজন বিচারপতি যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে , বেশ কয়েকজন বিচারপতিকে ইতিপূর্বে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের মুখোমুখি হয়ে তাদেরকে বিদায় নিতে হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি প্রধান বিচারপতির দৃষ্টিতে বা তার জানামতে যারা দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তি যারা বিচারক কর্মে যদি কেউ নিযুক্ত থাকেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করবেন-এটা আমার প্রত্যাশার জায়গা।
তিনি বলেন, আইনজীবী হিসেবে আমাদেরও প্রধান বিচারপতি এবং এই কর্মযজ্ঞে নিজেদের নিযুক্ত হওয়া দরকার। সেক্ষেত্রে আমি মনে করি আইনজীবীদের মধ্যে যারা অত্যন্ত সৎ, মেধাবী এবং যোগ্য তাদেরকেও প্রধান বিচারপতি যদি এই কর্মযজ্ঞ শুরু করেন তাহলে সেখানে সহযোগিতা করা দরকার। এ ধরনের একটা পরিবর্তনে যারা দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতিতে জড়িত, জামিন বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত বা সিন্ডিকেট করে সুপ্রিম কোর্টকে বিভিন্ন বিচারপতিকে জিম্মি করে এমন ব্যক্তিরা তারা কিন্তু এই নিয়োগে খুব বেশি খুশি হয়নি। কিন্তু আমি অত্যন্ত খুশি এই নিয়োগে। নিয়োগ পাওয়ার পর তাকে আমি অভিনন্দন জানিয়েছি।
ব্যারিস্টার কাজল বলেন, সুপ্রিম কোর্ট বলতে যে অবয়বটা আমাদের মনের মধ্যে চলে আসে যেখানে হবে বিচার আইনের প্রক্রিয়ার মধ্যে চলবে। কোন রকম বিচ্যুতি হবে না। শ্রেনীভেদে কোন মানুষের বিচারে বৈপরীত্য হবে না। সব মানুষ ন্যায় বিচার পাবে। সুপ্রিম কোর্টে আসলে মানুষ মনে করবে যে ন্যায় বিচারের মানদন্ড এখানে সমুজ্জ্বল। এরকম একটা প্রত্যাশা সুপ্রিম কোর্টের প্রতি সেই অবয়বটা ফিরিয়ে আনবেন প্রধান বিচারপতি। আমাদের বিদায়ী প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ অনেক চেষ্টা করে সুপ্রিম কোর্টকে একটা পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। স্বতন্ত্র সচিবালয় হয়েছে। যার পুরো কার্যক্রম প্রধান বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীকে বাস্তবায়ন করতে হবে।
নিয়মিত একজন প্রধান বিচারপতিকে যে ধরনের কাজ করতে হয় এর থেকে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং জব বর্তমান প্রধান বিচারপতির কাছে আমার মনে হয়। সেই ক্ষেত্রে আমি প্রধান বিচারপতিকে বলব আপনি যেমন প্রধান বিচারপতি এবং সুপ্রিম কোর্টের প্রধান অভিভাবক হিসেবে রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ যেমন দুর্নীতিমুক্ত বিচার প্রশাসন তৈরী করবেন, দুর্নীতিবাজ বিচারকদের বিতাড়ন করবে আমার প্রত্যাশা। বিভিন্ন স্তরে কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে কেউ যদি দুর্নীতিগ্রস্থ হয় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করবেন। দুর্নীতির মূলোৎপাটন করবেন।
দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন করবেন-এমনটাই প্রত্যাশা প্রধান বিচারপতির কাছে। সেক্ষেত্রে আইনজীবীদের পক্ষ থেকে যেহেতু আমি বার কাউন্সিলের সারা দেশের আইনজীবীদের কর্তৃক নিযুক্ত নির্বাচিত সদস্য, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্য ও একাধিকবার সম্পাদক নির্বাচিত করার মাধ্যমে আস্থায় রেখেছেন আমাকে। আমি তাদের পক্ষ থেকে বলতে চাই আপনার এই কাজের সৎ, যোগ্য ও দক্ষ যাদের পেশা এবং এই প্রতিষ্ঠানের প্রািত ভালোবাসা ও দরদ আছে তারা সবাই আপনাকে সহযোগিতা করবে। সেক্ষেত্রে আমার কাছে মনে হয় প্রধান বিচারপতির আরেকটি কাজ হবে বারের সঙ্গে আইনজীবীদের সঙ্গে এনগেইজমেন্ট করা।
তিনি বলেন, আমি উনার সম্পর্কে যতটুকু জানি উনি পাবলিকলি এক্সপোজড হতে চান না। এটা অনেক ভালো গুণ। যে কোন কাজে বা সামাজিক কোন কাজকর্মে উনি নিজেকে এক্সপোজড করতে চান না। আমি মনে করি সুপ্রিম কোর্টকে কার্যকর করার জন্য উনার মিশন ও ভিশনকে কার্যকর করতে হয় তাহলে আইনজীবীদের আস্থায় না আনতে পারলে সেটা অর্জন করা সম্ভব হবে না। সেক্ষেত্রে আমি উনাকে অনুরোধ করব বার ও বেঞ্চের মধ্যে সমন্বয় করা। আইনজীবীদের কি সমস্যা সেই বিষয়ে উনাকে আইনজীবীদের সঙ্গে এনগেইজড হওয়া দরকার প্রধান বিচারপতির।
ফলে বাস্তব অবস্থা উনি অনেক বেশি ফিডব্যাক পাবেন। বিচার প্রশাসনের কোন সিদ্ধান্তই কার্যকর হবে না যদি না আইনজীবীরা সেক্ষেত্রে সহযোগিতার মনোভাব না দেখায়। একটা প্রাতিষ্ঠানিক সিষ্টেম করার জন্য এটা একটা কমপ্যাক্ট সিদ্ধান্ত। আমি মনে করি প্রধান বিচারপতি এ বিষয়ে নজর দেবেন এবং আইনজীবীদের এনগেইজমেন্টের মধ্যে রাখবেন। সেক্ষেত্রে আমি মনে করি স্বপ্নের যে অবয়বে সুপ্রিম কোর্টকে দেখি ন্যায় বিচারের মানদন্ড হিসেবে, নিপীড়িত -নির্যাতিত মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে দেখি সেরকম একটা জায়গা সেরকম একটা সুপ্রিম কোর্ট মাথা উচু করে দাড়াবে প্রধান বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীর যোগ্য নেতৃত্বে।
ব্যারিস্টার কাজল বলেন, প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীর দ্বিতীয় কর্মদিবস আজ। এখন সুপ্রিম কোর্টের অবকাশ চলছে। ৪ জানুয়ারি থেকে নিয়মিত কোর্ট শুরু হবে। প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত হওয়ার পর উনি অত্যন্ত কর্মব্যস্ত সময় পার করছেন। তিনি বিভিন্ন পর্বে পর্বে মিটিং করছেন প্রশাসনিক বিভিন্ন বিষয়ে। মাননীয় বিচারপতিদের সঙ্গেও উনি কথা বলেছেন বলে আমরা জেনেছি।
ব্যারিস্টার কাজল বলেন, বিচারপতি জুবায়ের রহমান অত্যন্ত সৎ, কর্মঠ ও  কর্মনিষ্ঠ ব্যক্তি। তার বিচারিক জীবনে কেউ কখনো তাকে তার ন্যায়-নীতি থেকে বিন্দুমাত্র বিচ্যুত হতে দেখেনি। আপিল বিভাগে যখন উনি বিচারপতি পদে নিযুক্ত হয়েছেন, যদিও অনেক আগেই তার আপিল বিভাগের বিচারক হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু বিগত ফ্যাসিবাদ আমলে তাকে অনেকবার ডিঙ্গানো হয়েছে। তার থেকে যারা পরে হাইকোর্টে নিয়োগ পেয়েছেন সেসব জুনিয়র বিচারপতিদের উপরে উঠানো হয়েছে। আপনারা তা দেখেছেন।
এই বিচ্যুতি বা তাকে ডিঙ্গানোর পরেও তিনি কখনো তার কোন বিচারিক কার্যক্রম  বা কথাবার্তার মধ্যে কোন শ্লেষ বা ক্রোধ প্রকাশ করেননি। তিনি সবসময় একটা কথা বলে থাকেন যেটা আমরা স্পষ্টত দেখতে পাই যে, আইন, সংবিধান ও বিচারিক নীতির যে মানদন্ড তার বাইরে কখনো নিজেকে নিয়ে যাননি। আমি মনে করি সে হিসেবে নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতি অন্য অনেকের চেয়ে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।
তিনি বলেন, তার পিতা প্রয়াত বিচারপতি আব্দুর রহমান চৌধুরীও ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তি ছিলেন। পারিবারিক ঐতিহ্যগতভাবেও তাদের পরিবার অত্যন্ত ন্যায়নিষ্ঠ ও ধার্মিক এবং ন্যায় পরায়ণ ব্যক্তি বলে পরিচিত। এই ধারাটা সবসময় উনার মধ্যে দেখেছি।
এম.কে

আরো পড়ুন

লিডিং ইউনিভার্সিটির ‘নির্যাতিত’ সেই উপাচার্যকে দায়িত্বে ফেরালেন শিক্ষার্থীরা

ঢাকায় নতুন ব্রিটিশ হাই কমিশনার সারাহ কুক

নিউজ ডেস্ক

লন্ডনে ঈদের জামাতে প্রকাশ্যে দেখা গেল হাছান মাহমুদকে