5.4 C
London
November 15, 2024
TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

প্রশংসায় ভাসছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যে ক্যালিগ্রাফি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালীন দেয়ালে দেয়ালে ছিল নানা স্লোগান। তবে সেসব মুছে দিয়ে বিভিন্ন সৃজনশীল লেখা, অঙ্ক ও ক্যালিগ্রাফিতে রঙিন হচ্ছে দেয়ালগুলো। তেমনই একটি ক্যালিগ্রাফি নজর কড়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসীর মনে। আর সেই ক্যালিগ্রাফির নাম হচ্ছে ‘স্বাধীনতার সূর্যোদয়’। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও অন্যান্য জেলার বিভিন্ন ফেসবুজ পেজ ছাড়াও দর্শনার্থীরা নিজের ব্যক্তিগত আইডি থেকে প্রশংসামূলকভাবে ছবিটি প্রচার করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গ্রাফিতিটি এঁকেছেন এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী উসাইদ মুহাম্মদ। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের পূর্বে ঢাকার লালবাগের একটি মাদরাসা থেকে তাকমিল ফিল হাদিস (মাস্টার্স) শেষ করেছেন। উসাইদ মুহাম্মদ পরিবারের সঙ্গে ঢাকার মুহাম্মদপুরে বসবাস করেন। তার নিজ জেলা ফরিদপুর। বাবা হারুন অর রশীদ অটো মেকানিক্সের একটি ওয়ার্কশপ চালান। মা হালিমা বেগম গৃহিণী। চার ভাই ও দুই বোনের মধ্যে উসাইদ মুহাম্মদ মেজো।

উসাইদ মুহাম্মদ জানান, আঁকাআঁকির শখ এসেছে তার বড় বোনকে দেখে। বড় বোন খুব ভালো ছবি আঁকতেন। সেই নিজে অনুশীলন করে এবং ২০১৬ সালে একটি একাডেমিক প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর ২০১৮ সাল থেকে উসাইদ মুহম্মদ চিত্রাঙ্কন ও ক্যালিগ্রাফি করা নিজের পেশা হিসেবে নিয়েছেন। ২০২০ সালে ঢাকায় তিনি একটি একাডেমি শুরু করেন। একাডেমির নাম ‘বসিলা আর্ট ক্যালিগ্রাফি একাডেমি’। সেখানে তিনি বর্তমানে ৫০ জনকে চিত্রাঙ্কন বা ক্যালিগ্রাফি শেখান। শুধু তাই নয়, ২০২১ সাল থেকে বিভিন্ন জেলায় গিয়ে ক্যালিগ্রাফির উপর কর্মশালা করেন উসাইদ।

উসাইদ মুহাম্মদ আরও জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যখন শেখ হাসিনা পদত্যাগ ত্যাগ করে দেশে ছাড়েন তখন থেকে নতুনভাবে দেশ স্বাধীনতা পায়। গত বৃহস্পতিবার তারই একাডেমির সদস্যদের নিয়ে ঢাকা শহীদ মিনারে যান ক্যালিগ্রাফি করতে। কিন্তু সেখানে চারুকলার কয়েকজন ছাত্র ও শিক্ষক মিলে শহীর মিনার প্রাঙ্গণে ক্যালিগ্রাফি করতে দেননি এবং অপমান করে চলে যেতে বলেন। তখন তাদের এই ৫০ জনের দলটি ক্যালিগ্রাফি করার জন্য পুরো বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। আর তারই ন্যায় উসাইদ ও তার একাডেমির একজন সদস্য জুনায়েদ আহমেদ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের চলে আসেন। তারপর শহরের দক্ষিণ মৌড়াইলস্থ পাবলিক লাইব্রেরির পশ্চিম পাশের মিশন হাসপাতালে একটি পুরাতন দেয়ালে ছবিটি অঙ্কন করেন।

উসাইদ বলেন, ‘স্বাধীনতার সূর্যোদয়’ যে শিরোনাম দেওয়া হয়েছে তার কারণ স্বাধীনতার সূর্যোদয় আমরা মাত্রই দেখতে পাচ্ছি। এখনো সূর্যের আলো আমাদের ওপর পুরোপুরি আসেনি। অঙ্কনে কিছুটা সূর্যোদয় করা হয়েছে, কিছু উদয় করা হয়নি। তাছাড়া অঙ্কনের ভেতর যে ভাঙা দেয়ালটি রয়েছে সেটি হচ্ছে কিছু দিন পূর্বে যে আমাদের উপর যে জরাজীর্ণ অবস্থা গিয়েছে, একটি অশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আর সেই জরাজীর্ণ অবস্থা থেকে সূর্য উদয় হচ্ছে বিষয়টি বোঝানো হয়েছে। তাছাড়া কিছুটা সুবজ-শ্যামল ঘনঘটা দেওয়া হয়েছে। আলো প্রতিস্ফলন দেওয়া হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত শুক্রবার (৯ আগস্ট) বাদ আসর থেকে ‘স্বাধীনতার সূর্যোদয়’ চিত্রাঙ্কনটির কাজ শুরু হয়েছে। এদিন রাত ৩টা অবধি অঙ্কনটি নিয়ে কাজ করেছি। শনিবার দুপুর ২টা নাগাদ অঙ্কনটির কাজ শেষ হয়েছে। কাজটি যদি লক্ষ করেন তাহলে দেখবেন যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার পুরো চিত্রটি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহাসিক যে বিষয়গুলো রয়েছে যেমন- জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুসিয়া মাদরাসা, ব্যাপ্টিস্ট চার্জ, তিতাস গ্যাস ক্ষেত্রকে চিত্রাঙ্কনটিতে তুলে ধরা হয়েছে। এই অঙ্কনটিতে আমরা কোনো বৈষম্য রাখিনি। যেকোনো ধর্ম বা গোত্রের লোকজন চিত্রটির সামনে এসে ছবি তুলতে পারবে।

শিক্ষার্থী হোসেন ইসলাম জয় বলেন, স্বাধীনতার সূর্যোদয়ের ছবিটি একটি চমৎকার দৃশ্য। ইতোমধ্যে ছবিটি নিয়ে সকলেই অনেক প্রশংসা করছেন। আর যিনি ছবিটি এঁকেছেন তিনিও প্রশংসায় ভাসছেন। ভাঙা একটি দেয়াল এত সুন্দর চিত্র হতে পারে সেটি অনেকের জন্য শিক্ষণীয়। যিনি এঁকেছেন আর যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের সকলকে জানাই অনেক অনেক ধন্যবাদ।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আবদুন নুর বলেন, ছাত্র-জনতা নতুন একটি বিজয় এনেছে বলে মনে করি। আর সেই বিজয়ে নতুন সূর্যোদয় হবে সেটা সকলেরই আশা। আর সেই আশা অনুপাতের উসাইদ মুহাম্মদ ‘স্বাধীনতার সূর্যোদয়’ নাম যে অঙ্কনটি করেছেন তার মিল রয়েছে। অঙ্কনটি অনেকটাই প্রশংসনীয়।

শিক্ষক শাহজাহান আলম বলেন, চিত্রশিল্পীর অঙ্কনকৃত চিত্র তার মনের ভাবকে রংতুলি দিয়ে অঙ্কন করে। ‘স্বাধীনতার সূর্যোদয়’ অঙ্কনটির চিত্রশিল্পী ও সকল ছাত্রসমাজের মনের ভাব। নতুন সূর্যোদয়ে আলো তাদের মধ্যে পড়বে সেটিই আশা করি।

এম.কে
১২ আগস্ট ২০২৪

আরো পড়ুন

এক উঠানে মসজিদ-মন্দির, ধর্মীয় সম্প্রীতির উজ্জ্বল নিদর্শন

ড. ইউনূসের ‘বিচার চাওয়া’ গৌতমই হলেন ইউএসটিসির উপাচার্য

ঢাকায় প্রতি ১০ লাখে ১৪ হাজারেরও বেশি আক্রান্ত

অনলাইন ডেস্ক