অবস্থান থেকে সরে এসে দুর্বল ব্যাংককে সহায়তা দিতে টাকা ছাপানোর পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের ঘোষণা অনুযায়ী গ্রাহকরা চাহিদা মত টাকা তুলতে পারছেন না।
গভর্নর বলছেন, গ্রাহকরা যে এখনও টাকা পাচ্ছে না সেই বিষয়টি তিনি ‘জানেন না’, কেন এমন হয়েছে, সেটি তিনি খতিয়ে দেখবেন।
রোববার ন্যাশনাল ব্যাংক তার গ্রাহকদেরকে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা দিতে পারলেও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল), ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকে বেশিরভাগ শাখা থেকে গ্রাহকরা পাঁচ হাজার টাকার বেশি তুলতে পারেননি।
যাদের হিসাব মতিঝিলের দিলকুশা শাখায়, তাদের মধ্যে এসআইবিএলের গ্রাহকরা সর্বোচ্চ ২০ হাজার, ফার্স্ট সিকিউরিটি ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহকরা ১০ হাজার টাকা করে তুলতে পেরেছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যোগাযোগ করে জানা গেছে, চারটি ব্যাংকের মধ্যে গ্লোবাল ও ইউনিয়ন ব্যাংককে অল্প কিছু টাকা পেয়েছে, সোমবার দেওয়া হবে বাকিটা, তবে বাকি দুটি ব্যাংককে টাকা দেওয়া হয়েছে এরই মধ্যে।
২২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ছাপিয়ে এই চারটিসহ মোট ছয়টি ব্যাংককে সহায়তা দেওয়া হবে জানিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বৃহস্পতিবার বলেছিলেন, তারল্য সংকটে ভোগা ব্যাংকগুলোতে রোববার থেকে গ্রাহকরা তাদের চাহিদা অনুযায়ী টাকা তুলতে পারবেন।
তবে বৃহস্পতি আর রোববারের চিত্রের মধ্যে কোনো পার্থক্য দেখা যায়নি। গ্রাহকদেরকে চেক নিয়ে ব্যাংক থেকে চোখে-মুখে বিরক্তি নিয়ে ঘুরে যেতে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে গভর্নর বলেন, “ফার্স্ট সিকিউরিটি ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে টাকা দেওয়া হয়েছে। তারা চাহিদা মোতাবেক কেন টাকা দিতে পারছে না তা আমি জানি না, তবে বিষয়টি নিয়ে আমি দেখব।
“তবে গ্লোবাল আর ইউনিয়নে টাকা দেওয়া হয়নি সেভাবে। সোমবারে দেওয়া হবে।”
গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছিলেন, রোববার থেকে ব্যাংক গ্রাহকরা চাহিদা অনুযায়ী টাকা পাবেন।
গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে বেশ কয়েকটি ব্যাংকে তারল্য সংকট প্রকট হয়। সেগুলো গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী টাকা দিতে পারছিল না। এ নিয়ে গ্রাহকরা নানা জায়গায় বিক্ষোভও দেখাচ্ছিলেন।
তবে গভর্নর হয়ে আহসান মনসুর বলেছিলেন, দুর্বল ব্যাংকগুলোকে তারা কোনো সহায়তা দেবেন না। ব্যাংকগুলোতে নিজেদের মত করে চলতে হবে। আর আওয়ামী লীগ সরকার ৬০ হাজার কোটি টাকা ছাপানোয় মূল্যস্ফীতি বেড়েছে বলে মন্তব্য করে বলেছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকার এভাবে টাকা ছাপাবে না।
কিন্তু চার মাস যেতে না যেতেই এই অবস্থান থেকে সরেছে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রথমে সবল ব্যাংক থেকে ধার হিসেবে প্রায় আট হাজার কোটি টাকা ধার দেওয়া হয়। তাতেও সংকট না কাটায় টাকা ছাপানো হয়, আর গত বৃহস্পতিবার বিষয়টি স্বীকার করেন গভর্নর।
এম.কে
০২ ডিসেম্বর ২০২৪