বেলজিয়াম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যাক্সিম প্রেভো মঙ্গলবার এ সিদ্ধান্ত জানান। একই সঙ্গে তিনি ইসরায়েলি সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথাও ঘোষণা করেন।
প্রেভো জানান, এই পদক্ষেপ একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বার্তা বহন করবে, যা দুই-রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনা টিকিয়ে রাখবে এবং ইসরায়েলের দখলদারিত্ব ও বসতি স্থাপনের নীতির বিরুদ্ধে স্পষ্ট নিন্দা জানাবে। তিনি বলেন, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির প্রশাসনিক প্রক্রিয়া রাজকীয় ফরমানের মাধ্যমে তখনই কার্যকর হবে, যখন শেষ বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে এবং হামাস আর কোনোভাবে ফিলিস্তিন শাসন করবে না।
গত জুলাইয়ে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দেন। এরপর এক ডজনের বেশি পশ্চিমা দেশ একই পথে হাঁটতে রাজি হয়েছে। ইসরায়েলি মন্ত্রীরা এ পদক্ষেপকে সন্ত্রাসবাদকে পুরস্কৃত করার সমতুল্য বলে আখ্যায়িত করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দেওয়ার অনুমতি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।
বেলজিয়ামের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গাজার মানবিক বিপর্যয়ের প্রেক্ষাপটে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইসরায়েল ও হামাস উভয়ের ওপরই চাপ সৃষ্টি করা দরকার। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই সিদ্ধান্ত ইসরায়েলি জনগণকে শাস্তি দেওয়ার জন্য নয়, বরং তাদের সরকারকে আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার আইন মেনে চলতে বাধ্য করার জন্য। পাশাপাশি হামাস সমর্থকদের যেকোনো ইহুদিবিদ্বেষ বা সন্ত্রাসবাদের মহিমান্বিতকরণেরও কঠোর নিন্দা জানানো হবে।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ১২টি নিষেধাজ্ঞার পরিকল্পনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো অবৈধ বসতি থেকে আসা পণ্যের আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা, ইসরায়েলি কোম্পানির সঙ্গে সরকারি চুক্তি পুনর্বিবেচনা, অবৈধ বসতিতে বসবাসরত বেলজিয়ানদের কনস্যুলার সেবা সীমিতকরণ, বিচারিক পদক্ষেপের সম্ভাবনা এবং আকাশপথে উড়ান ও ট্রানজিট নিষেধাজ্ঞা। এ ছাড়া ইসরায়েলের দুইজন অতি-ডানপন্থী মন্ত্রী, সহিংস বসতি স্থাপনকারী ও হামাস নেতাদের ‘পারসোনা নন গ্রাটা’ ঘোষণা করা হবে।
এছাড়াও বেলজিয়াম ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ইসরায়েলের সহযোগিতা স্থগিত করার উদ্যোগকে সমর্থন দেবে। এর মধ্যে রয়েছে ইইউ-ইসরায়েল অ্যাসোসিয়েশন চুক্তি, গবেষণা প্রকল্প ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বন্ধ করা। যদিও কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর মধ্যে এ বিষয়ে তীব্র মতপার্থক্য দেখা গেছে।
বেলজিয়াম জানিয়েছে, তারা “নিউ ইয়র্ক ঘোষণা”-তে যোগ দেবে, যা ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত সমাধানে ধাপে ধাপে একটি রূপরেখা নির্ধারণ করেছে। এর লক্ষ্য হলো একটি স্বাধীন, নিরস্ত্রীকৃত ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন, যা শান্তিপূর্ণভাবে ইসরায়েলের পাশে বসবাস করবে এবং পরবর্তীতে বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে সংযুক্ত হবে। গত জুলাইয়ে সৌদি আরব, কাতার, মিসর, জর্ডান ও তুরকিসহ একাধিক আরব ও মুসলিম দেশ এই ঘোষণায় স্বাক্ষর করে।
গাজায় চলমান যুদ্ধ মানবিক সংকট সৃষ্টি করেছে এবং অঞ্চলটির অধিকাংশ এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের ওপর যুদ্ধ দ্রুত শেষ করার জন্য আন্তর্জাতিক চাপ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সূত্রঃ দ্য টাইমস অব ইসরায়েল
এম.কে
০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫