যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিলকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে দেশজুড়ে। গতকাল বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে ট্রাম্প টাওয়ারে জড়ো হয়ে ব্যাপক বিক্ষোভ করেন জায়নবাদ (ইহুদি জাতীয়তাবাদ) বিরোধী ইহুদিদের সংগঠন ‘জিউইশ ভয়েস ফর পিস’।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে নিউইয়র্ক পুলিশের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, বিক্ষোভে অংশ নেয় কমপক্ষে ১৫০ জন, যাদের সবাই ইহুদি। ফিলিস্তিনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে বিভিন্ন স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে ট্রাম্প টাওয়ারের লবিতে সমবেত হন তারা।
ফিলিস্তিন–ইসরায়েল ইস্যুতে ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষপাতমূলক নীতির তীব্র নিন্দা করেন বিক্ষোভকারী ইহুদিরা। নেতানিয়াহু প্রশাসনবিরোধী নানা স্লোগানে রাজপথ প্রকম্পিত হয়ে ওঠে।
পরিস্থিতি সামলাতে ও ট্রাম্প টাওয়ারের বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশ তৎপর হয়। স্থানীয় কিছু সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, দু’পক্ষের মধ্যে ধ্বস্তাধ্বস্তি হয়েছে। ৯৮ জন বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে পুলিশ। তবে, কেউ আহত হননি বলে নিশ্চিত করেছেন নিউইয়র্কের জননিরাপত্তা বিভাগের ডেপুটি মেয়র।
এ ইস্যুতে সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্ট করে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে জিউইশ ভয়েস ফর পিস নামের সংগঠনটি। পোস্টটিতে বলা হয়, ‘আমরা ট্রাম্প টাওয়ার দখল করে ট্রাম্প প্রশাসনকে একটা বার্তা দিতে চেয়েছি যে—তারা যা করছে তা আমরা প্রত্যাখ্যান করছি।’
ওই পোস্টে ট্রাম্প প্রশাসনকে ‘ফ্যাসিবাদী’ বলেও আখ্যা দিয়েছে সংগঠনটি। তারা বলছেন, ‘ইসরায়েল সরকার গণহত্যা ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন করেছে এবং এতে সম্পূর্ণ অর্থায়ন করেছে মার্কিন সরকার। এর বিরুদ্ধে যারাই কথা বলছে তাদেরই অপরাধী বানিয়ে দিচ্ছে তারা। এই ফ্যাসিবাদী আচরণ আমরা চুপ করে মেনে নিতে পারি না।’
গত শনিবার (৮ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের ডরমিটরি থেকে ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিলকে গ্রেপ্তার করে মার্কিন অভিবাসন কর্মকর্তারা। তিনি কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের শিক্ষার্থী।
গত বছর ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যে বিক্ষোভ হয়, তার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন যে ক’জন, তাদের মধ্যে অন্যতম ফিলিস্তিনি এই শিক্ষার্থী। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন কার্ডধারী।
গত ২০ জানুয়ারি শপথ নেওয়ার পরপরই ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে বিদেশি শিক্ষার্থীরা ইহুদিবিদ্বেষী কার্যকলাপ করেছে বা করছে, তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাবেন তিনি। ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভ নির্মূলেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট এমন ঘোষণা দিয়েছেন বলে মনে করেন অনেক বিশ্লেষক।
খলিল গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক দিন আগে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ কোটি মার্কিন ডলারের ফেডারেল তহবিল বাতিল করেন ট্রাম্প। খলিল গ্রেপ্তার হওয়ার পর নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে তিনি লিখেছেন, ‘এটা প্রথম গ্রেপ্তার, আরও অনেক আসতে চলেছে।’
এসব ঘটনার পর, ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে জড়িত থাকা আরও ২২ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে ক্যাম্পাসের একটি ছাত্র সংগঠন। শাস্তিমূলক ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে—বহিষ্কার, ছাত্রত্ব স্থগিত এবং ডিগ্রি বাতিল।
যদিও এর সত্যতা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে, যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে ট্রাম্প প্রশাসনের চাপের মুখে এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ—এমনটাই বলছেন অনেক বিশ্লেষক।
সূত্রঃ রয়টার্স
এম.কে
১৫ মার্চ ২০২৫