ফেনী জেলার মানুষের কাছে এবারের বন্যা একদিকে যেমন আকস্মিক অন্যদিকে অকল্পনীয়। শুধু ফেনী নয়, এর আশপাশের জেলাগুলোতে বন্যা আগ্রাসী রূপ ধারণ করেছে। বহু জায়গায় বন্যার পানি ঘরের চাল ছুঁয়েছে কিংবা উপচে গেছে।
ফেনীর পাশের জেলা কুমিল্লা, নোয়াখালী এবং চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে বন্যার তীব্রতা অনেককে হতবাক করেছে।
ভারত সীমান্তের লাগোয়া ফেনী জেলায় এই বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে নানা বিশ্লেষণ চলছে।
সামাজিক মাধ্যমের বিভিন্ন পোস্টের মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে এই জেলাগুলোর বাসিন্দারা বলছেন, সেখানে ‘সচরাচর বন্যা হয় না’।
এর আগেও, বেশ কয়েকটি জেলায় বন্যার ক্ষেত্রে ‘অস্বাভাবিক’ বন্যার কথা শোনা গেছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এই অঞ্চলগুলোতে সচরাচর বন্যা না হবার তথ্যটি সঠিক নয়।
বাংলাদেশে আকস্মিক বন্যার কবলে পড়ে এখন পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে দুর্যোগ মন্ত্রণালয়। এছাড়াও প্রায় ৪৫ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এবারের বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে অন্তত ১১টি জেলা, যেগুলোর মধ্যে আছে কুমিল্লা, ফেনী ও চট্টগ্রামও।
ভারতের ত্রিপুরা ও মিজোরামে কয়েকদিন ধরেই অতি বৃষ্টিপাত ও বন্যার খবর গণমাধ্যমে এলেও বাংলাদেশে এনিয়ে খুব বেশি সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
তবে দুদিন আগে ফেনী ও কুমিল্লা অঞ্চলে পানি ঢুকতে শুরু করলে বেশ সরব হয় ইন্টারনেট-ভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।
এর আগে গত বছরের অগাস্টে অতিভারী বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম ও বান্দরবানে পানিবন্দী হয়ে পড়ে কয়েক লাখ মানুষ। সেসময় তিন দিনের ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে জেলাটিতে প্রায় শতাধিক পাহাড় ধসের ঘটনাও ঘটে।
বৃষ্টিপাতের অতীত রেকর্ডগুলোর মধ্যে ২০০৭ সালে ৬১০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল। সে সময় চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে ভূমিধসের কারণে ১২৮ জন মানুষ মারা যায়।
২০১১ সালে টানা ছয় দিনের ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
এছাড়া ২০১৭ সালে পুরো চট্টগ্রাম বিভাগজুড়ে ব্যাপক বৃষ্টির পর ভূমিধসে মোট ১৬৯ জন মানুষ নিহত হয়।
এছাড়াও সিলেটসহ হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারেও প্রায়ই বন্যা দেখা যায়। বিশেষ করে ২০২২ সালে সিলেটে কয়েক দফা বন্যা হয়।
ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে অতিবৃষ্টি একটি বড় কারণ হলেও এর বাইরে আরও কিছু উপাদান এসব বন্যার পেছনে কাজ করছে বলে জানায় বিশেষজ্ঞরা।
যেমন, নদীর পানি বহনের ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাওয়া।
ওই অঞ্চলের নদীগুলোর নাব্যতা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মেঘালয় বা আসাম থেকে আসা বৃষ্টির অতিরিক্ত পানি নদী পথে হাওর থেকে বের হয়ে মেঘনা বা যমুনা হয়ে বঙ্গোপসাগরে চলে যেতে পারে না।
সেই সাথে, সিলেটসহ হাওর এলাকার অপরিকল্পিত উন্নয়নকেও এর জন্য দায়ী করেন অনেকে।
বিশ্লেষক আইনুন নিশাত বলছেন, সারা মাসে যে পরিমাণ বৃষ্টি হবার কথা, অগাস্ট মাসের মাঝের তিনদিনে তার চেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে।
এছাড়াও ত্রিপুরা মিজোরামসহ বাংলাদেশের ওই অঞ্চলে যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে তা যদি ঢাকায় হতো, তাহলে ঢাকার ৮০ শতাংশ এলাকা ডুবে যেত বলেও মন্তব্য করেন এই বিশ্লেষক।
ফলে বন্যার জন্য অতিবৃষ্টির বিষয়টিকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন এই বিশ্লেষক।
কুমিল্লা, ফেনী ও চট্টগ্রামে ‘বন্যা একেবারে হয় না, তাও না’। তবে অন্য বছরগুলোর তুলনায় এবছর বন্যা বেশি হয়েছে বলে জানান বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান।
বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে কুমিল্লাতে অত বড় বন্যা হয় নাই। কিন্তু ফেনী, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারে সাধারণত বন্যা হয়। এ বছর বড় পরিসরে বেশি এলাকাজুড়ে বন্যা হয়েছে, ফলে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে।
২০০৭ সালের পর কুমিল্লায় এবারই বড় আকারের বন্যা হয়েছে বলেও জানান তিনি। তবে হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে ২০১৮ সালেও এমন বন্যা দেখা গিয়েছে।
সূত্রঃ বিবিসি বাংলা
এম.কে
২৪ আগস্ট ২০২৪