ইসরায়েল আবারও পশ্চিম তীর দখলের হুমকি দিয়েছে, যদি ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়। এই হুমকি মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনাকে আরও ঘনীভূত করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মহল।
ইসরায়েলের চরম ডানপন্থী মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন নেতারা স্পষ্টভাবে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন, তারা একতরফাভাবে পশ্চিম তীরের বড় একটি অংশ ইসরায়েলের সঙ্গে “অন্তর্ভুক্ত” করতে প্রস্তুত রয়েছেন, যদি ইউরোপ ও পশ্চিমা দেশগুলো ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়।
এই অবস্থান ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতাকারী কূটনীতিকদের জন্য বড় ধরনের কৌশলগত চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। ফ্রান্স সম্প্রতি একাধিকবার জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদকে সমর্থন জানিয়েছে, এবং প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ ফিলিস্তিনি স্বীকৃতির পক্ষে অবস্থান নিতে পারেন বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়।
যুক্তরাষ্ট্র এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়নি, তবে বাইডেন প্রশাসন ‘দুই রাষ্ট্র নীতি’র পক্ষে কথা বলছে। হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা জানান, “এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানই একমাত্র বাস্তব ও ন্যায্য পথ।”
এদিকে, ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ বলছে, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেলে ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান আরও জোরালো হবে। পিএলও (PLO) নেতা সাঈব এরিকাত-এর এক উত্তরসূরি বলেন, “ফিলিস্তিনের রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি কোনো ‘উপহার’ নয়, এটি আমাদের অধিকার।”
ইসরায়েলের নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গিভির এবং অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ স্পষ্টভাবে বলেছেন, “যদি ফ্রান্স বা যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়, তাহলে আমাদের আর কোনো বিকল্প থাকবে না—আমরা পশ্চিম তীরের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করব।”
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই ধরনের বক্তব্যকে আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী বলেছে। পশ্চিম তীরকে জাতিসংঘ ‘অধিকৃত অঞ্চল’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, এবং সেখানে বসতি স্থাপন আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অবৈধ।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের একাধিক দেশ ইতোমধ্যে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে, যার মধ্যে নরওয়ে, আয়ারল্যান্ড ও স্পেনের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, “এই হুমকি শুধু ইসরায়েল-ফিলিস্তিন নয়, গোটা মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরায়েলি হুমকি মূলত আন্তর্জাতিক চাপকে প্রতিহত করার কৌশল। তবে এই ধরনের শক্ত অবস্থান শেষ পর্যন্ত ইসরায়েলের কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতা বাড়াতে পারে।
সূত্রঃ আল জাজিরা / রয়টার্স
এম.কে
২৮ মে ২০২৫