কানাডার ‘বেগমপাড়া’ দুর্নীতিবাজদের মিলনমেলায় পরিনত হয়েছে দীর্ঘ এক যুগ ধরে। বাংলাদেশি দুর্নীতিবাজেরা বাংলাদেশের অবৈধ অর্থের বিনিময়ে কানাডার টরন্টোতে বাড়ি-গাড়ি বানিয়েছেন। তবে সাধারণ প্রবাসীরা এইসব দূর্নীতিবাজদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বয়কট করে যাচ্ছেন।
দূর্নীতিবাজদের বেশির ভাগই একপ্রকার সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন কানাডায়। বর্তমানে কানাডার টরেন্টো শহরের প্রবাসী বাঙ্গালীরা দূর্নীতিবাজদের এড়িয়ে চলছেন। নিরুপায় হয়ে দূর্নীতিবাজ ব্যক্তিরা টরেন্টো ছেড়ে অন্য শহরের দিকে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছেন বলে তথ্যমতে জানা যায়। ফলে কানাডার টরেন্টো খ্যাত বেগমপাড়া এখন আরো বড় হচ্ছে। কানাডার নানা শহরে দুর্নীতিবাজ আওয়ামীলীগ সরকারের কর্তাব্যক্তিরা বসতি স্থাপন করছেন।
বেগমপাড়া বলতে মূলত কানাডার টরেন্টোর বিভিন্ন অঞ্চল বা শহরকে বোঝানো হয়, যেসব স্থানে বাংলাদেশের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা অর্থ পচার করেন বা অবৈধ অর্থে সেখানে আবাসন, গাড়ি কিনে বসবাস করছেন। খুব দ্রুত বাড়ি, গাড়ি কেনায় এইসব দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিরা স্থানীয় প্রবাসী বাঙালিদের খারাপ নজরে পড়েন। ফলে কয়েক বছর ধরে এই শহরে বসবাসরত দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে বসবাসরত বাঙালিদের দূরত্ব তৈরি হয়। সামাজিকভাবে এসব দুর্নীতিবাজকে এড়িয়ে চলা শুরু করে অন্য বাঙালিরা।
শুধু তাই নয়, টরেন্টোর বাঙালিপাড়া খ্যাত ড্যানফোর্থে রোডে বিভিন্ন শপ ও স্থানে প্রকাশ্যে দুর্নীতিবাজদের সামাজিকভাবে বয়কট করা হয়। এই পরিস্থিতিতে এসব দুর্নীতিবাজ ও অর্থ-সম্পদের মালিক কর্মকর্তারা কানাডার বিকল্প শহরে স্থানান্তরিত হতে থাকেন। গত দুই বছর ধরেই অনেক দুর্নীতিবাজ পরিবার কানাডার ক্যালগেরি শহরে স্থানান্তরিত হয়েছে। এটি কানাডার আলবার্টা প্রভিন্সের রাজধানী। এখানে তুলনামূলক ট্যাক্স কম ও সুযোগ-সুবিধাও বেশি। এ ছাড়া এখানকার স্থানীয় বাঙালিরা এসব দুর্নীতিবাজের বিষয়ে খুব বেশি কিছু জানেন না। ফলে সমাজে মিশে যেতে পারছেন এসব দুর্নীতিবাজ। তাই নিরাপদ বসবাসের বিকল্প হয়ে উঠছে ক্যালগেরি। ফলে বেগমপাড়া সম্প্রসারিত হচ্ছে কানাডার আরো একটি শহরে।
এ বিষয়ে কানাডায় গত প্রায় দুই দশক ধরে বসবাসরত মো. তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে আসার পরপরই কয়েক দিনের ব্যবধানে গাড়ি ও বাড়ি কিনলেই আমরা বুঝতে পারি তার অর্থের উৎস। তিনি যে বাংলাদেশে অবৈধভাবে টাকা কামিয়েছেন সেটি প্রমাণিত হয়ে যায়। ফলে এসব মানুষকে স্থানীয় বাঙালিরা বয়কট করে বা সামাজিকভাবে এড়িয়ে চলে। আর দুর্নীতিবাজ এসব মানুষের সামাজিক বন্ধনও খুব দুর্বল। চক্ষুলজ্জার ভয়ে এরা সাধারণত সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশতে পারেন না। এ জন্য অনেকে এই শহর ছেড়ে অন্য শহরে পাড়ি জমাচ্ছেন।’
এম.কে
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪