TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

বাংলাদেশসহ তিন দেশে আইইএলটিএস প্রতারণা, ব্রিটেনে ভিসা জালিয়াতির আশঙ্কা

বাধ্যতামূলক ইংরেজি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া সত্ত্বেও হাজারো শিক্ষার্থী, স্বাস্থ্যকর্মী এবং অন্যান্য অভিবাসী ব্রিটেনে ভিসা পেয়েছেন—এমন একটি বড়সড় মার্কিং ভুল উদঘাটিত হয়েছে। ব্রিটিশ কাউন্সিল পরিচালিত আন্তর্জাতিক ইংরেজি ভাষা পরীক্ষা আইইএলটিএস–এ ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৮০,০০০ পরীক্ষার্থী ভুল স্কোর পেয়েছেন বলে জানা গেছে। পরীক্ষার ফল ভুলভাবে বেশি দেখানো হওয়াই এর মূল কারণ।

 

আইইএলটিএস-এর তথ্য অনুযায়ী, ‘প্রযুক্তিগত সমস্যার’ কারণে লিসেনিং ও রিডিং অংশের কিছু প্রশ্নে ত্রুটি ঘটে। প্রতিষ্ঠানটির দাবি—এটি মোট পরীক্ষার মাত্র এক শতাংশকে প্রভাবিত করেছে, তবে পরিসংখ্যানে তা প্রায় ৭৮,০০০ পরীক্ষার সমান। ত্রুটিটি দুই বছরেরও বেশি সময় অজানা থাকার ফলে অনেকেই ভুলভাবে পাস করে শিক্ষার্থী বা কর্মী ভিসা নিয়ে ব্রিটেনে প্রবেশ করেছেন।

ইংরেজি দক্ষতার অভাব নিয়ে যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয় ও স্বাস্থ্যসেবায় আগেই উদ্বেগ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানিয়েছেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশের ইংরেজি দক্ষতা কাঙ্ক্ষিত নয়। এনএইচএস–এ কোরোনাররা সতর্ক করেছেন, দুর্বল ইংরেজি জানা কর্মী রোগীর নিরাপত্তার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে এবং অতীতে এ ধরনের ভুলের কারণে প্রাণহানিও ঘটেছে। এক ঘটনায় দেখা যায়, একটি কেয়ার–ওয়ার্কার “breathing” ও “bleeding”–এর পার্থক্যই বুঝতে পারেননি, যা জরুরি সেবার সময় প্রাণঘাতী ভুলের জন্ম দেয়।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম ও চীনে আইইএলটিএস পরীক্ষায় প্রতারণার প্রমাণ মিলেছে। বাংলাদেশে দুর্নীতির মাধ্যমে প্রশ্ন সংগ্রহ করে £১,০০০ থেকে £২,৫০০–এ বিক্রির অভিযোগে দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ভিয়েতনামে প্রশ্নফাঁসের সন্দেহে শেষ মুহূর্তে একটি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পরিবর্তন করতে বাধ্য হয় ব্রিটিশ কাউন্সিল। যুক্তরাজ্যের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে শিক্ষার্থী নিয়োগ স্থগিত করেছে ভিসা জালিয়াতির ঝুঁকি বিবেচনায়।

শ্যাডো হোম সেক্রেটারি ক্রিস ফিল্প বলেছেন, “ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে প্রায় দশ লাখ মানুষ ইংরেজি ভালোভাবে বলতে পারেন না। এখন জানা যাচ্ছে প্রায় ৭৮,০০০ জন ভুল স্কোর পেয়ে ভিসা পেয়েছেন। যারা ভুলভাবে ভিসা পেয়েছেন—তাদের অপসারণ করতে হবে।” তিনি বলেন, ইংরেজি না জানলে অভিবাসীরা সমাজে একীভূত হতে পারে না এবং রাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।

ব্রিটিশ কাউন্সিল ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত পরীক্ষার্থীদের নতুন স্কোর পাঠিয়েছে এবং ক্ষমা চেয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি দাবি করেছে, মান–নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরও কঠোর করা হয়েছে যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ত্রুটি আর না ঘটে। তবে কোভিড–কালে নেওয়া সরকারি ঋণের £১৯৭ মিলিয়ন এখনো পরিশোধে সংগ্রাম করছে তারা। ভুল স্কোরের ক্ষতিপূরণ দাবি উঠলে আর্থিক চাপ আরও বাড়তে পারে।

ইংরেজি পরীক্ষার জন্য £৮১৬ মিলিয়ন মূল্যের নতুন পাঁচ বছরের চুক্তি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাজ্যের হোম অফিস। এতে ব্রিটিশ কাউন্সিলের পাশাপাশি আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতায় থাকবে। আইইএলটিএস জানিয়েছে—বর্তমান পরীক্ষাগুলোতে আর কোনো সমস্যা নেই এবং পরীক্ষার মান রক্ষায় কঠোর ব্যবস্থা চালু আছে।

সূত্রঃ দ্য টেলিগ্রাফ

এম.কে

আরো পড়ুন

যুক্তরাজ্যের সেন্ট আইভসের একমাত্র বৃদ্ধাশ্রমকে হোটেল নির্মাণের সিদ্ধান্তে তীব্র প্রতিবাদ

বিলেতে বাড়ি কেনাবেচাঃ বাই ফর ইউনিভার্সিটি মর্গেজ

রুয়ান্ডানীতি নিয়ে দেয়া রায়কে ঘিরে নতুন পরিকল্পনার কথা ভাবছে যুক্তরাজ্য সরকার