6.4 C
London
December 23, 2024
TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

বাংলাদেশে ‘অলিগার্ক’দের শিল্প কারখানার ভবিষ্যৎ কী?

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আওয়ামীলীগ সরকার কর্তৃক সৃষ্ট অলিগার্ক’দের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপারে অন্তবর্তী সরকার কী সিদ্ধান্ত নেবে সেটি এখন একটা বড় প্রশ্ন। শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বিবিসি বাংলাকে বলেন, সরকারের লক্ষ্য শিল্প রক্ষা করে কীভাবে ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করা।

“প্রতিষ্ঠানগুলো অবশ্যই টিকিয়ে রাখতে চাই দেশের স্বার্থে। দেশের মানুষের স্বার্থে। কিন্তু এখানে কিছু নির্দিষ্ট ব্যক্তি জড়িত ছিল। যারা ওই প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহার করে মানি লন্ডারিং করেছে, ঋণ নিয়েছে, ঋণ খেলাপি হয়েছে। সেই ব্যক্তিদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। কিন্তু বড় বড় প্রতিষ্ঠান হাজার হাজার শ্রমিক আছে, আমরা কোনও সিদ্ধান্ত নিতে গেলে তাদের ব্যাপারটাও ভাবতে হবে। তাদের জন্যও বিকল্প কর্মসংস্থানের কথা ভাবতে হবে। এবং এর প্রভাব জাতীয় অর্থনীতিতে কীভাবে পড়বে সেটাও আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে।”

প্রতিষ্ঠানগুলো টিকিয়ে রাখার প্রশ্নে শ্রম উপদেষ্টা জানান মালিকানায় পরিবর্তন আনা এমনকি কিছু জাতীয়করণ করা যায় কি না সে চিন্তা-ভাবনা থেকে পর্যালোচনা চলছে।

“একটা প্রতিষ্ঠানেতো মালিক একাধিক থাকে। অনেক স্টেকহোল্ডার্স আছে। তাদের মধ্যে থেকে কাদেরকে দায়িত্ব দিয়ে অথবা যদি প্রয়োজন বোধ করে শিল্প মন্ত্রণালয় জাতীয়করণ করতে পারে, কারণ শ্রমিকদের দিকটাও আমাদের দেখতে হবে। এবং দেশের এইরকম পলিসিগত ডিসিশন এবং এর বাস্তবায়ন এটা দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। এটা আমরা একদিনে পারবো না আবার একদিনে সেটা করতে গেলে সেটা আমাদের শিল্পের ক্ষতি করতে পারে এবং আমাদের শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের ক্ষতি করতে পারে।”

“সেজন্য আপনারা দেখেছেন যে একটি বড় বিজনেস বেল্টের গার্মেন্টসের শ্রমিকদের বেতন দেয়ার জন্য সরকার গ্যারান্টি দিয়ে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করেছে। আমরা স্মুথলি কীভাবে এই জিনিসগুলো সমাধান করা যায় তা নিয়ে কাজ করছি,” যোগ করেন মি. ভুঁইয়া।

এ বিষয়ে সিপিডির ফাহমিদা খাতুন বলেন, “রেগুলেটরি মেইজার অনেক ধরনের নিতে হবে এবং সাময়িকভাবে হলেও কিছুটা কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কারণ ওখানে হঠাৎ করে অন্য আরেকজন যদি সমান দক্ষভাবে না চালাতে পারে ব্যবসা, তাহলেতো সেবার মান নেমে যাবে কিংবা প্রতিষ্ঠানের লাভ কমে যাবে। এইজন্য সেটা একটা খারাপ অবস্থা, চ্যালেঞ্জিং সিচ্যুয়েশন আমি বলবো।”

বাংলাদেশে গত দেড় দশকে তথাকথিত অলিগার্কদের শিল্প কারখানার ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটেছে। এখন সেগুলো চাপের মুখে পড়েছে নানাভাবে। ৫ই আগস্ট সরকার পতনের পর এসব শিল্পমালিককের বেশকিছু প্রতিষ্ঠান হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের শিকার হয়েছে।

আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এবং সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের এমনও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানে হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। বেক্সিমকো গ্রুপের বেশকটি প্রতিষ্ঠান অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও হামলার শিকার হয়েছে।

ঢাকার কাছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের এমপি এবং সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর মালিকানাধীন গাজী গ্রুপের সাতটি প্রতিষ্ঠান পাঁচই আগস্টের পর ব্যাপক হামলা, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সরকার পতনের পর হামলায় উৎপাদন বন্ধ এবং ক্ষতি হওয়ার কারণে গাজী গ্রুপের সাতটি প্রতিষ্ঠানের প্রায় সাড়ে সাত হাজার শ্রমিক ছাটাই করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া গাজী টায়ারের একটা বড় যোগান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পণ্যের বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বলেও ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।

এছাড়া পোশাক শিল্প এলাকায়ও ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা নিয়ে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য সরকারের কাছে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি উঠেছে।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, আইনশৃঙ্খলার উন্নতি করার কোনো বিকল্প নাই।

“যখন সরকার গঠিত হয়েছে তখন থেকেই সবাই বলছিল যে যত দ্রুত সম্ভব স্ট্যাবিলিটি আনা এবং এই যে ক্ষয়ক্ষতি কিংবা আক্রমণ এগুলি বন্ধ করতে হবে। এগুলি দেশের ব্যবসা বাণিজ্য যেমন ক্ষতিগ্রস্ত করছে তেমনি আবার দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। যারা বাইরে থেকে আসছে এবং যাদেরকে আমরা আনতে চাই তাদের কাছে তো একটা খারাপ মেসেজ চলে যাচ্ছে।”

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে সরকার তৎপর হয়েছে। ইতোমধ্যে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেয়া হয়েছে। কথিত ‘অলিগার্ক’দের প্রতিষ্ঠানগুলোর ভবিষ্যৎ এবং সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সাক্ষাৎকার চাইলে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমানের দপ্তর থেকে জানানো হয় এই মুহূর্তে তিনি কথা বলতে রাজি নন।

সূত্রঃ বিবিসি

এম.কে
২০ আগস্ট ২০২৪

আরো পড়ুন

ডিএমপিঃ ৫ আগস্ট পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে

কবে থেকে রাজনৈতিক সরকার, জানালেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা

নিজ কার্যালয়ের দেয়াল থেকে প্রধানমন্ত্রীর ছবি সরালেন জাবি অধ্যাপিকা