20.2 C
London
June 9, 2025
TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

বাংলাদেশে এয়ার গানকে ‘স্নাইপার রাইফেল’ দাবি করে মিডিয়া রিপোর্টঃ প্রশ্ন উঠছে পেশাদারিত্ব নিয়ে

সম্প্রতি দেশের কয়েকটি প্রধানধারার টেলিভিশন চ্যানেল ও প্রিন্ট মিডিয়া তাদের সম্প্রচারিত সংবাদে দাবি করে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একটি “স্নাইপার রাইফেলসহ” একজন ব্যক্তিকে আটক করেছে নড়াইলে। সংবাদে উল্লিখিত অস্ত্রটির ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এটি আদতে একটি সাধারণ এয়ার গান—যা শিকারের উদ্দেশ্যে কিংবা খেলার সরঞ্জাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে এবং যা দিয়ে প্রাণঘাতী হামলা চালানো প্রায় অসম্ভব।

এই বিভ্রান্তিকর খবর প্রচারের পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে। সাংবাদিকতা জগতে শুরু হয় পেশাদারিত্ব, সত্য যাচাই এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সংবাদ পরিবেশনা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক। গণমাধ্যমে এমন ‘সংবেদনশীল’ বিষয়ের ভুল উপস্থাপনাকে অনেকেই দেখছেন “জনমনে অযথা আতঙ্ক সৃষ্টি” এবং “নির্দিষ্ট পক্ষের সুবিধার্থে জনমত প্রভাবিত করার একটি কৌশল” হিসেবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন খবর সাধারণত দুই ধরনের কারণে প্রকাশ পায়: এক. সাংবাদিকের পক্ষ থেকে অসতর্কতা ও তথ্য না বোঝার ব্যর্থতা; দুই. উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ঘটনার নাটকীয় রূপ দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সফলতা প্রচার কিংবা ভিন্ন ইস্যু থেকে দৃষ্টি সরানোর প্রচেষ্টা।

একজন নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, “এয়ার গান আর স্নাইপার রাইফেলের মধ্যে পার্থক্য বিশাল। একটি খেলাধুলার যন্ত্র, অন্যটি সামরিক মানের অস্ত্র। এমন ভুল রিপোর্টিং জনসচেতনতা বাড়ায় না, বরং তথ্য বিভ্রান্তি তৈরি করে।”

প্রিন্ট মিডিয়ার পক্ষ থেকে এ রিপোর্ট প্রচারের পর তাদের অফিসিয়াল সোশ্যাল মিডিয়া পেজে কয়েক হাজার মন্তব্য জমা পড়ে, যার অধিকাংশই ছিল বিদ্রুপ ও ক্ষোভমিশ্রিত। একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী মন্তব্য করেন, “এয়ার গান যদি স্নাইপার হয়, তাহলে তো আমরা সবাই সন্ত্রাসী!”

সাংবাদিকতা-সংক্রান্ত নীতিমালায় বলা আছে, কোনো অস্ত্র বা সংবেদনশীল বিষয় রিপোর্ট করার আগে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মতামত নেওয়া ও তথ্য যাচাই করা বাধ্যতামূলক। অথচ এ ক্ষেত্রে তা করা হয়নি বলেই অভিযোগ উঠেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের একজন অধ্যাপক বলেন, “ভুল যদি হয়ও, তা সংশোধন করে স্বচ্ছ ব্যাখ্যা দেওয়া উচিত। কিন্তু যখন কোনও মিডিয়া এমন খবর নিয়ে উৎসাহী প্রচার চালায় এবং ভুল সংশোধন করে না, তখন সেটি আর নিছক ভুল থাকে না—তা হয়ে ওঠে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণা।”

বিশ্লেষকদের মতে, এমন ঘটনা গণমাধ্যমের প্রতি জনগণের আস্থা নষ্ট করছে এবং ভবিষ্যতে প্রকৃত হুমকি বা বাস্তব ঘটনা নিয়েও মানুষ সন্দিহান হয়ে উঠবে।

দেশের অন্যতম একটি বেসরকারি গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এ ধরণের বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন অনেক সময় নিরাপত্তা বাহিনীর প্রকৃত কর্মকাণ্ডকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। এতে অপরাধ দমন নয়, বরং বাহিনী ও গণমাধ্যম—উভয়ের প্রতি মানুষের আস্থা ক্ষুণ্ন হয়।”

এই ঘটনা আরও একবার স্মরণ করিয়ে দিল যে, দ্রুত সংবাদ প্রকাশের প্রতিযোগিতায় পড়ে যাচাই-বাছাই না করলে তা কেবল ভুল তথ্য নয়—গণতান্ত্রিক পরিবেশেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

এম.কে
০৯ জুন ২০২৫

আরো পড়ুন

ভারতের কাছে দুই বিষয়ে ব্যাখ্যা চাইলেন ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

মাছের ত্বক থেকে জেলাটিন তৈরি করলো বাকৃবি গবেষকরা

ঢাবির ৩০তম উপাচার্য হচ্ছেন ড. নিয়াজ আহমেদ