গাইবান্ধার এক প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু হয়ে দেশের স্বাস্থ্য ও অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচন করছে ধানের তুষ। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জে ধানের তুষ থেকে উৎপাদিত হচ্ছে উচ্চ পুষ্টিগুণসম্পন্ন ভোজ্য তেল, যা স্থানীয় বাজার থেকে শুরু করে বিদেশেও সাড়া ফেলেছে বেশ।
এই তেল শুধু দামে সাশ্রয়ীই নয়, স্বাস্থ্যসম্মতও বটে। গবেষণায় দেখা গেছে, ধানের তুষের তেলে রয়েছে ওরিজানল নামক শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতে সহায়ক। এছাড়াও ভিটামিন ‘ই’ এবং মনো ও পলি-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিডের উপস্থিতি এই তেলকে করে তুলেছে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাসকারী ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধিকারী একটি আদর্শ খাদ্যতেল।
বর্তমান বাজারে অন্যান্য ভোজ্যতেলের দাম যখন লিটারপ্রতি ১৮০ টাকা, সেখানে এই তেল পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ১৫০ টাকায়। ফলে ভোক্তারা পাচ্ছেন উল্লেখযোগ্য আর্থিক সাশ্রয়ের পাশাপাশি পুষ্টিগুণের নিশ্চয়তা।
মহিমাগঞ্জের পুনতাইর গ্রামে প্রতিষ্ঠিত ‘প্রধান রাইচ ব্রান অয়েল মিল’ এ উৎপাদন প্রক্রিয়ায় দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন অটো ও সেমি-অটো রাইস মিল থেকে সংগ্রহ করা হয় ধানের তুষ। সেখানে দিনে প্রায় ৪০০ মেট্রিক টন তুষ প্রক্রিয়াজাত করে উৎপাদন করা হয় ১ লাখ ১০ হাজার লিটার ক্রুড অয়েল, যা পরিশোধন করে পাওয়া যায় ৪০ হাজার লিটার ভোজ্য তেল।
তেল উৎপাদনের পর অবশিষ্ট অংশ দিয়ে তৈরি হয় পুষ্টিসমৃদ্ধ মাছ ও গবাদিপশুর খাদ্য, যা দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রাণিখাদ্য কোম্পানিগুলোতে সরবরাহ করা হয়। এই সমন্বিত প্রয়াস ধানের তুষের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার পাশাপাশি সৃষ্টি করেছে হাজারো মানুষের কর্মসংস্থান।
মিলের স্বত্বাধিকারী নাজির হোসেন প্রধান জানান, ২০১৬ সালে উৎপাদন শুরুর পর থেকে এর একটি বড় অংশ রপ্তানি করা হলেও, গত আগস্ট মাস থেকে সরকারি সিদ্ধান্তে রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, তেলের গুণাগুণ ও সহজলভ্যতা সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারের অভাবে ভোক্তা পর্যায়ে এখনও তেমন সাড়া যোগাতে পারে নি তিনি।। সরকারি সহায়তায় ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর মাধ্যমে সীমিত পরিমাণে এটি সরবরাহ করা হচ্ছে।
এই শিল্প স্থানীয় অর্থনীতিকে গতিশীল করার পাশাপাশি জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সচেতনতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম বলে মনে করেন নাজির হোসেন। তার মতে, দেশের মোট ২০টি রাইস ব্রান অয়েল মিলকে বাঁচিয়ে রাখতে এবং এই সম্ভাবনাময় শিল্পকে বিকশিত করতে বিনিয়োগ ও প্রচারণায় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা অত্যন্ত জরুরি। তার পরিকল্পনা অনুযায়ী, মিলের পরবর্তী ধাপ চালু হলে আরও প্রায় দুই হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
এম.কে
২৫ আগস্ট ২০২৫