TV3 BANGLA
বাংলাদেশযুক্তরাজ্য (UK)

বাংলাদেশে প্লট দুর্নীতি মামলার রায় প্রশ্নবিদ্ধ, লেবারের পূর্ণ সমর্থন টিউলিপের পাশে

বাংলাদেশের বিশেষ জজ আদালতে প্লট দুর্নীতির মামলায় ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক, শেখ রেহানা ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দেওয়া সাজা স্বীকৃতি দিতে রাজি নয় যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টি। রায়ের প্রতিক্রিয়ায় দলটির মুখপাত্র বলেন, টিউলিপ সিদ্দিক ন্যায়সংগত আইনি অধিকার পাননি এবং তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিস্তারিত কখনো জানানো হয়নি।

ঢাকার চতুর্থ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক রবিউল আলম সোমবারের রায়ে টিউলিপকে দুই বছর, শেখ রেহানাকে সাত বছর এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। অভিযোগ ছিল, ঢাকায় আবাসন থাকার তথ্য গোপন করে রেহানা পূর্বাচলে ১০ কাঠার প্লট নিয়েছিলেন এবং এ বরাদ্দে শেখ হাসিনা ক্ষমতার অপব্যবহার করেছিলেন। মামলায় অভিযোগ রয়েছে টিউলিপ খালা শেখ হাসিনাকে প্রভাবিত করে মাকে প্লট পাইয়ে দেন।

রায়ের পরপরই ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান-কে টিউলিপ বলেন, পুরো বিচারপ্রক্রিয়া শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত “প্রহসন”—এটি ছিল “একটি ক্যাঙ্গারু কোর্ট”, যার ফলাফল পূর্বনির্ধারিত। তিনি রায়কে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক বলে উল্লেখ করেন।

পরবর্তীতে লেবার পার্টির এক মুখপাত্র বলেন, সুপরিচিত আইনজীবীরা ইতোমধ্যেই ইঙ্গিত দিয়েছেন যে টিউলিপ সিদ্দিক এই মামলায় মৌলিক আইনি অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। অভিযোগের কপি বা কোনো নথি তার আইনজীবীদের দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, “অভিযুক্তের আইনগত প্রতিরক্ষা উপস্থাপনের সুযোগ পাওয়ার কথা, কিন্তু এই ক্ষেত্রে তা হয়নি—তাই লেবার এই রায়কে স্বীকৃতি দিতে পারে না।”

দলটি জানায়, টিউলিপের বিরুদ্ধে কোনো অভ্যন্তরীণ দলীয় তদন্ত বা শৃঙ্খলাভঙ্গের প্রক্রিয়া চলছে না। তিনি এখনো লেবারের হুইপ এবং সংসদ সদস্য হিসেবে বহাল আছেন।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ভারতে চলে যান। টিউলিপ যুক্তরাজ্যেই অবস্থান করেন। মামলাটি তাদের ‘পলাতক’ দেখিয়ে বিচার হওয়ায় আসামিপক্ষ আদালতে আইনজীবী নিয়োগ করতে পারেনি। এ নিয়ে যুক্তরাজ্যের পাঁচজন শীর্ষ আইনজীবী বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে দেওয়া এক চিঠিতে বলেন, টিউলিপ এই মামলায় ন্যূনতম অধিকারও পাননি—আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ, অভিযোগ জানার অধিকার, কোনো কিছুরই সুযোগ দেওয়া হয়নি।

চিঠিতে অভিযোগ করা হয়, বাংলাদেশে যে আইনজীবীকে টিউলিপ নিয়োগ দিতে চেয়েছিলেন, তাকে গৃহবন্দি করা হয় এবং তার মেয়েকে হুমকিও দেওয়া হয়। এ বিষয়ে রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক রবিউল আলম বলেন, মৃত্যুদণ্ড সংশ্লিষ্ট অভিযোগ না থাকলে পলাতক আসামিকে রাষ্ট্রীয় আইনজীবী দেওয়ার বিধান নেই।

টিউলিপকে ঘিরে বিতর্ক নতুন নয়। লন্ডনে সাত লাখ পাউন্ডের ফ্ল্যাট ‘উপহার’-এর অভিযোগ এবং রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে দুর্নীতির সাথে নাম জড়ানো নিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে এর আগেও ব্যাপক আলোচনা হয়। গুলশানের একটি ফ্ল্যাট বোন রূপন্তীর কাছে হস্তান্তরের নোটারি নথি ভুয়া—এমন অভিযোগও দুদক তোলে।

দুদকের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার প্রতিক্রিয়ায় টিউলিপের আইনজীবীরা অভিযোগ করেন, দুদক কোনো প্রামাণিক নথি দেয়নি এবং যোগাযোগের চেষ্টা করলেও সাড়া দেয়নি, যা তার ন্যায়বিচারের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করেছে। দুদক চেয়ারম্যান আব্দুল মোমেন বলেন, টিউলিপ নির্দোষ হলে কেন পদত্যাগ করলেন? দুদক আগেই তার আইনজীবীকে মামলায় অংশগ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছিল।

এদিকে পূর্বাচলে প্লট মামলার অন্য তিনটি রায়ে শেখ হাসিনাকে মোট ২১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তার সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুলও পাঁচ বছর করে দণ্ডিত হয়েছেন। গণঅভ্যুত্থান দমনে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডও ঘোষণা করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

পূর্বাচলের আরও দুটি মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে, যেখানে টিউলিপ সিদ্দিক, শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি এবং আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী অভিযুক্ত।

যুক্তরাজ্যে চারবারের এমপি টিউলিপ সিদ্দিক গত বছর লেবার সরকারের অধীনে সিটি মিনিস্টার ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানার কন্যা টিউলিপের শৈশব কেটেছে বাংলাদেশ, ভারত ও সিঙ্গাপুরে। তিনি লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে পাবলিক নীতি ও গভর্নমেন্ট বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

এম.কে

আরো পড়ুন

সিলেটের নতুন কূপে ডিজেলের আধার, মানও উন্নত

বৈদ্যুতিক এয়ার ট্যাক্সির প্রথম সফল উড্ডয়ন

যুক্তরাজ্যের রেড লিস্টে যুক্ত হলো ভারত

অনলাইন ডেস্ক