বাংলাদেশে ব্রয়লার মুরগির মাংসে নতুন ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ধরা পড়েছে, যার মূল উৎস বাজার ও কসাই দোকানের মারাত্মক অপরিচ্ছন্নতা। ঢাকা ভেটেরিনারি ও প্রাণিসম্পদ বিশ্ববিদ্যালয়ের (DVASU, ২০২৫) গবেষণায় দেখা গেছে, খামার পর্যায়ে মুরগিতে উল্লেখযোগ্য ব্যাকটেরিয়া না থাকলেও দোকানে কাটা মুরগির মাংসে সালমোনেলা, ক্যাম্পিলোব্যাক্টর ও ই-কলাই জাতীয় ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে ঢাকার নিউমার্কেট ও যাত্রাবাড়ীসহ দেশের বিভিন্ন কসাই দোকানে প্রায় একই ধরনের দৃশ্য দেখা গেছে। একটি সাধারণ প্লাস্টিক ড্রামেই মুরগি কাটা ও সংরক্ষণ করা হয়। গাঢ় লাল রঙের পানি ও রক্তে ভেজা সেই ড্রামে একের পর এক কাটা মুরগি ফেলা হচ্ছে, যেখান থেকে জীবাণু দ্রুত ছড়ায়। একই ছুরি দিয়ে প্রতিটি ক্রেতার মুরগি কাটা হয়, আর সেই ছুরি কখনোই জীবাণুমুক্ত করা হয় না—নেই কোনো হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা গরম পানি ব্যবহারের ব্যবস্থাও।
ঢাকা ভেটেরিনারি কলেজের এক গবেষক জানান, “আমরা খামার থেকে সংগৃহীত মুরগির শরীরে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্ব পাইনি। কিন্তু একই মুরগি যখন বাজারে কাটার পর পরীক্ষাগারে আনা হয়, তখন আমরা বিপজ্জনক ব্যাকটেরিয়া শনাক্ত করি।”
এই সংক্রমণ থেকে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে শিশু, বৃদ্ধ এবং যাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম। পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া, বমি, জ্বরের মতো উপসর্গ দেখা দিলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই ব্যাকটেরিয়া অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে—যা চিকিৎসাকে আরও জটিল করে তুলছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব অনিয়ম থেকেই ডায়রিয়া, পেটের প্রদাহ ও অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। শিশু ও দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার মানুষ এতে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়তে পারেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO, ২০২৪) ও সিডিসি (CDC) সতর্ক করে বলেছে, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের সময় স্বাস্থ্যবিধি না মানলে ব্যাকটেরিয়া দ্রুত ছড়াতে পারে এবং তা মহামারির আকার নিতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বাজার পর্যায়ে নিয়মিত পরিদর্শন, প্রশিক্ষণ ও মান নিয়ন্ত্রণ চালুর আহ্বান জানিয়েছেন। নইলে, এই স্বাস্থ্য ঝুঁকি সামলানো কঠিন হয়ে পড়বে।
এম.কে
০২ মে ২০২৫