8.9 C
London
November 15, 2024
TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

বাংলাদেশে যা হয়েছে তা বিপ্লব, আমাদের সেভাবেই স্বীকার করা উচিতঃ শিবশঙ্কর মেনন

ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সময় দায়িত্ব পালন করা দেশটির সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন বলেছেন, বাংলাদেশে যা ঘটেছে তা শাসক তার জনগণের মধ্যে যোগাযোগ হারিয়ে গেলে কী হয় তার স্পষ্ট উদাহরণ।

শিবশঙ্কর মেনন ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য ওয়্যার-এর একটি শোতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নিয়ে কথা বলেন। মেনন এর আগে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষার্থী আন্দোলন দেশের দ্রুত কিন্তু অসম প্রবৃদ্ধি দ্বারা কিছুটা চালিত হয়েছে। পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান বৈষম্য এবং সুযোগ খোয়ানো নিয়ে তরুণদের মধ্যে বাড়তে থাকা ক্ষোভও আন্দোলনে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে।

মেনন আরও বলেন, বিপ্লব চালানোর জন্য তরুণেরা এবং শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমেছিলেন। এরপর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের নিজস্ব উদ্দেশ্যে বিপ্লবকে ব্যবহার করেছে।

‘এটি মূলত একটি গণ-আন্দোলন ছিল। এটি ছিল রাজপথের একটি বিপ্লব এবং বিদেশি প্রভাব বা কেবল রাজনৈতিক ব্যাখ্যা খোঁজার পরিবর্তে এটিকে আমাদের এভাবেই স্বীকার করা উচিত,’ বলেন তিনি।

বাংলাদেশে এখন একটি উন্মন্থনকাল চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেশটি ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। নতুন এটি প্রজন্ম তৈরি হয়েছ যারা অতীতকে মনে রাখে না এবং সেটি নিয়ে পড়ে নেই। বরং তাদের নিজেদের বিভিন্ন ইস্যু রয়েছে যেগুলো নিয়ে কাজ করা দরকার।’

দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন সত্ত্বেও এ ধরনের আন্দোলন ঘটার কারণ হিসেবে রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ও সামাজিক চুক্তির পুনর্বিবেচনার দিকটির কথা উল্লেখ করেছেন মেনন। ‘বাংলাদেশ এখন একটি বড় তরুণ সমাজ রয়েছে। এসবের প্রেক্ষাপটে এ পরিবর্তনসমূহ বোঝা গুরুত্বপূর্ণ।’

‘সমগ্র দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে গত আট বছরে অনেক সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এসব পরিবর্তনের সবগুলো মসৃণ, স্বেচ্ছায় বা সাংবিধানিকভাবে হয়নি। যেমন, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, পাকিস্তান, মালদ্বীপ ও আফগানিস্তান। অ্যাডাম টুজ বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়া ‘পলিক্রাইসিস’-এ আক্রান্ত। এটা হলো যুগপৎ ঘটতে থাকা অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংকটের এক মিলন।’

সুতরাং, ভারতীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এটি একটি সহজ সময় হবে না বলেও মন্তব্য করেন শিবশঙ্কর মেনন।

দক্ষিণ এশিয়ার সীমানায় ফাঁকফোকর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মিজো থেকে চিন পর্যন্ত ও এর বাইরেও এ অঞ্চলটিতে এ ধরনের সীমানা জটিলতা রয়েছে। তাই, এ সমস্যাকে একত্রিত আঞ্চলিক সমস্যা হিসাবে দেখা অপরিহার্য।

‘এটি ভারত বা অন্য কোনো দেশের পক্ষে এককভাবে সমাধান করা সম্ভব নয়। এসব আন্তঃসংযুক্ত চ্যালেঞ্জসমূহ কার্যকরভাবে মোকাবিলার জন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টা প্রয়োজন,’ বলেন তিনি।

শিবশঙ্কর বলেন, ‘আমার কাছে বাংলাদেশ পাকিস্তান নয়। ভারতে অনেকে বাংলাদেশকে পাকিস্তানের সমান মনে করার ভুলটি করেন। বাংলাদেশ একসময় পূর্ব পাকিস্তান ছিল, কিন্তু ঠিক সে কারণেই ১৯৭১ সাল ঘটেছিল — কারণ দুটি দেশ আলাদা, বাংলাদেশের ৩টি ভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক স্বাতন্ত্র্য রয়েছে।’

‘বাংলাদেশের একটি মূল দিক হলো এর বাঙালি পরিচয়, যা চরমপন্থার বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা হিসেবে কাজ করে। আরেকটি হলো এর প্রাণবন্ত সুশীল সমাজ ও গণ-ভিত্তিক রাজনৈতিক দল। আর তৃতীয়টি হলো দেশটির গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান।

‘তবে গত দশকে শেষের দুটি উপাদান ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে। যার ফলে এসব প্রতিষ্ঠান মানুষের আস্থা হারিয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে কোনো রাজনীতিবিদই খুব বেশি বিশ্বাসযোগ্যতা রাখেন না,’ বলেন তিনি।

মেনন বলেন, এ আস্থাহীনতার ক্ষতি কেবল অর্থনৈতিক অগ্রগতির মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব নয়। ‘মানুষ কেবল সামাজিক ও অর্থনৈতিক সত্তা নয়, রাজনৈতিকও। আমি বিশ্বাস করি, এখানেই উন্মন্থন ঘটেছে,’ বলেন শিবশঙ্কর মেনন।

সূত্রঃ দ্য ওয়্যার

এম.কে
১৫ আগস্ট ২০২৪

আরো পড়ুন

ডেঙ্গু টিকার সফল পরীক্ষা বাংলাদেশে

ভারতের নতুন তিন প্রকল্পে পানি আরো কমবে বাংলাদেশের

যে কারণে শিক্ষার্থীদের চাপা দিয়েছিল প্রাইভেটকার