‘অ্যাসাইলাম’ ছিল না। ওয়াশিংটন পোস্টের রিপোর্ট মতে, শেখ হাসিনার জন্য দিল্লিই একমাত্র বিকল্প। ভারত সরকার তাকে ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট দিয়েছে কিন্তু বাইরে অন্য কোনো দেশে যাওয়া তার জন্য সহজ নয়। বৃটেনের দরজাও বন্ধ।
প্রথম কারণ টেকনিক্যাল, বৃটেনে থেকেই শুধু আশ্রয়ের জন্য আবেদন করা যায়, বাইরে থেকে নয়। তবে তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলো রাজনৈতিক। হাসিনাকে আশ্রয় দিলে ওখানকার বাঙালি কমিউনিটিতে শুরু হবে দারুণ অশান্তি। লেবার পার্টির বাংলাদেশি সমর্থকেরা হয়ে যাবেন দু’-ভাগ। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্টারমার চাইছেন না হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে কোনো গণ্ডগোলের সূত্রপাত করতে। তাছাড়া বাঙালি বংশোদ্ভূত পার্লামেন্ট সদস্যরাও চাইছেন না হাসিনা সেখানে যান। রুপা হক এ নিয়ে প্রকাশ্য বিবৃতি দিয়েছেন। শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকী এখন ওখানকার কেবিনেট মিনিস্টার। তিনি নিজেকে নিয়ে বেশ ঝামেলায় আছেন। সব মিলিয়ে টিউলিপও সম্ভবত খালাকে দূরে রাখতে চাইবেন।
ওয়াশিংটন পোস্টের রিপোর্ট বলছে, বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষোভ সীমাবদ্ধ ছিল শেখ হাসিনার একনায়কত্বের বিরুদ্ধে। ভারত-বিরোধী তৎপরতা আন্দোলনের সময় ছিল না বললেই চলে। যদি হাসিনার পক্ষ নিয়ে ভারত কিছু করতে যায় বা বাংলাদেশের সঙ্গে বৈরী আচরণ শুরু করে, তাহলে বাংলাদেশে ভারত বিরোধিতা আরও তীব্র রূপ নিতে পারে। ড. ইউনূস সরকারপ্রধান হওয়াতে ভারত সরকার কিছুটা হলেও স্বস্তিতে। ভারত ড. ইউনূসকে যথেষ্ট সম্মান করে। নোবেল বিজয়ের পর শেখ হাসিনা সরকারের রোষানলে থাকা অবস্থাতেই তিনি ভারতীয় পার্লামেন্টের যৌথ সভায় বক্তৃতা দেয়ার আমন্ত্রণ পান। বিশ্লেষকরা বলছেন, আপাতত ভারত নিশ্চিন্ত।
তবে বাংলাদেশের ভবিষ্যত নিয়ে স্বভাবতই তাদের উদ্বেগ রয়েছে। থিঙ্কট্যাংক, সাউথ এশিয়া মনিটরের বিশ্লেষক সি. উদয় ভাস্করের মতে, ভারতে আশ্রয়ে থেকে হাসিনা কী করতে চাইবেন? আর ভারতও বা তাকে দিয়ে কী করাতে চাইবে? সেটি এখন বড় প্রশ্ন। তবে এটা অনুমেয় যে, আপাতত ভারত তার মাটিতে বসে হাসিনাকে কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাতে দেবে না।
হাসিনার ভারতে অবস্থান যদি ঢাকা-দিল্লির সম্পর্কে কোন ছায়া ফেলে তা কারও জন্যই সুখকর হবে না। কারণ ঢাকাকে দিল্লির দরকার। আবার ঢাকারও দিল্লিকে দরকার। সেই বিবেচনায় এটা আশা করা হচ্ছে যে, শেখ হাসিনা বিদেশে চুপচাপ অবসর জীবন কাটাবেন। তবে যারা হাসিনাকে চেনেন বা তার প্রতিহিংসার ভাষা সম্পর্কে জানেন, তারা নিশ্চয়ই বলবেন- হাসিনাকে ‘চুপচাপ’ রাখা হয়তো দিল্লির জন্য সহজ হবে না।
সূত্রঃ জনতার চোখে
লেখকঃ মিজানুর রহমান
২৮ অক্টোবর ২০২৪