বাংলাদেশ সরকারের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ কর্মকর্তারা যুক্তরাজ্যের মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক এবং তার পরিবারের সাত সদস্যের ব্যাংক তথ্য চেয়েছেন।
মঙ্গলবার বিএফআইইউ দেশের প্রধান ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়ে তাদের ব্যাংক হিসাবের বিস্তারিত তথ্য প্রদানের নির্দেশ দেয়। এই তালিকায় টিউলিপ সিদ্দিকের খালা বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামও রয়েছে। যিনি গত বছর দেশব্যাপী ব্যাপক বিক্ষোভের পর ক্ষমতা ছেড়ে ভারত পালান।
টিউলিপের মা, বোন এবং ভাইয়ের নামও এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। গার্ডিয়ান টিউলিপ সিদ্দিকের ব্যাপারে যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো অনুরোধটি দেখেছে বলে তথ্যমতে জানা যায়।
বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের উপর তদন্ত শুরু করেছে। তারা জানতে চায় টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে রাশিয়ান তহবিলপ্রাপ্ত পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের চুক্তির মাধ্যমে কয়েক বিলিয়ন পাউন্ড আত্মসাৎ করেছেন কিনা।
২০১৩ সালে টিউলিপকে তার খালা শেখ হাসিনা এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে দেখা যায়। তবে টিউলিপ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি মস্কোর সঙ্গে চুক্তি করতে সহায়তা করেছিলেন বলে জানিয়েছেন।
টিউলিপের একজন মুখপাত্র বলেন, “এই অভিযোগগুলোর পক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। টিউলিপ সম্পূর্ণভাবে এই অভিযোগগুলো প্রত্যাখ্যান করেছেন।”
তবে বাংলাদেশি কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, তারা দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দিয়েছেন এই পরিবারের সাত সদস্য এবং তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসার লেনদেনের তথ্য প্রদান করতে।
টিউলিপ সিদ্দিক সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পর্কে যুক্তরাজ্যের মন্ত্রী পরিষদের নীতিমালা পর্যবেক্ষণকারী সংস্থাকে নিজেই জানান। তার দাবি, এই অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।
টিউলিপের সম্পদের অভিযোগ ও পারিবারিক সংযোগঃ
১. তাকে কিং ক্রস এলাকায় একটি ফ্ল্যাট প্রদান করা হয়, যা তার বাবা-মায়ের অর্থায়নে কেনা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
২. হ্যাম্পস্টেডে একটি বাড়িতে তিনি বসবাস করেছেন, যা তার বোনের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
৩. তিনি এখন ইস্ট ফিঞ্চলিতে £২.১ মিলিয়ন মূল্যের একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় (ডাউনিং স্ট্রিট) তাকে সমর্থন জানিয়েছে এবং বিষয়টি তদন্তের জন্য স্বাধীন পর্যবেক্ষকের প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটঃ
শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসেন। তবে তার শাসনামলে কর্তৃত্ববাদ, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ২০২৩ সালে ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষিতে তিনি দেশ ছাড়েন।
টিউলিপ সিদ্দিক বরাবরই দাবি করেছেন যে তিনি বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যুক্ত নন। তবে আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য শাখার সদস্যরা তার নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছিল বলে প্রমাণ রয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সদস্যরা টিউলিপের নির্বাচনে বিভিন্ন জায়গা হতে চাঁদা সংগ্রহের কাজ করেছেন বলেও জানা যায়।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
০৮ জানুয়ারি ২০২৫