12.8 C
London
November 1, 2024
TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

বাড়িতে গ্যাস নিতে ৮ কিমি পাইপ বসান সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ

সাবেক কৃষিমন্ত্রী ও জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ মৌলভীবাজার-৪ (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুস শহীদের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি করে মৌলভীবাজারে চা-বাগান দখল করে কোটি কোটি টাকার সম্পদ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তিনি নিজ এলাকায় গড়েছেন লুটপাটের বাহিনীও। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বলছেন, আইনি সহায়তার মাধ্যমে তার দখল করা সম্পদ উদ্ধারের কাজ চলছে।

২০১২ সালে বিধি লঙ্ঘন করে আট কিলোমিটার দীর্ঘ একটি গ্যাস পাইপলাইন স্থাপনের ব্যয় বহন করছে জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি।

কারণ, ওই পাইপলাইন দিয়ে জাতীয় সংসদের সরকারি দলের তৎকালীন চিফ হুইপ আব্দুস শহীদের গ্রামের বাড়িতে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়।

কম্পানির বিধি অনুযায়ী, জালালাবাদের গ্যাস-সংযোগ পেতে নতুন পাইপলাইন বসানোর দরকার হলে তার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার বহন করতে হয় গ্রাহককে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সেই বিধি লঙ্ঘন করেছে কম্পানিটি। চিফ হুইপের একটি অনানুষ্ঠানিক চাহিদাপত্রে (ডিও লেটার) করা আবদার মেটাতে গিয়ে কম্পানিকে ওই বিধি লঙ্ঘন ও প্রায় এক কোটি ১৫ লাখ টাকার আর্থিক দায় মেনে নিতে হয়।

চিফ হুইপের গ্রামের বাড়ি কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সিবাজার গ্রামে। জালালাবাদ গ্যাস কম্পানির বিদ্যমান লাইন থেকে ওই গ্রাম পর্যন্ত আট কিলোমিটার নতুন পাইপলাইন স্থাপনে এক কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়। পাইপলাইনটি কমলগঞ্জের দেবীপুর, সিদ্ধেশ্বরপুর, রহিমপুর হয়ে মুন্সিবাজারে চিফ হুইপের বাড়িতে গিয়ে শেষ হয়। কম্পানির করা মাঠ নকশা অনুযায়ী, কমলগঞ্জের আদমপুরে জালালাবাদ গ্যাসের সাবস্টেশন থেকে মুন্সিবাজার গ্রাম পর্যন্ত পাইপলাইন বসিয়ে গ্যাস সংযোগ নেওয়া হয়।

সে সময়ে সরেজমিনে গিয়ে ওসব এলাকার প্রায় তিন কিলোমিটারের মধ্যে খুব বেশি জনবসতি চোখে পড়েনি।

যেসব স্থানে জনবসতি আছে, সেখানে গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই গ্যাসলাইন সম্পর্কে তাদের কিছু জানা ছিল না। অনেকে বলেছেন, সাবেক চিফ হুইপের বাড়িতে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার জন্যই লাইনটি বসানো হয়। তবে সাবেক চিফ হুইপের দেওয়া চাহিদাপত্রে ওই এলাকার মানুষের জন্য গ্যাস-সংযোগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হয়েছে দুটি।

প্রথমত, পাইপলাইনটি শেষ হবে হুইপের বাড়িতে গিয়ে। দ্বিতীয়ত, আট কিলোমিটার পথে গ্যাসের এত গ্রাহক নেই, যাতে কোনো একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান সেখানে টাকা খরচ করে তা তুলে আনতে পারবে।

কম্পানি সূত্র জানায়, তৎকালীন সময়ে চিফ হুইপের চাহিদাপত্র পাওয়ার পর কম্পানির পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল সরেজমিনে পাইপলাইনটির সম্ভাব্যতা যাচাই করে।

তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, আট কিলোমিটার দীর্ঘ ওই পাইপলাইন স্থাপন করা হলে ৫০-৬০ জন আবাসিক গ্রাহক, ৪-৫ জন বাণিজ্যিক গ্রাহক এবং ২-১টি কুটিরশিল্প গ্যাস-সংযোগের আওতায় আসতে পারে। ফলে পাইপলাইনটির মাধ্যমে গ্যাস সংযোগের আওতা বাড়ানো লাভজনক হবে না। তাই এ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যয়ভার গ্রাহকের বহন করার বিধি পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ করা উচিত। কিন্তু ওই প্রতিবেদন উপেক্ষা করে আড়াই মাসের মাথায় আরেকটি কমিটিকে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এই কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, পাইপলাইনটি স্থাপিত হলে প্রায় ২০০ আবাসিক ও ২০ জন বাণিজ্যিক গ্রাহক সংযোগের আওতায় আসবেন। অদূর ভবিষ্যতে গ্রাহকসংখ্যা আরো বাড়বে। ২০১২ সালের ৮ মার্চ অনুষ্ঠিত কম্পানির পরিচালনা পর্ষদের ৩০৯তম সভায় প্রতিবেদনটি গ্রহণ করা হয় এবং প্রতিবছর গ্রাহকসংখ্যা পাঁচ শতাংশ বাড়বে ধরে নিয়ে আর্থিক বিশ্লেষণী প্রতিবেদন তৈরির অনুমোদন দেওয়া হয়।

সে সময়ে বিষয়টি সম্পর্কে জানার জন্য চিফ হুইপ আব্দুস শহীদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তিনি এড়িয়ে গেছেন। তবে তার ছোট ভাই কমলগঞ্জের বিআরডিবির চেয়ারম্যান ইমতিয়াজ আহমদ বলেছিলেন, ‘এলাকায় গ্যাস দিয়ে নিজের বাড়িতে গেলে অসুবিধার তো কিছু নেই।’

কোম্পানির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ ধরনের রাজনৈতিক প্রকল্পের কারণেই কোম্পানিগুলো আর্থিক দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়েছে।

উপজেলা বিএনপির সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী ও সিনিয়র সহসভাপতি জয়নাল চৌধুরী বলেন, ‘দীর্ঘ ১৬ বছর বিএনপির নির্বাহী কমিটি সদস্য হাজী মুজিবুর রহমান চৌধুরীকে ১৩৪টি মামলা দিয়ে সাবেক কৃষিমন্ত্রী হয়রানি ও নির্যাতন করেছেন। তিনি বিগত ১৬ বছর এলাকায় মিটিং ও মিছিল করতে পারেননি। ইফতার মাহফিলে গিয়ে তার বাহিনীরা হামলা ভাঙচুর করেছে। তার গ্রেপ্তারের বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে দলের নেতাকর্মীরা আনন্দ আত্মহারা হয়ে ওঠেন।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) মৌলভীবাজার শাখার সাধারণ সম্পাদক জহর লাল দত্ত সাবেক এ কৃষিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে তার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘শুধু এ সাবেক মন্ত্রী না। পুরো দেশে গত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অবাধে লুটপাট করেছে। নজিরবিহীন এ লুটপাটের বিচার করা এবং দেশের বাইরে পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে।’

বাম ফ্রন্টের অন্যতম নেতা বিশ্বজিৎ বলেন, ‘বিগত অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সাধারণ মানুষ মুখ খুলে স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারেনি। সাবেক এ মন্ত্রী কমলগঞ্জ শ্রীমঙ্গল উপজেলা পর্যায়ে লুটপাটের এক বাহিনী তৈরি করেছিলেন। তদন্ত করলে তা বেরিয়ে আসবে।’

এম.কে
৩১ অক্টোবর ২০২৪

আরো পড়ুন

রেজিস্ট্রেশন ছাড়া যাওয়া যাবে না সেন্টমার্টিন

সিলেটেও শুরু হবে অনলাইনে পেঁয়াজ বিক্রি

অনলাইন ডেস্ক

পাঠ্যপুস্তক সংশোধনে গঠিত কমিটি বাতিল