যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে আরও চাঙা করতে যেন মরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ক্ষমতার আসার আগেই এ নিয়ে চলছে তার জোর পরিকল্পনা।
নিজ দেশের স্বার্থে কোথাও এক চুলও ছাড় দিতে রাজি নন ট্রাম্প। তাই বাণিজ্যযুদ্ধে ‘বন্ধু দেশ’ ভারতকেও ‘রেডলিস্টে’ রেখেছেন আসন্ন এই প্রেসিডেন্ট। দেশটির উচ্চ শুল্কের বিপরীতে ঘোষণা দিয়েছেন পালটা শুল্ক আরোপের। কমিয়ে আনতে চাচ্ছেন বাণিজ্য ঘাটতি।
এতে, চীনের পর ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধের শঙ্কা দেখছেন বিশ্লেষকরা।
বিশ্বের যে কজন নেতার সঙ্গে ট্রাম্পের ‘সুসম্পর্ক’ রয়েছে বলে মনে করা হয়, তার মধ্যে অন্যতম ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে মৌখিক বন্ধুত্বের কোনো ছাপ বাণিজ্য সম্পর্কে রাখছেন না জানুয়ারিতে দায়িত্ব নিতে যাওয়া এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য আমদানিতে ভারতের উচ্চ শুল্ক আরোপের কঠোর সমালোচনা করে, এবার ভারতীয় পণ্য আমদানিতে উচ্চ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিলেন তিনি। বেশকিছু মার্কিন পণ্য আমদানিতে চড়া শুল্ক আরোপ করে রেখেছে ভারত।
চীনের সঙ্গে সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, উচ্চ শুল্কের মাধ্যমেই ভারতকে জবাব দেওয়া হবে। এই তালিকায় আছে ব্রাজিলও।
ট্রাম্প টাওয়ার অধিপতি বলেন, পণ্য আমদানিতে ওই দেশগুলোর সমপরিমাণ শুল্কারোপ করবে যুক্তরাষ্ট্র। মঙ্গলবার নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, যদি কোনো দেশ আমাদের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক চাপায় তাহলে যুক্তরাষ্ট্রও সেই দেশের পণ্যের ওপর চড়া হারে কর চাপাবে। ভারত প্রায় সব ক্ষেত্রেই আমাদের ওপর অধিক কর চাপায়। অথচ এতদিন আমরা ওদের ওপর কোনো কর চাপাইনি।
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘পারস্পরিক’ শব্দটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ কেউ যদি আমাদের ওপর শুল্ক আরোপ করে তবে আমরাও তা করব। ভারত আমাদের নিজেদের নিয়ে কথা বলতে হবে না, যদি ভারত আমাদের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে, আমরা কি তাদের ওপর শূন্য শুল্ক আরোপ করব? আপনি জানেন, তারা একটি সাইকেল পাঠায় এবং আমরা একটি সাইকেল পাঠাই। তারা আমাদের ১০০ বা ২০০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়ে দেয়। ভারত অনেক বেশি শুল্ক আরোপ করে। ব্রাজিলও অনেক বেশি শুল্ক আরোপ করে। তারা যদি আমাদের ওপর শুল্ক আরোপ করতে চায়, সেটা ঠিক আছে, তবে আমরা তাদের ওপরও একই পরিমাণ শুল্ক আরোপ করব।’ এর আগে প্রায় একই ধরনের মন্তব্য করেছিলেন ট্রাম্প মনোনীত বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লাটনিক।
তিনি বলেন, ‘নতুন সরকারের পারস্পরিক সুবিধাদানের নীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। আপনারা আমাদের সঙ্গে যেমন ব্যবহার করবেন, আমাদের থেকেও তেমন ব্যবহারই পাবেন-এটাই আশা করা উচিত।’
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত ভূ-রাজনৈতিক সম্পর্কের উন্নয়ন হলেও বাণিজ্যিক সম্পর্ক সুখকর ছিল না। ২০১৯ সালে ভারতের ইস্পাত ও অ্যালুমুনিয়াম আমদানিতে শুল্ক বাড়িয়ে দেয় যুক্তরাষ্ট্র। প্রতিশোধ হিসাবে, কয়েকটি মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্কারোপ করে ভারত। এর জেরে যুক্তরাষ্ট্রে অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা বা জিএসপি হারায় দেশটি। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদেও একই ধরনের বাণিজ্য টানাপোড়েনের শঙ্কা দেখছেন বিশ্লেষকরা।
সাম্প্রতিক ঘোষণা সেদিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। এতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি, ওষুধ ও টেক্সটাইল শিল্প। ভারতের অন্যতম রপ্তানি বাজার যুক্তরাষ্ট্রে, গেল অর্থবছরে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৭৭ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার। বিপরীতে ভারত আমদানি করেছে ৪২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতিতে আছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাঠ থেকেই বিভিন্ন দেশের ওপর অধিক হারে শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়ে আসছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এতদিন চীন, মেক্সিকো ও কানাডার ওপর চড়া শুল্ক আরোপের কথা বলে এবার সেই তালিকায় যুক্ত করলেন ভারতের নামও। ৫ নভেম্বর রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করেন। তবে তিনি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেননি। ২০ জানুয়ারি ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেবেন।
সূত্রঃ এএফপি, রয়টার্স
এম.কে
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪