আগামী বছরে বাজারে আসতে চলেছে অ্যাপলের পরবর্তী আইফোন সিরিজ। তবে প্রযুক্তিপ্রেমীদের জন্য সুখবরের পাশাপাশি রয়েছে একটি চ্যালেঞ্জিং বার্তা—নতুন মডেলগুলোর দাম আগের চেয়ে উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে পারে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য উত্তেজনা, উৎপাদন স্থানান্তর ও ডিজাইন পরিবর্তনের মতো নানা কারণে এই মূল্যবৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার চলমান বাণিজ্য দ্বন্দ্ব অ্যাপলের উৎপাদন ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছে। বর্তমানে অ্যাপলের পণ্য তৈরির বড় একটি অংশ চীনে সম্পন্ন হলেও উচ্চ শুল্কের কারণে প্রতিষ্ঠানটি বিকল্প খুঁজছে। শোনা যাচ্ছে, এই পরিস্থিতিতে চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধিকে সরাসরি দায়ী না করে অ্যাপল চাইছে দাম বাড়ানোর যৌক্তিকতা তৈরি করতে। এর পেছনে রয়েছে মার্কিন রাজনৈতিক সমালোচনা এড়ানোর কৌশল এবং ভোক্তাদের আস্থা ধরে রাখার চেষ্টা।
যদিও সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও চীন আংশিক শুল্ক হ্রাসের ঘোষণা দিয়েছে, তবুও ৩০ শতাংশ পর্যন্ত আমদানি শুল্ক এখনো বহাল রয়েছে। এর ফলে অ্যাপলের মতো চীননির্ভর কোম্পানিগুলোর ওপর আর্থিক চাপ বাড়ছে।
বিকল্প হিসেবে অ্যাপল ইতিমধ্যে ভারতে উৎপাদন সম্প্রসারণ শুরু করেছে। প্রতিষ্ঠানটির মতে, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে শুধু শুল্কজনিত কারণেই তাদের ৯০০ মিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত খরচ হতে পারে। প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দিকে ঝুঁকছে অ্যাপলের উৎপাদন ঘাঁটি, যা ভবিষ্যতে মার্কিন বাজারে পণ্যের সরবরাহ আরও মসৃণ করতে সাহায্য করবে।
রোজেনব্লাট সিকিউরিটিজের এক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, বর্তমানে আইফোন ১৬-এর মূল মডেলের দাম ৭৯৯ ডলার হলেও, শুল্ক ও অন্যান্য কারণে তা বাড়তে পারে ১,১৪২ ডলার পর্যন্ত—যা প্রায় ৪৩ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি নির্দেশ করে। যদিও অ্যাপল এই দাম বৃদ্ধির বিষয়টি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেনি, তবে রয়টার্সের পক্ষ থেকে মন্তব্য চাওয়া হলেও প্রতিষ্ঠানটি সাড়া দেয়নি।
দাম বাড়ানোর পেছনে নানাবিধ ফিচার সংযোজনের কথাও শোনা যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে অতিস্লিম বডি ডিজাইন, উন্নত এআই ফিচার, দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি ও হাই-এন্ড ক্যামেরা আপগ্রেড। এইসব উন্নয়নের মাধ্যমে অ্যাপল ক্রেতাদের মূল্যবৃদ্ধিকে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে চাইছে।
তবে প্রযুক্তি বাজারের বিশ্লেষকরা সতর্ক করে দিয়েছেন, দাম বাড়ালে অ্যাপলের প্রতিদ্বন্দ্বীরা—যেমন স্যামসাং, গুগল ও অন্যান্য অ্যান্ড্রয়েড নির্মাতারা—এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে মার্কেট শেয়ারে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। ফলে শুধু উৎপাদন কৌশল নয়, রাজনৈতিক চাপ এবং ভোক্তাদের মনস্তত্ত্ব—সব মিলিয়ে অ্যাপলের সামনে রয়েছে একাধিক চ্যালেঞ্জ।
আইফোনের দাম বাড়বে কি না, সেটা সময়ই বলবে। তবে স্পষ্ট হচ্ছে, উৎপাদন কাঠামো ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতির পরিবর্তনের জেরে অ্যাপলের মতো বড় টেক জায়ান্টকেও এখন কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। আগামী আইফোন সিরিজের দাম ও ফিচার কীভাবে বাজারকে প্রভাবিত করবে, সে দিকেই তাকিয়ে রয়েছে প্রযুক্তি বিশ্ব।
সূত্রঃ রয়টার্স / ব্লুমবার্গ
এম.কে
১৮ মে ২০২৫