যুক্তরাজ্যের মন্ত্রীদের সতর্ক করে বলা হয়েছে, আবাসন সংকটের সমাধান না হলে এনএইচএস (ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস) বাঁচানো এবং অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ইংল্যান্ডে লক্ষ লক্ষ মানুষ নিম্নমানের বাসস্থানে বসবাস করছেন, যা তাদের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ।
“সেন্টার ফর এজিং বেটার”-এর একটি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ইংল্যান্ডে ৫০ বছর বা তার বেশি বয়সের ৪.৫ মিলিয়ন মানুষ, যাদের মধ্যে অনেকের আগেই স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে, তারা নিন্মমানের আবাসনে বসবাস করছেন। এসব বাসস্থানে স্যাঁতসেঁতে অবস্থা, পচন বা ক্ষয়সহ নানা সমস্যা রয়েছে, যা তাদের স্বাস্থ্যকে আরও অবনতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এর মধ্যে ৭০ বছর বা তার বেশি বয়সীদের সংখ্যা ১.৭ মিলিয়ন।
কেয়ার স্টারমার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তিনি লেবার পার্টির প্রথম মেয়াদেই এনএইচএস-এর অপেক্ষার সময় কমাবেন এবং যুক্তরাজ্যকে সবচেয়ে দ্রুতবর্ধনশীল প্রধান অর্থনীতিতে পরিণত করবেন।
তবে মন্ত্রীদের সতর্ক করা হয়েছে যে, স্বাস্থ্যসেবা স্থিতিশীল করার এবং দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে যদি দেশের নিম্নমানের আবাসন ব্যবস্থা দ্রুত উন্নত না করা হয়।
“সেন্টার ফর এজিং বেটার”-এর প্রধান নির্বাহী ড. ক্যারল ইস্টন বলেছেন, এই প্রতিবেদনটি দেখিয়েছে কীভাবে আবাসন সংকট, স্বাস্থ্য সমস্যাযুক্ত বয়স্ক ব্যক্তিদের “ঝুঁকির মধ্যে” ফেলছে। তিনি বলেন:
“শীত আসলে এ ধরনের বাসস্থানগুলোতে বসবাসকারীদের জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এটি শুধুমাত্র তাদের জন্য খারাপ নয়, বরং পুরো দেশের জন্যও খারাপ। কারণ, যেসব বয়স্ক কর্মীরা অসুস্থ আবাসনে বাস করছেন, তারা আরও অসুস্থ হয়ে পড়বেন এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখার সুযোগ হারাবেন।
“অন্যদিকে, যেসব বয়স্ক মানুষ গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন, তাদের চিকিৎসার প্রয়োজন হবে, যা শীতে এনএইচএসের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করবে। এগুলো সবই এড়ানো যেত যদি আমরা নিম্নমানের আবাসন সমস্যার জরুরি সমাধান করা হত।”
প্রতিবেদনটি আরও উল্লেখ করে, কালো, এশিয়ান বা সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর ৫০ বছর বা তার বেশি বয়সী মানুষের প্রায় ৪৬% যারা স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন, তারা বাসস্থানে অন্তত একটি সমস্যা নিয়ে বসবাস করছেন। শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে এই হার ৩২%।
কালো, এশিয়ান বা সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর মানুষরা শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বেশি বাসস্থানে পাঁচটি বা তার বেশি সমস্যার সম্মুখীন হন।
সরকারের একজন মুখপাত্র বলেছেন,
“চ্যালেঞ্জিং উত্তরাধিকার সত্ত্বেও, আমাদের ‘পরিবর্তনের পরিকল্পনা’র মাধ্যমে আমরা সব ধরনের আবাসনের মানোন্নয়নে কাজ করছি এবং নিশ্চিত করছি যে বাসস্থানগুলো নিরাপদ ও উষ্ণ হয়।”
এই প্রতিবেদনে সরকারকে আহ্বান জানানো হয়েছে একটি জাতীয় কৌশল প্রণয়নের মাধ্যমে নিম্নমানের বাসস্থান সমস্যার সমাধান করতে এবং আগামী এক দশকে অ-মানসম্মত আবাসনের সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনতে।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
৩০ ডিসেম্বর ২০২৪