শিক্ষার্থী-জনতার এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে অব্যাহতি নিয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। জয় অবশ্য দাবি করেছেন, তার মা দাপ্তরিকভাবে পদত্যাগ করেননি। বর্তমানে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি ভারতে যাওয়ার পর থেকে নিয়মিত সংবাদমাধ্যমে বক্তব্য দিচ্ছেন তার ছেলে জয়।
আজ শনিবার (১০ আগস্ট) বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে সজীব ওয়াজেদ বলেন, ‘আমার মা আনুষ্ঠানিকভাবে কখনোই পদত্যাগ করেননি। তিনি সময় পাননি। তিনি একটি বক্তব্য দেওয়া ও পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু ততক্ষণে বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের দিকে মিছিল নিয়ে আসতে শুরু করে। তাই সময় ছিল না। আমার মা নিজের ব্যাগ পর্যন্ত গোছাতে পারেননি। সংবিধান অনুযায়ী তিনি এখনো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।’
সজীব ওয়াজেদ আরও বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে। যদি তা না হয়, আমরা বিরোধী দল হব। দুটির যে কোনোটিই ভালো।’ তিনি বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের আয়োজন ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে বিএনপির সঙ্গে কাজ করতেও ইচ্ছুক ছিলেন। সামনে এগিয়ে যেতে তিনি বিএনপি সঙ্গে কাজ করতে চান।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হবেন কি না, এমন এক প্রশ্নের জবাবে জয় বলেন, ‘এই মেয়াদের পর আমার মা যেভাবেই হোক অবসর নিতে চেয়েছিলেন। দল যদি আমাকে চায়, হয়তো রাজি হব। বিষয়টি আমি নিশ্চিতভাবে বিবেচনা করব।’
গত বুধবার (৭ আগস্ট) ডয়চে ভেলেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, দেশ ছেড়ে ভারতে যাওয়ার একদিন আগে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। তবে তা তখন ঘোষণা করা হয়নি। ওই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এক দিন আগে৷ আমরা কয়েকজন শুধুমাত্র জানতাম যে তিনি ঘোষণা দেবেন, তিনি পদত্যাগ করছেন এবং সংবিধান অনুযায়ী যাতে একটি ট্রানজিশন অব পাওয়ার হয়, সেটাই ছিল উনার প্ল্যান৷ তবে যখন তারা ওই গণভবনের দিকে মার্চ করা শুরু করল, তখন আমরা ভয়ে বললাম যে আর সময় নেই, তোমার এখনই বেরিয়ে যেতে হবে।’
আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে ডয়চে ভেলেকে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে সজীব ওয়াজেদ বলেন, ‘বর্তমানে আমার রাজনীতিতে আসার কোনো পরিকল্পনা নেই।’
পরদিন বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলে শেখ হাসিনা আবার দেশে ফিরবেন। তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা অবশ্যই বাংলাদেশে ফিরে আসবেন। তবে সক্রিয় রাজনীতিক হিসেবে ফিরবেন কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি।’
এর আগে গত সোমবার (৫ আগস্ট) বিবিসি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জয় বলেছিলেন, তার মা আর রাজনীতিতে ফিরবেন না৷ এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘কঠোর পরিশ্রমের পরও কিছু লোক তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যাওয়ায় তিনি (শেখ হাসিনা) এতটাই হতাশ৷’ ওই দিনের সাক্ষাৎকারে জয় বলেন, গত রোববার (৪ আগস্ট) থেকেই তিনি পদত্যাগের কথা ভাবছিলেন৷
সোমবার বিবিসিকে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে কঠোরভাবে বিক্ষোভ দমনের অভিযোগ অস্বীকার করেন জয়। তিনি বলেন, ‘গতকাল (৪ আগস্ট) ১৩ পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে৷ কাজেই উচ্ছৃঙ্খল জনতা যখন মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করে তখন পুলিশ কী করবে বলে আপনি প্রত্যাশা করেন? ’
শেখ হাসিনার যুক্তরাজ্যে আশ্রয় চাওয়া প্রসঙ্গে বুধবার (৭ আগস্ট) এনডিটিভিকে জয় জানিয়েছিলেন, তার (শেখ হাসিনা) আশ্রয় চাওয়ার খবর সঠিক নয়। তিনি কোথাও আশ্রয়ের জন্য অনুরোধ করেননি। শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বাতিল হয়েছে কি না, সে বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে সজীব ওয়াজেদ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এ ধরনের কোনো আলোচনা হয়নি।’
এক মাসের বেশি সময় ধরে চলা আন্দোলন, বিক্ষোভ, সংঘাত ও সহিংসতার মুখে গত (৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা, সঙ্গে ছিলেন বোন শেখ রেহানা। এত দিন পর্যন্ত তিনি পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা গিয়েছিল।
সূত্রঃ রয়টার্স / ডয়চেভেলে / এনডিটিভি
এম.কে
১০ আগস্ট ২০২৪