বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন। অভিযোগকারীরা বলছেন, তার নির্দেশে পরিচালিত রাষ্ট্রীয় দমন অভিযানে প্রায় ১,৪০০ মানুষ নিহত হয়। আদালতে প্রসিকিউশন দাবি করেছে—যদি শেখ হাসিনা দোষী প্রমাণিত হন, তবে তার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত।
৭৮ বছর বয়সী শেখ হাসিনা, যিনি যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের খালা, অভিযুক্ত হয়েছেন বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়ার জন্য। অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি নিহতদের মরদেহ পুড়িয়ে ফেলতে এবং আহতদের চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থার হিসাবে, তার সরকারের দমন অভিযানে প্রায় ১,৪০০ মানুষ প্রাণ হারায়। সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তানদের জন্য কোটা সংরক্ষণের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলন দ্রুত দেশজুড়ে তার পদত্যাগের দাবিতে রূপ নেয়।
গত বছরের ৫ আগস্ট বিক্ষোভকারীরা ঢাকায় তার সরকারি বাসভবনে হামলা চালানোর আগে শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে দেশত্যাগ করেন। একই দিনে ঢাকার এক ব্যস্ত এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে অন্তত ৫২ জন নিহত হয়—যা বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম রক্তাক্ত ঘটনা।
অভিযোগকারীদের দাবি, শেখ হাসিনার শাসনামলে ক্ষমতা ধরে রাখতে নির্বাচনী কারচুপি, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, নির্যাতন এবং নির্বিচারে গ্রেপ্তারের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘন ব্যাপকভাবে সংঘটিত হয়েছে। এসব অপরাধের দায় তার প্রত্যক্ষ নির্দেশেই বাস্তবায়িত হয় বলে প্রসিকিউশন পক্ষের দাবি।
প্রসিকিউটর ময়নুল করিম আদালতে বলেন, “আমরা ফোন রেকর্ড, ভিডিও, অডিও এবং প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্যসহ এমন সব প্রমাণ পেয়েছি, যা প্রমাণ করে হত্যাকাণ্ডগুলো শেখ হাসিনার সরাসরি আদেশেই ঘটেছে। তিনি মৃত্যুদণ্ডের উপযুক্ত।”
আদালত শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। দু’জনই বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার হয়ে দোষ স্বীকার করেছেন, যদিও এখনো সাজা দেওয়া হয়নি।
প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম আদালতে বলেন, “১,৪০০ মানুষের হত্যার জন্য শেখ হাসিনা ১,৪০০টি মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য। যেহেতু তা বাস্তবসম্মত নয়, তাই আমরা অন্তত একটি মৃত্যুদণ্ডের রায় চাই।” তিনি আরও বলেন, “তার লক্ষ্য ছিল আজীবন ক্ষমতায় থাকা। তিনি এক কঠোর অপরাধীতে পরিণত হয়েছেন, যার মধ্যে কোনো অনুশোচনার চিহ্ন নেই।”
আদালতের নির্দেশে শেখ হাসিনার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে নিলামে বিক্রি করে তার অর্থ ভুক্তভোগীদের মধ্যে বিতরণের প্রস্তাবও উঠেছে। শেখ হাসিনার রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী বলেন, “বিক্ষোভকারীরা সহিংস হলে পুলিশ আত্মরক্ষায় গুলি চালাতে বাধ্য হয়েছিল।”
এর আগে শেখ হাসিনাকে আদালত অবমাননার দায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে এবং তিনি দুর্নীতির অভিযোগেও অভিযুক্ত। এদিকে তার ভাতিজি, এমপি টিউলিপ সিদ্দিকও বাংলাদেশে অনুপস্থিত অবস্থায় বিচারাধীন রয়েছেন, অভিযোগ—তিনি খালার প্রভাব ব্যবহার করে পরিবারের জন্য জমি বরাদ্দে ভূমিকা রেখেছেন, যদিও তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
আগামী ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। সেখানে শেখ হাসিনার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) বর্তমানে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে। আওয়ামী লীগকে ইতোমধ্যে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
সূত্রঃ দ্য টেলিগ্রাফ
এম.কে
১৭ অক্টোবর ২০২৫