TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

বিবিসি অনুসন্ধানে উন্মোচিত: আশ্রয়প্রার্থীদের দিয়ে ব্রিটেনে মিনি-মার্ট চালাচ্ছে কুর্দি অপরাধচক্র

ব্রিটেনে আশ্রয়প্রার্থীদের অবৈধভাবে কাজে লাগিয়ে মিনি-মার্ট পরিচালনার অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে হোম অফিস। বিবিসির অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, কুর্দি অপরাধচক্রের একটি সংগঠিত নেটওয়ার্ক দেশজুড়ে শতাধিক দোকান, নরসুন্দর সেলুন ও কার ওয়াশ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে।

অভিযোগ রয়েছে, এই চক্র আশ্রয়প্রার্থীদের দোকান পরিচালনায় বসিয়ে অবৈধ ভ্যাপ ও সিগারেট বিক্রির মাধ্যমে প্রতি সপ্তাহে হাজার হাজার পাউন্ড আয় করছে। অপরাধীরা ভুয়া কোম্পানি পরিচালক তৈরি করে তাদের নামে কাগজপত্রে ব্যবসা নিবন্ধন করাচ্ছে, কিন্তু প্রকৃত পরিচালনা করছে অবৈধভাবে কর্মরত অভিবাসীরা।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু এক দোকান থেকেই অবৈধ তামাক বিক্রির মাধ্যমে সপ্তাহে ৩,০০০ পাউন্ড পর্যন্ত আয় করা হচ্ছে। আশ্রয়প্রার্থীরা সাধারণত যুক্তরাজ্যে কাজ করার অনুমতি পান না, যদি না দেশে এক বছর থাকার পর বিশেষ অনুমতি মেলে।

এই অনুসন্ধান প্রকাশের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাবানা মাহমুদ জানিয়েছেন, “অবৈধ কাজ ও সংগঠিত অপরাধ আমাদের সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য হুমকি এবং এটি মানুষকে অবৈধভাবে ব্রিটেনে আসার প্রলুব্ধ তৈরি করে। আমরা তা কোনোভাবেই বরদাশত করব না।”

তিনি জানান, অবৈধ কর্মসংস্থানের বিরুদ্ধে অভিযানের সংখ্যা ৫১ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে, আর প্রতিটি অবৈধ কর্মীর জন্য ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ £৬০,০০০ পর্যন্ত জরিমানার বিধান করা হয়েছে। একই সঙ্গে লক্ষ লক্ষ পাউন্ডের অননুমোদিত পণ্য জব্দ করা হয়েছে এবং ৩৫,০০০-এর বেশি অবৈধ অভিবাসীকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

বিবিসির অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, এই অপরাধচক্রের তথাকথিত “ঘোস্ট ডিরেক্টর” বা ভুয়া পরিচালকরা কোম্পানিজ হাউসে ডজন ডজন ব্যবসা নিবন্ধিত করেছেন। এদের একজন বলেন, “দোকানটা আমার নয়, শুধু আমার নামে রেজিস্টার করা।”

এই পরিচালকরা প্রতি মাসে £৩০০ পর্যন্ত ঘুষ নিয়ে অবৈধ অভিবাসীদের নামে দোকান নিবন্ধন করে দিতেন। বিবিসির সাংবাদিকরা ক্রু, হাল ও লিভারপুলে ফেসবুকে বিক্রির জন্য তালিকাভুক্ত তিনটি মিনি-মার্টের বিক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করলে, তারা অবৈধ সিগারেট বিক্রির প্রস্তাব দেন।

চেশায়ারের ক্রু শহরের “টপ স্টোর” নামের এক দোকানের মালিক সুরচি নামের ব্যক্তি সাংবাদিকদের জানান, তিনি £১৮,০০০ নগদে দোকান বিক্রি করতে রাজি। তিনি দাবি করেন, আশ্রয়প্রার্থী হিসেবেও দোকান চালাতে কোনো অনুমতির প্রয়োজন নেই।

সুরচি বলেন, তিনি ২০২২ সালে যুক্তরাজ্যে আসা এক কুর্দি আশ্রয়প্রার্থী, যার আবেদন ইতোমধ্যে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। তিনি আরও জানান, “হাদি” নামের এক ব্যক্তিকে প্রতি মাসে £২৫০ দিয়ে তার নামে দোকানের সরকারি কাগজপত্র রাখেন। সেই হাদির নামে নাকি ৪০ থেকে ৫০টি দোকান রেজিস্টার করা আছে।

এই প্রক্রিয়ায় সুরচি সহজেই অভিবাসন কর্তৃপক্ষের নজর এড়িয়ে অবৈধ পণ্য বিক্রি করতেন। তিনি স্বীকার করেন, কখনো কাউন্সিল ট্যাক্স দেননি এবং গত পাঁচ বছরে একবারই ইমিগ্রেশন এনফোর্সমেন্ট কর্মকর্তারা দোকানে এসেছিলেন।

ট্রেডিং স্ট্যান্ডার্ডস একবার দোকানে অভিযান চালিয়ে তাকে অবৈধ সিগারেট ও ভ্যাপ বিক্রির জন্য মাত্র £২০০ জরিমানা করেছিল। এর বাইরে কোনো বড় ধরনের আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।

বিবিসির এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ কঠোর অবস্থানের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমি যা প্রয়োজন তাই করব ব্রিটেনের সীমান্ত সুরক্ষার জন্য। যারা অবৈধভাবে কাজ করছে, তাদের গ্রেপ্তার, আটক এবং দেশে ফেরত পাঠানো হবে।”

সূত্রঃ দ্য টেলিগ্রাফ / বিবিসি

এম.কে

আরো পড়ুন

বন্ধ হতে পারে গোটা একটি টিউব লাইন!

যুক্তরাজ্যে ভেঙে দেওয়া হলো পার্লামেন্ট

আকস্মিক বন্যার কবলে লন্ডন, বাইরে বের হওয়ার ব্যাপারে সতর্কতা

অনলাইন ডেস্ক