সেডরিক ২০২৪ সালের মার্চে হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছে আশ্রয়ের আবেদন করেছিলেন। তিনি দাবি করেন, তার দেশে তাকে নির্যাতন করা হয়েছে এবং তার বাবা-মা হামলার শিকার হয়েছেন। সাত মাস বিবি স্টকহোমে থাকার পর হোম অফিস তাকে পোর্টসমাউথে স্থানান্তর করে। কিন্তু তার আশ্রয় আবেদন পরে “যথেষ্ট প্রমাণের অভাবে” বাতিল করা হয়।
আবেদন প্রত্যাখ্যাত হলেও সেডরিক হাল ছাড়েননি। তিনি নতুন প্রমাণসহ আপিল করেছেন—যার মধ্যে রয়েছে মৃত্যুর হুমকিসূচক হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা। একটিতে লেখা, “আমরা তোমাকে খুঁজে বের করব, তোমার মরতেই হবে।” অন্যটিতে বলা হয়েছে, “তোমার মেয়ের কষ্টদায়ক মৃত্যু হবে।” সেডরিক বলেন, “আমি প্রকৃত আশ্রয়প্রার্থী। আমি নির্যাতন থেকে পালিয়ে এসেছি। দেশে ফিরলে আমার মৃত্যু নিশ্চিত।”
বর্তমানে তিনি একটি সাত কক্ষবিশিষ্ট HMO-তে বাস করছেন, যেখানে বিভিন্ন দেশের আশ্রয়প্রার্থীরা একসঙ্গে থাকেন। প্রতি সপ্তাহে হোম অফিস থেকে তিনি £৪৯.১৮ ভাতা পান। বিবি স্টকহোমে থাকাকালে সপ্তাহে মাত্র £৮.৮৬ ভাতা দেওয়া হতো, কারণ সেখানে খাবারের ব্যবস্থা ছিল। তবে বার্জের জীবনকে তিনি “কারাগারসদৃশ” বলে বর্ণনা করেছেন—উঁচু দেয়াল ও কাঁটাতারের বেড়ায় ঘেরা, সীমিত চলাফেরার সুযোগ নিয়ে।
সেডরিক এখন কিছুটা মুক্ত বোধ করলেও মানসিকভাবে ভীষণ ক্লান্ত। তিনি সপ্তাহে একদিন থেরাপি নিচ্ছেন এবং অ্যান্টি-ডিপ্রেসেন্ট ওষুধ খাচ্ছেন। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন এই তরুণ বিশ্বাস করেন, তার প্রিয়জনেরা এখনো জীবিত আছেন। “আমি তাদের আনতে পারিনি, এজন্য নিজের প্রতি ঘৃণা জন্মায়,” বলেন তিনি।
ক্যামেরুনের চলমান সংঘাতে ইতোমধ্যে ছয় হাজার মানুষ নিহত হয়েছে এবং লক্ষাধিক বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ইংরেজিভাষী দুটি প্রদেশে স্বাধীনতার দাবিতে মিলিশিয়ারা ফ্রাঙ্কোফোন সরকারের বিরুদ্ধে লড়ছে। সেডরিক সেই অশান্ত অঞ্চল থেকেই পালিয়ে এসেছিলেন।
পোর্টসমাউথে তিনি এখন রেড ক্রসের স্বেচ্ছাসেবক এবং অন্য অভিবাসীদের ইংরেজি শেখান। “হোম সেক্রেটারি শাবা মাহমুদের পরামর্শে আমরা সমাজের সঙ্গে যুক্ত হতে চাই,” বলেন তিনি। “যদি আশ্রয় পাই, আমি আবার শিক্ষকতা শুরু করব।”
স্থানীয়ভাবে অভিবাসনবিরোধী বিক্ষোভের মধ্যেও সেডরিক বলেন, “সব আশ্রয়প্রার্থী একই রকম নয়। আমাদের মধ্যে অনেকেই নির্যাতন থেকে বাঁচতে পালিয়ে এসেছে। যুক্তরাজ্যের মানুষকে সেটা বোঝা দরকার।”
হোম অফিস সেডরিকের মামলার বিষয়ে সরাসরি মন্তব্য না করলেও জানিয়েছে, “আশ্রয় প্রক্রিয়া কঠোর মান যাচাইয়ের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়, যাতে প্রকৃত ঝুঁকিপূর্ণ মানুষদের সুরক্ষা দেওয়া যায়।”
সেডরিকের আদালতের শুনানি আগামী মার্চে নির্ধারিত হয়েছে। তার চোখে এখনো একটাই লক্ষ্য—জীবিত থাকা এবং একদিন নিজের পরিবারকে যুক্তরাজ্যে নিরাপদ আশ্রয় দেওয়া।
সূত্রঃ বিবিসি
এম.কে

