TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

বিয়ে ও তালাকের ডিজিটাল নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করে হাইকোর্টের রায়

বিয়ে ও তালাক নিবন্ধন প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজ করার নির্দেশ দিয়ে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে করা এক রিট আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আসিফ হাসানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) এ রায় ঘোষণা করেন।

 

রিট আবেদনের শুনানিতে রিটকারীর পক্ষে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী ইশরাত হাসান এবং সহকারী আইনজীবী তানজিলা রহমান।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছে, বর্তমান ব্যবস্থায় বিয়ে ও তালাকের তথ্য কার্যকরভাবে যাচাই করা সম্ভব হয় না, যা পারিবারিক স্থিতিশীলতাকে ক্ষুণ্ন করে এবং অনেক ক্ষেত্রে সন্তানের বৈধতা নিয়েও জটিলতা তৈরি হয়।

আদালত আরও উল্লেখ করে, কার্যকর ডিজিটাল ডেটাবেস না থাকায় প্রতারণার সুযোগ বেড়ে যায়, যা নাগরিকের সম্মান ও মৌলিক অধিকার—সংবিধানের ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদে বর্ণিত মানবিক মর্যাদা—লঙ্ঘন করে।

রায়ে বলা হয়, ‘রাইট টু লাইফ শুধু বেঁচে থাকার অধিকার নয়, এটি মানবিক মর্যাদা রক্ষার অধিকারকেও অন্তর্ভুক্ত করে।’

নিবন্ধন সংক্রান্ত আইন থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনও কোনো পূর্ণাঙ্গ, অপারেশনাল ও কার্যকর ডিজিটাল ব্যবস্থা তৈরিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে রায়ে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে হাই কোর্ট।

রায়ের পর অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান বলেন, ‘আদালত নির্দেশনা দেন, বিয়ে ও তালাকের সকল তথ্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে বাধ্যতামূলকভাবে নিবন্ধন করতে হবে, যাতে প্রতিটি তথ্য সরকারি ব্যবস্থায় সুরক্ষিত থাকে, ডেটাবেস সম্পূর্ণ কার্যকর ও ব্যবহারযোগ্য হয় এবং নাগরিকরা, বিশেষ করে নারীরা, সহজেই তথ্য যাচাই করতে ও ডিজিটাল কপি সংগ্রহ করতে পারেন।’

আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে দ্রুততম সময়ে কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান ইশরাত।

তিনি বলেন, ‘আদালতের এই সিদ্ধান্ত দেশের পরিবারের নিরাপত্তা, নারীর সুরক্ষা, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, আইনগত স্বচ্ছতা এবং সবচেয়ে বড় বিষয় বিয়ে ও তালাক সংক্রান্ত প্রতারণা বন্ধে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করবে।’

তিনি মনে করেন, ডিজিটাল নিবন্ধন চালু হলে গোপন বিয়ে, একাধিক বিয়ে লুকানো, পূর্ববর্তী তথ্য গোপন, তালাক প্রমাণের জটিলতা–এসব সমস্যা ব্যাপকভাবে হ্রাস পাবে এবং নাগরিকদের সামাজিক মর্যাদা রক্ষা, সুবিচার প্রতিষ্ঠা ও সমাজে পারস্পরিক বিশ্বাস পুনর্গঠনের পথ আরও ‘সুদৃঢ়’ হবে।

২০২১ সালের ৪ মার্চ চারজন ভুক্তভোগীর পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান এই রিট মামলা করেন। তার আবেদনে বলা হয়, কেন্দ্রীয় কোনো ডিজিটাল ডেটাবেস না থাকায় আগের বিয়ে বা তালাকের সঠিক তথ্য যাচাই করা প্রায় অসম্ভব, এবং এই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই বিয়ে-তালাক সংক্রান্ত প্রতারণা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে চলেছে।

ওই আবেদন শুনে ২০২১ সালের ২২ মার্চ আদালত রুল জারি করে। কেন বিয়ে ও তালাকের তথ্য ডিজিটালি নিবন্ধনের জন্য কেন্দ্রীয় ওয়েবসাইট তৈরি করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় সেই রুলে।

সেই রুল যথাযাথ ঘোষণা করে এবার রায় দিল হাইকোর্ট।

এম.কে

আরো পড়ুন

খুব ভাল্লাগছে তোমরা আইছো আমারে দেখবার লাগিঃ হামজা চৌধুরী

নেত্রকোনার শতবর্ষের ‘বালিশ মিষ্টি’ পেল জিআই স্বীকৃতি

সুপ্রিম কোর্টের বিচারকাজ বন্ধ ঘোষণাঃ প্রধান বিচারপতি