বিশ্বজুড়ে কনসালটেন্সি খাতে শুরু হয়েছে এক অভূতপূর্ব সংকট। অ্যাকাউন্টিংয়ের চার বড় প্রতিষ্ঠান—ডেলয়েট, ইওয়াই, প্রাইসওয়াটারহাউসকুপার্স (PwC) এবং কেপিএমজি (KPMG)—এ বছর গ্র্যাজুয়েট নিয়োগ ৪৪ শতাংশ কমিয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) দ্রুত অগ্রগতির ফলে বিশেষ করে এন্ট্রি-লেভেলের চাকরিগুলো বিলুপ্তির পথে।
ম্যাকিন্সি’র সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে চাকুরির বিজ্ঞপ্তি কমেছে ৪৩ শতাংশ, যার মধ্যে সাদা কলার বা অফিসভিত্তিক চাকরির পতন সবচেয়ে বেশি। আগের মতো উচ্চসংখ্যক গ্র্যাজুয়েট কর্মী নিয়োগের দরকার পড়ছে না, কারণ AI এখন সহজেই রিপোর্ট তৈরি, উপস্থাপনা প্রস্তুতসহ অন্যান্য প্রশাসনিক কাজ করে ফেলছে।
ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের সংস্থা ICAEW-এর ইয়ান পে বলছেন, “আগে পিরামিড গঠনের মতো নিয়োগ হতো—ব্যাপকভাবে গ্র্যাজুয়েটরা নিচের স্তরে যুক্ত হতো। এখন প্রতিষ্ঠানগুলো ‘ডায়মন্ড মডেল’-এ যাচ্ছে, যেখানে মাঝামাঝি স্তরে বেশি গুরুত্ব।”
একই সময়ে এসব প্রতিষ্ঠান ক্রমাগত কাজ অফশোর করছে—ভারত, ফিলিপাইন, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়ায় সস্তায় প্রশাসনিক কাজ সম্পন্ন হচ্ছে। ২০২৩ সালে ডেলয়েট নেদারল্যান্ডসে জনবল ৫% কমিয়ে মালয়েশিয়ায় ৯% বাড়িয়েছে। KPMG ইউকে অফিসে ৭% কমিয়ে পাকিস্তানে ১০% বাড়িয়েছে। EY জার্মানিতে কমিয়ে ইন্দোনেশিয়ায় বাড়িয়েছে এবং PwC অস্ট্রেলিয়ায় ১৮% ছাঁটাই করে মেক্সিকোয় ১২% বৃদ্ধি করেছে।
এই খাতে প্রতিযোগিতাও বাড়ছে। প্রাইভেট ইক্যুইটির (PE) আগ্রহে ছোটো অ্যাকাউন্টিং ফার্মগুলো দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২৪ সালে PE-সমর্থিত অ্যাকাউন্টিং প্রতিষ্ঠানের চুক্তি ইউরোপে প্রায় ২০০-তে পৌঁছেছে, যেখানে ২০২২ সালের আগে তা ছিল মাত্র ২০টি।
McKinsey, BCG ও Bain-এর মতো বড় কনসালটেন্সি ফার্মও একই চাপে আছে। AI ও প্রাইভেট ইক্যুইটির যুগে পুরনো ‘ডিসরাপ্টর’ প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরাই এখন ভুক্তভোগী। নতুন গ্র্যাজুয়েটরা যারা চাকুরিতে ঢুকছেন, তাদের কাজের ধরন আগের থেকে অনেকটাই ভিন্ন হবে।
সূত্রঃ দ্য অবজারভার
এম.কে
২৩ জুলাই ২০২৫