বিশ্বজুড়ে সাম্প্রতিক সময়ে “হালাল হলিডে’র জনপ্রিয়তা বেড়েছে বলে বিশ্ব গণমাধ্যমের এক প্রতিবেদনে জানা যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, “হালাল” বলতে ইসলাম বিধানমতে বৈধ বিষয়কে বোঝায়। আর হালাল হলিডে হচ্ছে এমন সব জায়গায় অবকাশযাপনে যাওয়া যেখানে মুসলিমরা তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও চর্চার সঙ্গে কোনো আপস না করেই সময় কাটাতে পারেন। বিশ্বের অনেক কোম্পানি হালাল পর্যটন নিয়ে বিশেষভাবে কাজ শুরু করেছে। আবার অনেক প্রতিষ্ঠান এটিকে একটি বিকল্প হিসেবে রাখছে।
গ্লোবাল মুসলিম ট্রাভেল ইনডেক্স বা বিশ্ব মুসলিম পর্যটন সূচক অনুযায়ী, ২০২২ সালে হালাল পর্যটনের বাজারমূল্য ছিল ২২০ বিলিয়ন ডলার।
অনেক মুসলিম দেশেই মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সংখ্যা বাড়ছে। পশ্চিম ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকায় দ্বিতীয় বা তৃতীয় প্রজন্মের মুসলিমদের তাদের বাবা-মায়ের তুলনায় আয়ের পরিমাণ বেশি থাকে। ফলে তারা ছুটির দিন বা অবসর কাটানোয় ব্যয় বাড়াচ্ছে।
আর সেজন্যই হালাল পর্যটনের বাজার দিন দিন বাড়ছে বলে মনে করেন যুক্তরাজ্যভিত্তিক মুসলিম ইনফ্লুয়েন্সার জেহরা রোজ।
জেহরা রোজ বলেন, “আমার কাছে সাধারণ ছুটির দিন আর হালাল ছুটির দিনের মধ্যে মূল পার্থক্য হচ্ছে, গোপনীয়তা রক্ষার ব্যবস্থা।”
তিনি জানান, হালাল হলিডেতে মুসলিম নারীদের সুইমিং পুলে নামার ক্ষেত্রে প্রচলিত বিকিনির বদলে বুরকিনি পরেন। বুরকিনি মূলত মুসলিম নারীদের জন্য তৈরি সাঁতারের পোশাক। এই সুইমস্যুটে সারা শরীর ঢেকে রাখে শুধু মুখ এবং পায়ের পাতা দেখা যায়।
ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মুসলমানরা খাবারের ব্যাপারেও সতর্ক থাকেন। কিন্ত বিভিন্ন দেশে ভ্রমণে গিয়ে তাদের খাবার নিয়েও বেশ বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। তাই এসব হালাল হলিডে’তে এমন সব খাবার রাখা হয়, যা ইসলামে বৈধ। এসব স্থানে পর্যটকদের নামাজ আদায়ের জন্য থাকে বিশেষ ব্যবস্থা। হালাল হোটেলগুলোতে জায়নামাজ তারাই সরবরাহ করে। সাধারণ হোটেলে থাকলে আমাকে সাথে করে জায়নামাজ নিয়ে যেতে হয়।
তিনি আরও বলেন, আমি অল্প কাপড় পরিহিত মানুষ হোটেলে দেখতে চাই না। যেসব মানুষেরা আমাদের বিশ্বাস ও সংস্কৃতি অনুসরণ করে, আমি তাদের সাথে আমার সন্তানদের রাখতে চাই। আমরা তাদের সৈকতে নিয়ে যাই না, যেখানে মানুষ নগ্ন হয়ে সূর্যস্নান করে।
অনলাইন উদ্যোক্তা আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন যুক্তরাজ্যের আরেক মুসলিম নারী হেসার।
হেসার মনে করেন, পর্যটন শিল্প এখনও হালাল ছুটির সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারেনি। হেসার চান তার সন্তানরা ছুটির দিন কাটাতে গেলেও যাতে মুসলিম মূল্যবোধ পালন করে এমন মানুষদের দেখে।
এরকম মানুষের সংখ্যা দ্রুতই বাড়ছে। আর এই সুযোগটিই কাজের লাগাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। পশ্চিমা ভোক্তা শ্রেণিকে লক্ষ্য করে গড়ে তোলা বিশেষ ধরণের হোটেলের জন্য সুপরিচিত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দ্বীপ রাষ্ট্র মালদ্বীপ। দেশটিতে এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে হালাল পর্যটক আসতে শুরু করেছে।
মালদ্বীপের পর্যটন মন্ত্রী ড. আব্দুল্লা মাসুম বলেন, “মালদ্বীপ একটি মুসলিম দেশ, আর এ কারণে শুরু থেকেই এখানে মুসলিম বান্ধব পর্যটন ব্যবস্থা রয়েছে। আর এই খাতটি খুবই দ্রুত বাড়ছে।”
তিনি জানান, দেশটিতে এখন “সম্প্রদায় ভিত্তিক” বা স্থানীয় পর্যটকদের জন্য এখন এক চতুর্থাংশ হোটেলের বিছানা আলাদা করে রাখা হয়। আইন অনুযায়ী, সব হোটেলে কর্মীদের নামাজের জন্য একটি মসজিদ থাকা বাধ্যতামূলক। পর্যটকরা এখন এই মসজিদ ব্যবহার করেন।
তিনি বলেন, “অনেক রিসোর্টে এখন কক্ষ বরাদ্দ, কক্ষের নকশা আর খাবার রান্নার ক্ষেত্রে মুসলিম বান্ধব পরিবেশ রয়েছে।”
২০২৩ সালের গ্লোবাল মুসলিম ট্রাভেল ইনডেক্সে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোই প্রথম দিকে রয়েছে যাতে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া শীর্ষস্থান দখল করে রেখেছে। এই তালিকায় মাত্র দু’টি অমুসলিম দেশ রয়েছে। এরমধ্যে সিঙ্গাপুর ১১তম এবং যুক্তরাজ্য ২০তম স্থানে রয়েছে।
এদিকে, লন্ডনেও শুরু হয়েছে হালাল হলিডে। সেখানে ১৮৯৯ সালে স্থাপিত লন্ডনের পাঁচ তারকা মানের ল্যান্ডমার্ক হোটেলে এখন হালাল মাংস পরিবেশন করা হয়। হোটেলের কর্মীদের মধ্যপ্রাচ্যের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম।
হোটেলের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিভাগের পরিচালক ম্যাগডি রুস্তম বলেন, “আমাদের অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়ের পাশাপাশি অ্যালকোহলমুক্ত পানীয়ও রয়েছে। বারে আপনি অ্যালকোহলমুক্ত ককটেল পানীয় পাবেন যা খুবই জনপ্রিয়। আমাদের দু’টি প্রবেশপথ রয়েছে। হোটেলের উত্তর দিকের প্রবেশপথটি সংরক্ষিত।”
উল্লেখ্য যে, ল্যান্ডমার্ক হোটেলের মতো লন্ডনের অনেক হোটেল মুসলিম পর্যটকদের আকর্ষণ করতে অনেক পরিবর্তন করছে।
এম.কে
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩