TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

ব্রিটিশ কারাগারে বোমা তৈরির পাঠঃ উগ্রপন্থী-অপরাধীদের জোটে জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে

যুক্তরাজ্যের সর্বোচ্চ নিরাপত্তাবিশিষ্ট কারাগারগুলোতে বন্দিদের বোমা তৈরির কৌশল শিখাচ্ছে সন্ত্রাসীরা। একটি গবেষণায় প্রকাশ, এদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সংগঠিত অপরাধচক্রের সদস্যরা আবার উগ্রবাদীদের শেখাচ্ছে কীভাবে অর্থ পাচার, ডার্ক ওয়েব ব্যবহার এবং অস্ত্র সংগ্রহ করতে হয়। এই জ্ঞান বিনিময় একটি ভয়ংকর জোট তৈরি করছে যা দেশের জাতীয় নিরাপত্তার ওপর সরাসরি হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ছায়া বিচারসচিব রবার্ট জেনরিক বিষয়টিকে নেতৃত্বের চরম ব্যর্থতা এবং রাষ্ট্রের দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার নজির হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তার মতে, উগ্রবাদী ও অপরাধীদের এই অদৃশ্য মিত্রতা “সবার চোখের সামনেই গড়ে উঠছে, অথচ কেউ কিছু করছে না।” তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যেন দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

গবেষক ড. হ্যানা বেনেটের পরিচালিত এই গবেষণাটি তৈরি হয়েছে বন্দি, কারারক্ষী, সাবেক কারা কর্মকর্তা ও সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষজ্ঞদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে। গবেষণায় উঠে এসেছে, আগে যেখানে সন্ত্রাসীদের প্রতি অন্য বন্দিদের ঘৃণা বা দূরত্ব থাকত, এখন সেখানে সহযোগিতা এবং পারস্পরিক সুবিধার সম্পর্ক গড়ে উঠছে।

একজন বন্দির ভাষ্য অনুযায়ী, কারাগারে এখন কেউ চাইলে যেকোনো গোষ্ঠীর সঙ্গে মিশতে পারছে। অনেকেই খাবার, ভ্যাপ বা নিরাপত্তার বিনিময়ে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলছে। আরেকজন বন্দি স্বীকার করেছেন, “এখান থেকে অনেকে আরও বেশি উগ্রবাদী, সংগঠিত ও সংযুক্ত হয়ে বের হচ্ছে – অথচ কর্তৃপক্ষ কিছু বুঝতেই পারছে না।”

গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, যেসব কারাগারে সহিংসতা, দুর্নীতি ও নজরদারির অভাব রয়েছে, সেসব স্থানে উগ্রবাদ ও অপরাধীদের মধ্যকার এই জোট আরও সহজে গড়ে উঠছে। অনিয়মিত রুটিন, দুর্বল নেতৃত্ব এবং একত্রে রাখার ভুল সিদ্ধান্তগুলো পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

প্রাক্তন জেল সুপার এবং হোম অফিসের সাবেক কর্মকর্তা অধ্যাপক ইয়ান অ্যাচেসন বলেছেন, কিছু ‘ব্ল্যাক হোল’ কারাগারে রাষ্ট্র কার্যত বন্দিদের হাতে কর্তৃত্ব ছেড়ে দিয়েছে। তার ভাষায়, “এখানে এমন বন্দিরা একই সঙ্গে আছে যারা প্রাণঘাতী হামলা চালাতে পারে এবং যারা অস্ত্র সংগ্রহ বা পালিয়ে যেতে সহায়তা করতে পারে – এই যুগলবন্দি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি।”

এই তথ্য প্রকাশের পর যুক্তরাজ্যের ন্যায় মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো মন্তব্য দেয়নি। এদিকে জানা গেছে, বর্তমানে প্রায় ৪২৫ জন আইএস-সংশ্লিষ্ট ‘যোদ্ধা’ যুক্তরাজ্যে মুক্তভাবে চলাফেরা করছে, যাদের বিরুদ্ধে এখনো কোনো সফল বিচার হয়নি। এর ফলে, সন্ত্রাসবাদের ভয়াবহ ছায়া শুধু কারাগারের ভেতরেই নয়, বরং বাইরেও দ্রুত বিস্তার লাভ করছে।

এই পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা দ্রুত কারাগার সংস্কার, পৃথকীকরণ এবং নজরদারি বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে বন্দি বিনিময়ের এই বিপজ্জনক চক্র থামানো যায়। অন্যথায়, ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ নিরাপত্তা সংকটের মুখোমুখি হতে পারে যুক্তরাজ্য।

সূত্রঃ দ্য এক্সপ্রেস

এম.কে
০৭ জুলাই ২০২৫

আরো পড়ুন

পড়াশোনার নামে বিদেশি শিক্ষার্থীরা কাজ করতে আসে—দাবি ব্রিটিশ মন্ত্রীর

অনিরাপদ রুয়ান্ডায় ব্রিটেনের অভিবাসী স্থানান্তর চুক্তি বেআইনি বলেছেন আদালতে আইনজীবীরা

যুক্তরাজ্যে করোনার ৫ম টিকার অনুমোদন