TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

ব্রিটিশ হতে হলে শেতাঙ্গ হতে হবে –জনগণের মধ্যে এই দৃষ্টিভঙ্গি বাড়ছেঃ রিপোর্ট

ব্রিটেনে ‘ব্রিটিশ হওয়া’ কী—এই প্রশ্নে জনমতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। একটি নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে, ‘ব্রিটিশ পরিচয় জন্মসূত্রে অর্জিত’—এমন বিশ্বাস গত দুই বছরে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। গবেষকরা বলছেন, এটি ব্রিটেনে জাতিগত জাতীয়তাবাদী চিন্তার বিস্তারের একটি উদ্বেগজনক ইঙ্গিত।

ইনস্টিটিউট ফর পাবলিক পলিসি রিসার্চ (IPPR)–এর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এখনো সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মনে করেন ব্রিটিশ পরিচয় গড়ে ওঠে যৌথ মূল্যবোধ, নাগরিক দায়িত্ব ও সামাজিক চুক্তির মাধ্যমে। তবে ক্রমবর্ধমান একটি অংশ মনে করছে, জাতিগত পরিচয়, জন্মস্থান ও বংশপরিচয়ই প্রকৃত ব্রিটিশত্ব নির্ধারণ করে।

 

থিঙ্কট্যাঙ্কটির জন্য এ মাসে ইউগভ পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, ৩৬ শতাংশ মানুষ মনে করেন সত্যিকারের ব্রিটিশ হতে হলে যুক্তরাজ্যে জন্ম নেওয়া জরুরি। ২০২৩ সালে এই হার ছিল মাত্র ১৯ শতাংশ, যা দুই বছরের ব্যবধানে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।

জরিপে সবচেয়ে কট্টর অবস্থান দেখা গেছে নাইজেল ফ্যারাজের দল রিফর্ম ইউকের সমর্থকদের মধ্যে। তাদের ৭১ শতাংশ মনে করেন, ব্রিটিশ বংশপরিচয় না থাকলে কেউ প্রকৃত অর্থে ব্রিটিশ হতে পারেন না। একই সঙ্গে ৫৯ শতাংশ সমর্থক বিশ্বাস করেন, ব্রিটেন একটি নাগরিকভিত্তিক রাষ্ট্র নয়, বরং একটি জাতিগত সম্প্রদায়।

গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, রিফর্ম ইউকের ভোটারদের একটি অংশ ব্রিটেনের জাতিগত বৈচিত্র্যকে নেতিবাচকভাবে দেখছেন। ৩৭ শতাংশ ভোটার মনে করেন, ভবিষ্যতে সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর মানুষ কমে গেলে তারা দেশ নিয়ে বেশি গর্ববোধ করবেন। এমনকি ১০ শতাংশ বলেছেন, একজন ভালো ব্রিটিশ নাগরিক হতে সাদা ত্বক অর্থাৎ শেতাঙ্গ হওয়া গুরুত্বপূর্ণ—যা গবেষকদের মতে চরম ডানপন্থী বয়ানের প্রতিফলন।

IPPR বলছে, এই তথ্যগুলো প্রমাণ করে যে কট্টর ডানপন্থী রাজনীতি ও অনলাইন প্রচারণা জনমনে জাতীয় পরিচয়ের ধারণা পুনর্গঠনে আংশিকভাবে সফল হচ্ছে। তবে সামগ্রিকভাবে ব্রিটিশ জনগণের বড় অংশ এখনো অন্তর্ভুক্তিমূলক ও প্রগতিশীল ব্রিটিশত্বে বিশ্বাস করে, যেখানে জাতিগত পরিচয়ের চেয়ে মূল্যবোধ বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

IPPR–এর সহযোগী পরিচালক পার্থ প্যাটেল বলেন, ডানপন্থী রাজনীতিক ও কর্মীরা জাতীয় পরিচয়কে প্রাচীন অধিকার ও ইতিহাসের সঙ্গে বেঁধে দিতে চাইছেন। তার মতে, উদ্বেগের বিষয় হলো—এই প্রচেষ্টা কিছু মানুষের চিন্তাভাবনায় বাস্তব প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে, যা সামাজিক সংহতির জন্য হুমকি।

গবেষণায় দেখা যায়, রিফর্ম ইউক ছাড়া কনজারভেটিভসহ অন্যান্য বড় রাজনৈতিক দলের সমর্থকদের অধিকাংশই ব্রিটেনকে একটি নাগরিকভিত্তিক রাষ্ট্র হিসেবে দেখেন, যা যৌথ মূল্যবোধের ওপর দাঁড়িয়ে, জাতিগত বংশপরিচয়ের ওপর নয়।

‘একজন ভালো ব্রিটিশ নাগরিক’ বলতে কী বোঝায়—এই প্রশ্নে উত্তরদাতারা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন আইন মেনে চলা, সন্তানদের মানবিক ও সদয় করে গড়ে তোলা এবং পরিশ্রমকে। মাত্র ৩ শতাংশ মানুষ বলেছেন, ভালো নাগরিক হতে সাদা ত্বক জরুরি—যা দেখায় যে চরম মতামত এখনো সংখ্যালঘু অবস্থানে রয়েছে।

ভবিষ্যতে কোন বিষয়গুলো ব্রিটেন নিয়ে গর্বের কারণ হবে—এ প্রশ্নে জনগণ সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন কার্যকর এনএইচএস, জীবনযাত্রার মান ও আবাসন সংকট সমাধানকে। অভিবাসন কমানো বা জাতিগত বৈচিত্র্য হ্রাস—এই বিষয়গুলো তুলনামূলকভাবে কম অগ্রাধিকার পেয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে IPPR প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারকে আহ্বান জানিয়েছে, লেবার পার্টি কনফারেন্সে দেওয়া তার বক্তব্যের ভিত্তিতে একটি সুস্পষ্ট ও অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় পুনর্গঠন কর্মসূচি গ্রহণ করতে। ওই ভাষণে স্টারমার কট্টর ডানপন্থার বিরুদ্ধে ‘দেশের আত্মার জন্য লড়াই’-এর কথা বলেন এবং জাতিগত বিভাজনের রাজনীতিকে জাতীয় পুনর্গঠনের শত্রু হিসেবে আখ্যা দেন।
সাম্প্রতিক সময়ে শীর্ষ রাজনীতিকরা সতর্ক করে বলছেন, অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া জাতিগত জাতীয়তাবাদী ধারণা সমাজে বিভাজন বাড়াচ্ছে। একই সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী শাবানা মাহমুদ ও কনজারভেটিভ নেতা কেমি ব্যাডেনকের বক্তব্যে উঠে এসেছে—ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে এই প্রবণতার বাস্তব প্রভাব।

বিশ্লেষকদের মতে, ব্রিটিশ পরিচয় নিয়ে এই মতাদর্শিক দ্বন্দ্ব আগামী দিনে রাজনীতি ও সামাজিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে। প্রশ্ন হলো—ব্রিটেন কি যৌথ মূল্যবোধের ভিত্তিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র হিসেবে নিজেকে পুনর্গঠন করতে পারবে, নাকি পরিচয়ের রাজনীতি আরও গভীর বিভাজনের দিকে দেশকে ঠেলে দেবে।

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে

আরো পড়ুন

যুক্তরাজ্যে ইরানি পরিচয় মিথ্যা, আসলে আফগানঃ ১১ বছর পর আশ্রয় মামলায় নতুন মোড়

মহামারিতে আবারো ঋষি সুনাকের ১.৪ মিলিয়ন পাউন্ড অনুদান

নিউজ ডেস্ক

যুক্তরাজ্য নিষেধাজ্ঞা দিলো ইসরায়েলি বসতি আন্দোলনের ‘গডমাদার’কে