যুক্তরাজ্যে আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য নিবেদিত হোটেলগুলোতে নারী আশ্রয়প্রার্থীরা অমানবিক আচরণ ও যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে ব্রিটেন ভিত্তিক সংগঠন উইমেন ফর রিফিউজি উইমেন (ডব্লিউআরডব্লিউ)।
আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য আবাসন ঘাটতি বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ অনেক নারী আশ্রয়প্রার্থীকেও হোটেলে রাখছে৷ অধিকার সংগঠন উইমেন ফর রিফিউজি উইমেন সরকারকে তা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে।
সংস্থাটির দাবি, হোটেলগুলোতে নারী আশ্রয়প্রার্থীরা কর্মীদের মাধ্যমে যৌন হয়রানি ও বিভিন্ন অমানবিক আচরণের শিকার হয়ে থাকেন৷
দাতব্য সংস্থাটির একটি দল সাত নারী আশ্রয়প্রার্থীর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে৷ প্রতিবেদনটির শিরোনাম, “জবরদস্তি এবং নিয়ন্ত্রণ: হোটেলগুলোতে আশ্রয়প্রার্থী নারীদের প্রতি আচরণ৷’’
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নারীর প্রতি সহিংসতার কারণে অনেক আশ্রয়প্রার্থী নিজ দেশ থেকে পালিয়ে এসেছেন৷ ব্রিটেনে তাদের যে হোটেলে রাখা হয়েছে সেখানেও তাদের সঙ্গে জবরদস্তিমূলক আচরণ ও তাদের নিয়ন্ত্রণ করা হয়, যা দুঃখজনক৷
প্রতিবেদনে যেসব বিষয়গুলো উঠে এসেছে সেগুলো হলো :
নারীদের উপর নিয়মিত নজরদারি এবং পর্যবেক্ষণ
হোটেল কর্মীদের অবমাননাকর আচরণ৷ যেমন: যৌন হয়রানি, কক্ষে অনুপ্রবেশ এবং কেন্দ্র থেকে বের হতে বাধা প্রদান, শাস্তিমূলক পদক্ষেপের হুমকি৷
সহায়তা কার্যক্রম থেকে বিচ্ছিন্ন রাখা।
প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়েছে, হোটেলগুলোর জীবনযাত্রার চাপ নারীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর ‘অত্যন্ত ক্ষতিকর’ প্রভাব ফেলেছে। এ নিয়ে একটি জরিপ চালিয়েছে তারা৷ জরিপে অংশ নেওয়াদের ৯১ শতাংশ বিষণ্ণতায় ভোগেন এবং ৭৫ শতাংশ হতাশাগ্রস্ত৷
প্রতিবেদনে সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা আশ্রয়াপ্রার্থী নারীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য লেবার পার্টির নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে৷ বলা হয়েছে, “হোটেলগুলোতে নারীদের প্রতি আচরণকে পাখির খাঁচার সাথে তুলনা করা যেতে পারে৷ খাঁচার পাখি যেমন যেখানে ইচ্ছা সেখানে উড়তে পারে না তেমনভাবে এখানেও নারীরা নিজের ইচ্ছামত জীবনযাপন থেকে বঞ্চিত হন৷’’
এসব বিষয় নারীদের আত্মসম্মান এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে৷ উইমেন ফর রিফিউজি উইমেন (ডব্লিউআরডব্লিউ) নেটওয়ার্কের সাতজন সদস্য এই প্রতিবেদনটি তৈরী করেছেন৷ তাদের মধ্যে তিনজনের হোটেলে থাকার অভিজ্ঞতা রয়েছে৷ তারা ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে জুলাইয়ের মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে বসবাসরত নারীদের অভিজ্ঞতার উপর একটি অনলাইন সমীক্ষা চালিয়ে এসব তথ্য সংগ্রহ করেন৷
মোট ৬২ জন নারী শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থী জরিপে অংশগ্রহণ করেন। এর বাইরে তারা জুলাই মাসে ১০ জনের সরাসরি সাক্ষাৎকার নিয়েছেন।
ডব্লিউআরডব্লিউ এর প্রতিবেদন সম্পর্কে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চায় ইনফোমাইগ্রেন্টস৷ মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, “এগুলো গুরুতর অভিযোগ এবং আমরা জরুরি ভিত্তিতে এ ব্যাপারে তদন্ত করবো৷ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আশ্রয় ব্যবস্থায় কর্মীদের মাধ্যমে অন্যায় বা অপরাধের অভিযোগকে খুব গুরুত্ব সহকারে নেয়৷’’
মুখপাত্র আরও যোগ করেন, “আশ্রয়প্রার্থীদের ‘আটক’ রাখা হয় না৷ তারা তাদের বাসস্থান ছেড়ে বাইরে যেতে পারেন৷ তাদের উপর কোনো ধরনের কারফিউ আরোপ করা হয় না৷ আমাদের আবাসন ব্যবস্থায় কর্মরতদের আচরণের সব ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত হয়ে থাকে।”
সূত্রঃ ইনফোমাইগ্রেন্টস
এম.কে
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪