ব্রিটেনের আকাশপথে ইতিহাস রচিত হলো। প্রথমবারের মতো দেশটিতে সফলভাবে উড়ল একটি বিদ্যুচ্চালিত উড়ুক্কু ট্যাক্সি—যা ভবিষ্যতে শহরের মধ্যকার যোগাযোগে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
‘ভিএক্স৪’ নামে পরিচিত এই উড়ুক্কু যানটি তৈরি করেছে ব্রিস্টল-ভিত্তিক স্টার্টআপ ‘ভার্টিকাল অ্যারোস্পেস’। এক পাইলট ও চার যাত্রী বহনে সক্ষম যানটি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৪০ কিলোমিটার গতিতে ১৬০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সক্ষম। কটসওল্ডস এলাকায় উড়ানে গিয়ে এই প্রোটোটাইপটি সফলভাবে পরীক্ষার বাইরে সাধারণ পরিবেশে উড়ার ইতিহাস গড়েছে।
প্রধান পরীক্ষাকারী পাইলট সায়মন ডেভিস এই অভিজ্ঞতাকে ‘ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় মাইলফলক’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেন, “ভিএক্স৪ শুধু নিরাপদই নয়, বরং চালনাতেও আনন্দদায়ক। এর প্রতিক্রিয়া দ্রুত, শব্দ শান্তিপূর্ণ এবং ব্যবহার সহজ। এটি উড়াতে পারা আমাদের দলের কঠোর পরিশ্রমের স্বীকৃতি।”
যুক্তরাজ্য সরকার ২০২৮ সালের মধ্যে বাণিজ্যিক উড়ুক্কু ট্যাক্সি চালুর লক্ষ্যে একাধিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সম্প্রতি এ খাতে ২০ মিলিয়ন পাউন্ডের সরকারি সহায়তা ঘোষণা করা হয়েছে, যার মাধ্যমে ড্রোন ও এয়ার ট্যাক্সি সেবাকে বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি পরিবহন বিভাগ ও সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটি (CAA) যৌথভাবে গঠন করেছে একটি নতুন সংস্থা—‘রেগুলেটরি ইনোভেশন অফিস’, যার কাজ হবে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের পথ থেকে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করা।
এই দিকপাল পদক্ষেপের পেছনে রয়েছে পরিবেশবান্ধব ও দ্রুতগতির পরিবহন গড়ে তোলার উচ্চাকাঙ্ক্ষা। শিল্প বিশেষজ্ঞদের মতে, উড়ুক্কু ট্যাক্সি ব্রিটেনজুড়ে যাতায়াত ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনবে। যেমন ব্রাইটন থেকে হিথ্রো বিমানবন্দর পর্যন্ত যাত্রা মাত্র ২০ মিনিটে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি ‘জোবি অ্যাভিয়েশন’ ব্রিটিশ এয়ারলাইন ‘ভার্জিন আটলান্টিক’-এর সঙ্গে অংশীদারিত্ব করেছে। তাদের লক্ষ্য, হিথ্রো ও ম্যানচেস্টার বিমানবন্দরে কেন্দ্র স্থাপন করে সারা যুক্তরাজ্যে একটি ইকো-ফ্রেন্ডলি, সংক্ষিপ্ত দূরত্বের ফ্লাইট নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা। জোবির বিদ্যুচ্চালিত উড়ুক্কু ট্যাক্সি সর্বোচ্চ ৩২০ কিলোমিটার গতিতে উড়তে সক্ষম।
এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে লেবার দলের এমপি অ্যালিস ম্যাকডোনাল্ড সম্প্রতি পূর্ব ইংল্যান্ডে বৈদ্যুতিক বিমান প্রযুক্তির কেন্দ্র গঠনের আহ্বান জানান। তিনি পরিবহন মন্ত্রী মাইক কেনকে ‘বিদ্যুচ্চালিত বিমানে উড়ার অভিজ্ঞতা নেওয়ার’ আমন্ত্রণ জানান। উত্তরে মন্ত্রী কেন বলেন, “সরকার ভবিষ্যতের ফ্লাইট প্রযুক্তিকে গ্রহণ করে দেশের অর্থনীতি ও জনসাধারণের জন্য উপকারী করে তুলতে চায়।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, পরিবেশবান্ধব ও দ্রুত যাতায়াতের যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য, যেখানে আকাশই হতে চলেছে শহরের ভেতরে ভ্রমণের নতুন পথ।
এম.কে
৩০ মে ২০২৫