ব্রিটেনের জনগণকে সতর্ক করে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন , সৌন্দর্য স্যালন বা ভুয়া ফার্মেসি ওয়েবসাইট থেকে বেআইনি ওজন কমানোর ওষুধ কেনা বিপজ্জনক হতে পারে।
যুক্তরাজ্যের শীর্ষ চিকিৎসক অধ্যাপক কামিলা হথর্ন সতর্ক করেছেন, এনএইচএস পরিষেবাগুলোর দীর্ঘ অপেক্ষার কারণে মানুষ ওজন কমানোর জন্য অনলাইনে সম্ভবত ঝুঁকিপূর্ণ ইনজেকশন কিনতে বাধ্য হচ্ছে।
“রয়্যাল কলেজ অব জিপি”-এর চেয়ার অধ্যাপক হথর্ন বলেন, অনিয়ন্ত্রিত বিক্রেতাদের কাছ থেকে ওষুধ কেনা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। পাশাপাশি, এই ওষুধের সঙ্গে যে সহায়ক চিকিৎসা ও পরামর্শ দেওয়া হয়, তা থেকেও তারা বঞ্চিত হতে পারেন।
তিনি আরও উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে, তুলনামূলকভাবে সস্তা ইনজেকশন পেনগুলোর বিকল্প ব্যবহারও বিপজ্জনক হতে পারে, কারণ এসব ক্ষেত্রে ওষুধের একটি অংশ বাড়িতে প্রস্তুত করতে হয়।
“মেডিসিনস অ্যান্ড হেলথকেয়ার প্রোডাক্টস রেগুলেটরি এজেন্সি” (MHRA) সতর্ক করেছে যে, সৌন্দর্য স্যালন, ভুয়া ফার্মেসি ওয়েবসাইট বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে বেআইনি ওজন কমানোর ওষুধ কেনা বিপজ্জনক। এসব পণ্যে বিষাক্ত উপাদান এবং ক্ষতিকর বস্তু থাকতে পারে।
MHRA-এর অপরাধ তদন্ত বিভাগের উপ-পরিচালক অ্যান্ডি মর্লিং বলেন, “এই সময়ে, যখন অনেকেই ওজন কমানোর কথা ভাবছেন, কিছু লোক দ্রুত সমাধান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ওষুধ বিক্রি করছেন, যা স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারের অনুমোদন ছাড়াই বিপজ্জনক হতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “অপরাধীরা তাদের ওয়েবসাইটকে বাস্তব ও বিশ্বাসযোগ্য দেখানোর জন্য অনেক কৌশল অবলম্বন করে। তবে এগুলো শুধুমাত্র চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনের ভিত্তিতেই নিরাপদভাবে ব্যবহার করা যায়।”
অধিক অপেক্ষার সময় রোগীদের জন্য সমস্যা
অধ্যাপক হথর্ন আরও উল্লেখ করেন, ব্রিটেনে জনসংখ্যা ক্রমাগত “স্থূল থেকে আরও স্থূল হচ্ছে”, যার ফলে দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা বাড়ছে।
মিডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “অনেক মানুষ ব্যক্তিগতভাবে ওজন কমানোর ওষুধ কিনছেন, যা অনেক ক্ষেত্রেই পুরোপুরি নিয়ন্ত্রিত নয়।
তিনি যোগ করেন, দীর্ঘ সময় ধরে ওজন কমানোর জন্য সহায়তা পাওয়ার অপেক্ষার কারণে এই চাহিদা বাড়ছে। তিনি সরকারকে এসব পরিষেবার যথাযথ তহবিল প্রদানের আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “যদি আপনার ওজন কমানোর জন্য দুই বছরের অপেক্ষার সময় নির্ধারিত হয়, এবং আপনি জানেন যে এমন একটি উপায় রয়েছে যা কাজ করে, তবে আপনি হয়তো নিজের উদ্যোগে সমাধান খোঁজার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।”
ওজন কমানোর ওষুধের ঝুঁকি এবং সীমাবদ্ধতা
সম্প্রতি “ওবেসিটি হেলথ অ্যালায়েন্স” (OHA)-এর একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, কিছু রোগীকে বিশেষায়িত সহায়তা পেতে পাঁচ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে। আবার, কিছু পরিষেবার সক্ষমতা এতটাই সীমিত যে, তারা অপেক্ষমান তালিকা বন্ধ করে দিয়েছে।
ওবেসিটি হেলথ অ্যালায়েন্স-এর পরিচালক ক্যাথারিন জেনার বলেছেন, “এই ওষুধগুলো গুরুতর, দীর্ঘস্থায়ী স্থূলতায় ভোগা মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তনের আশা দেয়। তবে এগুলো কেবল তখনই নিরাপদ এবং কার্যকর যখন একজন বৈধ চিকিৎসকের নির্দেশনায় ব্যবহৃত হয়।”
এনএইচএস পরিকল্পনা অনুযায়ী, ওজন কমানোর ইনজেকশন মাউনজারো ১২ বছরের মধ্যে পুরোপুরি চালু হবে। প্রথম তিন বছরে আনুমানিক ২২০,০০০ জন মানুষ এর সুবিধা পাবেন, যদিও যোগ্য প্রায় ৩.৪ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে এটি কেবল উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের জন্য প্রাধান্য দেওয়া হবে।
২০২২ সালের ইংল্যান্ডের স্বাস্থ্য সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রাপ্তবয়স্কদের ৬৪% অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতায় ভুগছেন।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
৩০ ডিসেম্বর ২০২৪