ইংল্যান্ডের এসেক্সের চেলমসফোর্ড জেল থেকে ভুলবশত মুক্তি দেওয়া হয় এক যৌন অপরাধী আশ্রয়প্রার্থীকে। হাদুশ কেবাতু নামে ওই ব্যক্তি এক নারী ও ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরীকে যৌনভাবে আক্রমণ করার দায়ে কারাদণ্ড ভোগ করছিলেন। প্রশাসনিক “ভুলের” কারণে তিনি হঠাৎ মুক্ত হয়ে যান এবং এরপর লন্ডনগামী ট্রেনে চড়ে পালিয়ে যান।
এসেক্স পুলিশ জানায়, শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) দুপুরে জেল কর্তৃপক্ষ থেকে তারা জানে, সকালে এক বন্দিকে ভুলক্রমে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। ঘটনার পরপরই পুলিশ ব্যাপক অনুসন্ধান অভিযান শুরু করে এবং বিভিন্ন সংস্থার সহায়তায় কেবাতুর অবস্থান খোঁজার চেষ্টা চালায়। তদন্তে জানা যায়, দুপুর ১২টা ৪১ মিনিটে তিনি চেলমসফোর্ড রেলস্টেশন থেকে লন্ডনগামী ট্রেনে ওঠেন।
পুলিশের এক মুখপাত্র বলেন, “এই ঘটনায় জনমনে যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে, তা আমরা গভীরভাবে বুঝতে পারছি। আমরা দ্রুততার সঙ্গে ওই অপরাধীকে খুঁজে বের করে পুনরায় আটক করার চেষ্টা করছি।” জনগণকে সতর্ক করে পুলিশ জানায়, কেউ যদি কেবাতুকে দেখে থাকেন বা তার অবস্থান জানেন, তাহলে ৯৯৯ নম্বরে কল করে রেফারেন্স ০৪৭৪ উল্লেখ করতে হবে।
চেলমসফোর্ডের সংসদ সদস্য মেরি গোল্ডম্যান বলেন, তিনি গভর্নরের পদত্যাগ দাবি করা থেকে নিজেকে সংযত রাখছেন, তবে ঘটনাটি কীভাবে ঘটল তা জানতে তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিনি বলেন, “এটি শুধুই এক ভয়াবহ প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয়, বরং এমন এক ‘কেলেঙ্কারি’, যার ফলে জননিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে।”
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত এক বছরে ভুলবশত মুক্তি পাওয়া বন্দির সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। His Majesty’s Prison and Probation Service (HMPPS)–এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত ২৬২ জন বন্দি ভুল করে মুক্তি পায়, যা আগের বছরের ১১৫ জনের চেয়ে অনেক বেশি।
প্রতিবেদন বলছে, কেবাতুকে আসলে অভিবাসন আটক কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেশে ফেরত পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু প্রশাসনিক ভুলে তাকে সরাসরি জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।
ঘটনায় উপ-প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এই ভয়াবহ ভুলে আমি হতবাক। পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে আমরা তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। আমি তাৎক্ষণিক তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। কেবাতুকে তার অপরাধের জন্য বহিষ্কার করতে হবে—সে ব্রিটেনের রাস্তায় ঘুরবে না।”
রিফর্ম ইউকে দলের নেতা নাইজেল ফারাজ এক্স–এ লিখেছেন, “এপিং হোটেল থেকে গ্রেফতারকৃত যৌন অপরাধীকে বহিষ্কার না করে ভুলবশত মুক্তি দেওয়া হয়েছে। সে এখন এসেক্সের রাস্তায় হাঁটছে। ব্রিটেন এখন ভেঙে পড়েছে।”
প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বন্দি মুক্তির দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তা সাময়িকভাবে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন এবং ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু হয়েছে। কারা বিভাগের এক মুখপাত্র বলেন, “জননিরাপত্তা আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। আমরা পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে ওই অপরাধীকে ফের হেফাজতে আনতে কাজ করছি।”
৩৮ বছর বয়সী হাদুশ কেবাতু কয়েক মাস আগে ছোট নৌকায় করে যুক্তরাজ্যে পৌঁছান। আদালতে প্রমাণিত হয়, তিনি জুলাই মাসে দুই কিশোরীকে বলেন যে, তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে সন্তান নিতে চান। এরপর এক কিশোরীকে চুমু খাওয়ার চেষ্টা, উরুতে হাত দেওয়া ও চুলে হাত বুলানোর মতো কাজ করেন।
এছাড়া, এক নারীকে তিনি যৌনভাবে আক্রমণ করেন—চুমু খাওয়ার চেষ্টা, তার পায়ে হাত দেওয়া এবং সৌন্দর্যের প্রশংসা করে অস্বস্তিকর অবস্থায় ফেলেন। সেপ্টেম্বর মাসে চেলমসফোর্ড ও কোলচেস্টার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তিন দিনের বিচার শেষে তিনি পাঁচটি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন। আদালত তাকে ১২ মাসের কারাদণ্ড দেন।
রায় ঘোষণার সময় কেবাতু আদালতে জানান, তার “দৃঢ় ইচ্ছা” হলো—শাস্তি শেষে তাকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হোক। কিন্তু সেই বহিষ্কারের আগেই প্রশাসনিক ভুলের কারণে তিনি এখন মুক্ত এবং পুলিশের খোঁজে পলাতক।
সূত্রঃ দ্য এক্সপ্রেস
এম.কে

