TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

ব্রেক্সিটে ভরাডুবিঃ সাদিক খানের গৃহনির্মাণ পরিকল্পনা রক্ষায় সরকারের জরুরি সহায়তা

লন্ডনের মেয়র স্যার সাদিক খান তার গৃহনির্মাণ পরিকল্পনায় ব্যর্থতার জন্য ব্রেক্সিটকে দায়ী করেছেন, তবে সরকার তার প্রকল্প টিকিয়ে রাখতে ৩০০ মিলিয়ন পাউন্ডের জরুরি উদ্ধার তহবিল অনুমোদন দিয়েছে। লন্ডনে বছরে ৮৮,০০০টি ঘর নির্মাণের প্রতিশ্রুতি পূরণে তিনি ব্যর্থ হওয়ায় এই অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

বুধবার হাউজিং সেক্রেটারি স্টিভ রিড–এর সঙ্গে যৌথভাবে একাধিক জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণে সম্মত হন মেয়র খান। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সরকার ৩২২ মিলিয়ন পাউন্ডের একটি তহবিল গঠন করবে, যা নির্মাণকারীদের উন্নয়নযোগ্য জমি পরিষ্কারে সহায়তা করবে। একই সঙ্গে পরিকল্পনা অনুমোদনের নিয়ম শিথিল করার ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে।

সাশ্রয়ী মূল্যের ঘর তৈরির বাধ্যবাধকতা ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা হচ্ছে—যা নির্মাণ শিল্পের জন্য বড় স্বস্তি। শিল্পখাতের নেতারা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছিলেন, অতিরিক্ত কোটা উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকে অলাভজনক করে তুলেছে।

সাদিক খান পদক্ষেপ উন্মোচনের সময় বলেন, “লন্ডনের গৃহনির্মাণ খাত এক ভয়াবহ সংকটে পড়েছে—উচ্চ সুদের হার, নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি, মহামারির প্রভাব এবং ব্রেক্সিট–পরবর্তী অস্থিরতা সব মিলিয়ে এ এক নিখুঁত ঝড়।”

তিনি আরও বলেন, “২০০৮ সালের বৈশ্বিক আর্থিক মন্দার পর এটাই গৃহনির্মাণের সবচেয়ে কঠিন সময়।”

মেয়র খান আগেও ব্রেক্সিটকে গৃহনির্মাণের ধীরগতির মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তার মতে, ইউরোপীয় নির্মাণ শ্রমিকদের ঘাটতি, সরবরাহ ব্যবস্থার ভেঙে পড়া, এবং নির্মাণ সামগ্রীর ব্যয় বৃদ্ধি—সবকিছুই নির্মাণ খাতকে বিপর্যস্ত করেছে।

অন্যদিকে, নির্মাণ শিল্পের প্রতিনিধিরা পাল্টা অভিযোগ করেছেন যে মেয়রের নিজের নীতিমালাই উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করেছে। তারা বলেন, সাশ্রয়ী ঘরের উচ্চ কোটা প্রকল্পগুলোকে অর্থনৈতিকভাবে টেকসই রাখেনি।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে লন্ডনে নির্মাণাধীন ঘরের সংখ্যা মাত্র ৪০,০০০—যা এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন।

নতুন পদক্ষেপ অনুযায়ী, যেসব ডেভেলপার তাৎক্ষণিকভাবে কাজ শুরু করবেন, তারা কর রেয়াত পাবেন—যাতে দ্রুত উন্নয়ন উৎসাহিত হয়। সাদিক খানকে ১,০০০ বর্গমিটারের বেশি আয়তনের গ্রিন বেল্ট প্রকল্পের অনুমোদনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে।

গ্রেটার লন্ডন অথরিটি ছয় সপ্তাহব্যাপী জনপরামর্শ প্রক্রিয়া শুরু করবে, এবং এসব জরুরি পদক্ষেপ ২০২৮ সাল পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।

মেয়র বলেন, “সরকারের কাছ থেকে এই নতুন ক্ষমতা ও প্রাথমিক ৩২২ মিলিয়ন পাউন্ডের অর্থায়ন পেয়ে আমি আত্মবিশ্বাসী—আমরা গৃহনির্মাণে নতুন গতি আনতে পারব এবং লন্ডনবাসীর জন্য আরও বেশি সাশ্রয়ী ঘর সরবরাহ করতে সক্ষম হব।”

এদিকে, ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের এক শীর্ষ কর্মকর্তা স্বাতি ধিংরা সতর্ক করে বলেছেন, ব্রেক্সিট ব্রিটেনের দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং দেশের অভিবাসন কাঠামোকে গভীরভাবে বদলে দিয়েছে।

তার মতে, “ব্রেক্সিট বিনিয়োগ ও উৎপাদনশীলতা স্থবির করে দিয়েছে এবং সামগ্রিকভাবে বাণিজ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।”

আয়ারল্যান্ডে দেওয়া এক ভাষণে তিনি বলেন, “ব্রিটিশ পরিবার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগের প্রতিশ্রুত অর্থনৈতিক সুফল পায়নি।”

তিনি আরও বলেন, “গণভোটের প্রায় এক দশক পর এখন প্রমাণিত, ব্রেক্সিট যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগ, উৎপাদনশীলতা ও বাণিজ্য পারফরম্যান্সের ওপর দীর্ঘস্থায়ী টান সৃষ্টি করেছে।”

ধিংরার এই মন্তব্য আসে ব্যাংক গভর্নর অ্যান্ড্রু বেইলির বক্তব্যের কয়েকদিন পর, যিনি সতর্ক করেছিলেন যে ব্রেক্সিট ‘দীর্ঘ ভবিষ্যতের জন্যও’ ব্রিটেনের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

ধিংরা আরও জানান, ২০১৬ সালে ব্রিটেনে আগত অভিবাসীদের ৬০ শতাংশ এসেছিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ থেকে, কিন্তু বর্তমানে ৯০ শতাংশই আসছে ইউরোপের বাইরের দেশ থেকে।

তিনি বলেন, “অভিবাসনের এই ব্যাপক পরিবর্তনের ফলে শ্রমবাজার ও ভোগের চাহিদার ওপর কী প্রভাব পড়েছে, তা আমরা এখনো পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারিনি।”

সূত্রঃ দ্য টেলিগ্রাফ

এম.কে

আরো পড়ুন

উত্তর আয়ারল্যান্ডে বনফায়ারে শরণার্থী নৌকার কল্পচিত্রঃ বর্ণবাদী ‘উৎসব’ ঘিরে তীব্র নিন্দা

লকডাউনে পার্টির ঘটনায় বরিস জনসন ও রিশি সুনাককে জরিমানা

উইন্ডরুশ কেলেঙ্কারী নিয়ে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর আক্ষেপ