ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে মদ, টোল, বিদ্যুৎ বিল ও নির্মাণ সামগ্রীর ওপর ধার্য করা তথাকথিত “গরু সেস” বা গরু ট্যাক্স এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। বিনিয়োগ ব্যাংকার সার্থক অহুজা সম্প্রতি তার বিশ্লেষণে দেখিয়েছেন, এই করের মাধ্যমে বিভিন্ন রাজ্য প্রতিবছর প্রায় ₹৩,০০০ কোটি টাকা আদায় করছে—যা গরু সুরক্ষা ও আশ্রয়কেন্দ্র পরিচালনার নামে ব্যয় করা হয়।
রাজস্থান ২০১৮ সালে এ ধরনের সেস চালু করে, যেখানে ভারতীয় তৈরি বিদেশি মদ (IMFL), বিয়ার ও ওয়াইনের বিক্রিতে ভ্যাটের ওপর ২০% গরু সেস আরোপ করা হয়। এই করটি মূলত খুচরা মূল্যের প্রায় ৫% সমান। রাজ্য সরকার এখন এই হার ২৫%-এ উন্নীত করার বিষয়টি বিবেচনা করছে।
অহুজার তথ্য অনুযায়ী, শুধু রাজস্থানেই বছরে প্রায় ₹২,০০০ কোটি টাকা এ খাত থেকে আদায় হয়। হরিয়ানা আদায় করে প্রায় ₹৫০০ কোটি, আর উত্তর প্রদেশে করের পরিমাণ ₹২০০ কোটির মতো। এই তিন রাজ্যই গরু আশ্রয়কেন্দ্র, খাদ্য ও চিকিৎসা সুবিধা এবং সুরক্ষা অবকাঠামোর জন্য এই রাজস্ব ব্যয় করার দাবি জানায়।
তবে গরু সেসের প্রয়োগ এখানেই সীমাবদ্ধ নয়। উত্তর প্রদেশে সিমেন্ট ও বালুর ওপর, মধ্য প্রদেশে সম্পত্তি ও যানবাহন বিক্রিতে, আর হরিয়ানায় টোল ও বিদ্যুৎ বিলে এই সেস আরোপিত। এমনকি কিছু রাজ্যে স্থানীয় করের অংশ হিসেবেও এটি যুক্ত করা হয়েছে, যা পরোক্ষভাবে ভোক্তাদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে।
বিনিয়োগ ব্যাংকার অহুজা লিংকডইন পোস্টে লেখেন, “আপনি যখন গুরগাঁও বা জয়পুরে মদ পান করেন, পাঞ্জাবে গাড়ি কিনেন কিংবা উত্তর প্রদেশে বাড়ি তৈরির জন্য সিমেন্ট-বালু কেনেন—প্রতিবারই আপনি গরু কল্যাণে ট্যাক্স দিচ্ছেন।” তিনি প্রশ্ন তোলেন, “যদি এত বিপুল রাজস্ব সংগ্রহ হয়, তবে রাস্তায় এখনো কেন এত অবাধে ঘুরে বেড়ানো গরু দেখা যায়?”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতে নির্দিষ্ট কল্যাণমূলক খাতের জন্য কর আরোপ নতুন নয়, তবে “গরু সেস”-এর পরিধি ও ব্যবহারের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন বেড়েই চলেছে। জনস্বার্থে আদায়কৃত অর্থ আসলেই কতটা গরু কল্যাণে ব্যয় হচ্ছে, তার নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য সরকারের পক্ষ থেকে এখনো প্রকাশ করা হয়নি।
সূত্রঃ বিজনেস টুডে
এম.কে
০৮ অক্টোবর ২০২৫