বাংলাদেশে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা শুরুর পর থেকেই অভিযোগের আঙ্গুল উঠছে ভারতের দিকে। ডুম্বুর ও ফারাক্কা বাঁধ খুলে দিয়ে রীতিমত অঘোষিত জলযুদ্ধ ঘটিয়েছে ভারত। যদিও বিভিন্ন বিবৃতি ও মন্তব্যের মাধ্যমে দায় এড়িয়ে গেছে দেশটির সরকার।
বাংলাদেশে এমন আকস্মিক বন্যা নজর কেড়েছে আন্তর্জাতিক মহলের। বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত সংবাদ প্রকাশ করেছে বিশ্ব গণমাধ্যম। যার মাধ্যমে আলোচনায় ছিলো ভারতের পানি নিয়ে স্বেচ্ছাচারিতার নানা চিত্র। তবে ভারতের একাধিক গণমাধ্যম বাংলাদেশের বন্যায় ভারতের দায় কে নানাভাবে অস্বীকার করতে থাকে। বাংলাদেশে বন্যা পরিস্থিতির জন্য ভারত দায়ী নয়- এই মর্মে একের পর এক সংবাদ প্রকাশ করতে থাকে দেশটির বিভিন্ন গণমাধ্যম।
কিন্তু এবার বাংলাদেশের বন্যার জন্য সরাসরি ভারতকেই দায়ী করলো জাতিসংঘ। সম্প্রতি জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্রের কার্যালয়ের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে উঠে আসে বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতি। বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পাওয়ায়, প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরুর আগেই বাংলাদেশের বন্যা নিয়ে মন্তব্য করা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতি পড়ে শোনানো হয়।
বাংলাদেশের বন্যা প্রসঙ্গে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেন, ভারী বৃষ্টি ও ভারত থেকে আসা উজানের ঢলে বাংলাদেশ আকস্মিক বন্যার কবলে পড়েছে। জাতিসংঘের দল দুর্গত এলাকায় আছে। তারা দুর্গত মানুষের মধ্যে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখার কিট ও খাবার বিতরণ করছে।
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় ও মৌসুমি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য প্রথমবারের মতো মানবিক সহায়তা পরিকল্পনা গত মাসে চালু করেছে মানবিক কার্যক্রম পরিচালনাকারী সংস্থাগুলো। এর লক্ষ্য ১২ লাখ মানুষকে সহায়তা করা। এখন পর্যন্ত প্রায় সাত লাখ মানুষের কাছে তারা সহায়তা পৌঁছাতে পেরেছে।
জাতিসংঘের এমন বিবৃতির পর গলার স্বর কিছুটা নামিয়েছে ভারত সরকার। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে ফারাক্কা ব্যারেজের গেট খুলে দেওয়া নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা ফারাক্কা বাঁধের গেট খোলার বিষয়ে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখেছি। এতে বলা হয়েছে, নদীর স্বাভাবিক গতিপথে ১১ লাখ কিউসেক পানি প্রবাহিত হবে। বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও প্রচার করে বাড়তি ভয় বাড়ানো হচ্ছে। আসলে এটি স্বাভাবিক মৌসুমি প্রক্রিয়া, উজানে গঙ্গা নদীর অববাহিকায় ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে পানির প্রবাহ বেড়ে যায়।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই মুখপাত্র বলেন, ‘প্রটোকল অনুযায়ী, নিয়মিত ও সময়মতো ফারাক্কা ব্যারেজের ডেটা বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট যৌথ নদী কমিশনের কর্মকর্তাদের প্রদান করা হয়। এবারও তা করা হয়েছে।’
সাম্প্রতিক প্রবল বন্যায় ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, সিলেট সহ দেশের মোট ১১ টি জেলা আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে সাতটি জেলায় মোট ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সূত্রঃ ইউ এন প্রেস
এম.কে
২৯ আগস্ট ২০২৪