TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

‘ভেঙে পড়েছে’ যুক্তরাজ্যের পারিবারিক পুনর্মিলন ব্যবস্থা

যুক্তরাজ্যের শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি এনজিও বলছে, দেশটির পারিবারিক পুনর্মিলন ব্যবস্থা ‘ভেঙে’ পড়েছে৷ এ কারণে যুক্তরাজ্যে পৌঁছাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেয়ার প্রবণতা বাড়ছে৷ গত বছর, দুই হাজার সাতশ জনেরও বেশি সঙ্গীবিহীন অপ্রাপ্তবয়স্ক ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়েছেন৷

২০১৫ থেকে ২০১৯ সালে যুক্তরাজ্য ২৯ হাজারের বেশি মানুষকে ভিসা দিয়েছে পরিবারের পুনর্মিলন ব্যবস্থায়৷ তাদের মধ্যে অন্তত ৯০ শতাংশ ছিলেন নারী ও শিশু৷

২০১৯ এর পর থেকে দীর্ঘসূত্রতায় আটকে আছে পারিবারিক পুনর্মিলনের আবেদন৷ তৈরি হয়েছে ‘বিশাল ব্যাকলগ৷’ ২০২৩ সালের জুলাইয়ে ব্রিটিশ সংবাদপত্র ইনডিপেনডেন্ট তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ১১ হাজারেরও বেশি পারিবারিক পুনর্মিলনের আবেদন ছয় মাসের বেশি সময় ধরে পড়ে আছে৷

সেফ প্যাসেজ তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আশ্রয়ের ব্যাকলগ সমাধানে সরকার কাজ করলেও পারিবারিক পুনর্মিলনের বিষয়টিকে উপেক্ষা করা হয়েছে৷ ২০২৩ সালে সালে ইনডিপেন্ডেন্ট চিফ ইন্সপেক্টর অব বর্ডারস অ্যান্ড ইমিগ্রেশন (আইসিআইবিআই) জানিয়েছেন, ‘‘হোম অফিস বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে মনোযোগ এবং অগ্রাধিকার দিতে ব্যর্থ হয়েছে৷’’

এই দীর্ঘসূত্রতার কারছে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া অনেক উদ্বাস্তু শিশুর শিক্ষা ও বেড়ে উঠায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে৷ অনেক শিশু খাওয়া দাওয়ার প্রতিও আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে৷ রিফিউজি কাউন্সিল জানিয়েছে, যুক্তরাজ্য ‘অন্য ইউরোপীয় দেশগুলোর চেয়ে আলাদা’, কারণ দেশটির নীতি বিচ্ছিন্ন থাকা পরিবারের সদস্যদের তাদের প্রিয়জনের সঙ্গে যোগ দেয়ার সুযোগকে কঠিন করে ফেলেছে৷

সেফ প্যাসেজের প্রতিবেদন বলছে, ‘‘যুক্তরাজ্যে পৌঁছাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিপজ্জনক ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেয়ার অন্যতম কারণ পারিবারিক বন্ধন৷’’ একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে ফ্রান্সের কালের তথাকথিত ‘জঙ্গল’ শিবিরে থাকা প্রায় আশ্রয়প্রার্থী বলেছেন যুক্তরাজ্যে তাদের পরিবারের সদস্যরা রয়েছেন৷

আইনি পথে পারিবারিক পুনর্মিলনের সুযোগ না পেয়ে পাচারকারীদের দিকে ঝুঁকতে বাধ্য হওয়া বহু মানুষের সন্ধান পেয়েছে অক্সফাম ইউকে এবং রিফিউজি কাউন্সিল৷

২৩ মে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সবশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এক বছরে অর্থাৎ ২০২৩ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত দুই হাজার ৭৬২ জন সঙ্গীবিহীন শিশু ছোটো নৌকায় করে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে এসেছেন৷ তাদের সবাই আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন৷

চ্যানেল পাড়ি দিয়ে আসা সঙ্গীবিহীন শিশুদের মধ্যে আফগানদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি৷ অন্যান্যদের মধ্যে আছে ইরান, সুদান, ইরিত্রিয়া এবং সিরিয়া থেকে আসা শিশুরা৷ শুধু এরাই নয়, আরো অনেক শিশুই আছেন যারা যুক্তরাজ্যে পরিবারের সঙ্গে যোগ দিতে মরিয়া হয়ে আছেন৷

সেফ প্যাসেজ ইন্টারন্যাশনালের মুখ্য নির্বাহী ড. ওয়ান্ডা উইপোরস্কা বলেন, ‘‘দুঃখজনক হলেও এটা দেখে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে এত বেশি আফগান শিশুকে একা একা এই বিপজ্জনক পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে৷ ২০২১ সালে কাবুলের পতন হলে আফগানদের যুক্তরাজ্যে পুনর্বাসনের সুযোগ দেয়া হয়েছে৷ কিন্তু এসব শরণার্থীদের পরিবারের পুনর্মিলন থেকে উপেক্ষা করা হয়েছে৷’’

তিনি আরো বলেন, যুক্তরাজ্যে থাকা আফগান বাবা-মায়েরা বলছেন ‘‘তাদের ছেলে মেয়েদের এখানে নিয়ে আসার কোনো উপায় নেই, ফলে তাদের বিপজ্জনক যাত্রা বেছে নিতে হচ্ছে৷’’

শরণার্থীদের জন্য নিরাপদ পথ তৈরি এবং পারিবারিক পুনর্মিলনের জটিলতা দূর করার জন্য ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে সেফ প্যাসেজ৷ কারণ, তারা মনে করছে, এর সঙ্গে অনেক শিশুর জীবন জড়িত৷

ড. উইপোরস্কা বলেন, ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ যদি সত্যিই পাচারকারী চক্র ভাঙতে চায়, তাহলে তাদের উচিত এই ধরনের মানুষের জন্য যুক্তরাজ্যে আসার নিরাপদ পথ তৈরি করা, তাহলে তারা আর ব্রিটেনে আসার জন্য পাচারকারীদের অর্থ দিতে বাধ্য হবেন না৷

সূত্রঃ ইনডিপেনডেন্ট

এম.কে
৩০ মে ২০২৪

আরো পড়ুন

বিধিনিষেধ তুলে ব্রিটেনের ‘স্বাধীনতা দিবস’ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা

অনলাইন ডেস্ক

যুক্তরাজ্যে এমপি হলেন ২২ বছরের স্যাম কার্লিং

ব্রেক্সিট ব্যয় যুক্তরাজ্য প্রতি পরিবার £1,000, ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড সতর্ক করেছে

নিউজ ডেস্ক