ইসরায়েলি ফিনটেক কোম্পানি নায়াক্স নীরবে বিশ্বজুড়ে ডিজিটাল পেমেন্ট খাতে বিপ্লব ঘটাচ্ছে। বছরে প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন লেনদেন প্রক্রিয়া করে কোম্পানিটি বর্তমানে ১২০ দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ভেন্ডিং মেশিন থেকে শুরু করে লন্ড্রি, কফি ডিসপেনসার, গ্যাস পাম্প, আর্কেড গেমস এমনকি বৈদ্যুতিক গাড়ির চার্জিং স্টেশন—প্রায় সব ধরনের আনঅ্যাটেন্ডেড পেমেন্ট সিস্টেমে এখন নায়াক্সের উপস্থিতি রয়েছে।
২০০৫ সালে যাত্রা শুরু করা নায়াক্স বর্তমানে ইসরায়েলের অন্যতম বৃহত্তম ফিনটেক প্লেয়ার। তেল আবিব স্টক এক্সচেঞ্জে কোম্পানিটির মূল্যায়ন দাঁড়িয়েছে ৬ বিলিয়ন শেকেল (প্রায় ১.৬ বিলিয়ন ডলার) এবং নাসডাকে এর বাজারমূল্য ১.৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। বিশ্বজুড়ে এর কর্মী সংখ্যা ১,২০০। কোম্পানির পেমেন্ট টার্মিনালগুলো সমর্থন করে ৮০টিরও বেশি ডিজিটাল পদ্ধতি, যেমন ক্রেডিট কার্ড, গুগল পে, অ্যাপল পে, পেপাল, কিউআর কোড এবং ইসরায়েলি অ্যাপ বিট।
সর্বশেষ ত্রৈমাসিকে নায়াক্সের রাজস্ব বেড়েছে ২২ শতাংশ এবং ২০২৫ সালে ৩৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। কোম্পানি আশা করছে ২০২৮ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর অন্তত ৩৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বজায় থাকবে। বর্তমানে তাদের রাজস্বের ৭৪ শতাংশের বেশি আসে সরঞ্জাম ভাড়া ও সেবা থেকে—যা বছরে ৩০ কোটি ডলারেরও বেশি। ফলে মাসের শুরু থেকেই ১৫ লাখ মেশিন থেকে স্থায়ী আয়ের প্রবাহ নিশ্চিত হয়।
অর্থনৈতিক মন্দা বা বৈশ্বিক সংকটেও নায়াক্সের প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থেকেছে। ২০০৮ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সংকট, করোনাভাইরাস মহামারি কিংবা যুদ্ধকালেও কোম্পানিটির বিক্রি বেড়েছে। নায়াক্স দ্রুত নতুন প্রযুক্তি ও নিয়মের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে গ্রাহক ধরে রেখেছে এবং নতুন ক্লায়েন্টও পেয়েছে—তুরস্কের ছোট মেশিন অপারেটর থেকে শুরু করে বহুজাতিক কোম্পানি পর্যন্ত।
সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে নায়াক্স একাধিক কোম্পানি অধিগ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে উইজমো, যা জারা, এইচঅ্যান্ডএম, আইকিয়া ও ম্যাকডোনাল্ডসের মতো খুচরা বিক্রেতাদের ডিজিটাল রসিদ সেবা দেয়; টিগাপো, যা আর্কেড ও বিনোদন পার্কের জন্য পেমেন্ট সিস্টেম তৈরি করে; এবং রোজম্যান, যা গ্যাস স্টেশন ও ফ্লিট ম্যানেজমেন্টে বিশেষায়িত। দক্ষিণ আমেরিকায় প্রবেশের জন্য কোম্পানিটি ব্রাজিলিয়ান প্রতিষ্ঠান ভিএমটেকনোলজিয়া ও ইউপেপে অধিগ্রহণ করেছে।
নায়াক্স পরিকল্পনা করছে এআই ব্যবহার করে অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম আরও গতিশীল করা, মেশিন ব্যবস্থাপনা উন্নত করা এবং ভোক্তার সঙ্গে ব্যক্তিগতকৃত যোগাযোগ তৈরি করা। টিগাপোর মাধ্যমে ইতিমধ্যে একটি চ্যাটজিপিটি-ভিত্তিক টুল চালু করা হয়েছে, যা আর্কেড মালিকদের ব্যবসা অপ্টিমাইজেশনে সহায়তা করছে। ভবিষ্যতে কোম্পানির পরিকল্পনা হলো, ভেন্ডিং মেশিন গ্রাহককে চিনবে, আলাপ করবে এবং তাকে আরও পণ্য কেনার জন্য উৎসাহিত করবে।
নায়াক্সের কর্মকর্তারা মনে করেন, এখনও বিশ্বজুড়ে প্রায় ৫ কোটি মেশিন শুধুমাত্র নগদ অর্থে পরিচালিত হয়—যা কোম্পানির জন্য বিশাল সম্ভাবনার বাজার।
সূত্রঃ ওয়াই নেট নিউজ
এম.কে
০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫