0.8 C
London
November 22, 2024
TV3 BANGLA
বাংলাদেশ

মইন ইউ আহমেদ একজন ব্যর্থ সেনাপ্রধান —ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ হাসান নাসির

২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহের পর হত্যার তদন্তে সচিব আনিসুজ্জামানের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় তদন্ত কমিশনের সদস্য ছিলেন আর্মি হেডকোয়ার্টারের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ হাসান নাসির। বিডিআর বিদ্রোহের দিন ঘটে যাওয়া ঘটনাবলি নিয়ে সম্প্রতি বক্তব্য রেখেছেন তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) মইন ইউ আহমেদ। ওই বক্তব্য ও সে সময়কার তদন্ত নিয়ে কথা বলেছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ হাসান নাসির।

তৎকালীন সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদ বলছেন, তিনি পিলখানায় গণ্ডগোলের কথা জানতে পারেন সাড়ে ৯টার দিকে। কিছুক্ষণ পর তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। কিন্তু তার ফোন ব্যস্ত পান। এর পর পরই ৪৬ ব্রিগেডকে অপারেশনের জন্য প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশ দেন, যার নামকরণ করা হয় অপারেশন রেস্টোর অর্ডার।

প্রস্তুতির বিষয়ে সেনাবাহিনীর একটা স্ট্যান্ডিং প্রসিডিউর রয়েছে, যখনই কোনো ইমার্জেন্সির সম্ভাবনা দেখা দেয়, তখনই একটা প্রস্তুতির আদেশ দেয়া হয়। আর সেটার জন্য একটা সময় দেয়া হয়। তার মানে এই নয় যে সৈনিকদের অপারেশনে অংশগ্রহণের জন্য আদেশ দেয়া হয়েছে। এর মানে হচ্ছে যে তোমরা রেডি থাকো।

মইন ইউ আহমেদের ভাষ্য অনুযায়ী, ৯টা ৫৪ মিনিটে তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করতে পারেন। তখন ৪৬ ব্রিগেডকে পিলখানায় যাওয়ার অনুমতি দেন শেখ হাসিনা। অনুমতি পাওয়ার পর ১ ঘণ্টার মধ্যে ৪৬ ব্রিগেড তাদের ব্রিগেড কমান্ডারের নেতৃত্বে যাত্রা শুরু করেন পিলখানার দিকে।

এ সময়টা ভুল। সেনাবাহিনীর প্রথম ডিটাচমেন্ট প্রায় সাড়ে ১০টায় পিলখানায় পৌছে যায়, সেটা মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে।

তৎকালীন সেনাপ্রধান এবং ৪৬ ব্রিগেড কমান্ডারের নির্দেশে তারই অধীন আর্টিলারি ইউনিটের প্রথম ডিটাচমেন্ট জাহাঙ্গীর গেট অতিক্রম করে পিলখানার দিকে যায়। সাড়ে ১০টায় তারা পিলখানায় পৌঁছে।

এ পর্যন্ত ঠিক আছে। মইন ইউ আহমেদ যেতে বলেছেন, কিন্তু অপারেশন তো করতে বলেননি। তারা সেখানে গিয়ে অবস্থান নিয়ে ছিল এবং আদেশের অপেক্ষায় ছিল।

২৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো অপারেশন হয়নি। ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ১১টার মধ্যে ১৩ জন অফিসারকে হত্যা করা হয়েছিল।

বেলা ১১টার সময় ৪৬ ব্রিগেডের গাড়িটি মেইন গেটে পৌঁছে বলে মইন ইউ আহমেদ বলেছিলেন।

৪৬ ব্রিগেডের প্রথম ইউনিট আনুমানিক সাড়ে ১০টায় চার নম্বর গেটে পৌঁছে। তার আগে ৯টা ৫০-এ র‍্যাবের একটি প্যাট্রোল দরবার হলের কাছে ৫ নম্বর গেটের কাছে যায়। দরবার হলের ১০০ গজের মধ্যে তারা যায়। র‍্যাবকে তখন রীতিমতো নিষেধ করা হয়েছে। তারা ঢুকতে চাচ্ছিল, কিন্তু আদেশ না পাওয়ায় ঢুকতে পারেনি। আর্মিও আদেশ পায়নি বলে ঢুকেনি।

২৫ ফেব্রুয়ারি যমুনায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মইন ইউ আহমেদসহ তিন বাহিনীর প্রধানরা ছিলেন। একপর্যায়ে বিদ্রোহীদের আত্মসমর্পণের বিষয়টি সামনে এল। সেদিন পরিস্থিতি শান্ত হয়নি, যা পরের দিন ২৬ তারিখে গিয়ে গড়ায়।

২৫ তারিখ রাতের বেলায় সব বিদ্রোহী দেশ থেকে বেরিয়ে চলে গেছে। তারপর পিলখানার ভেতরে যে কয়জন বিদ্রোহী ছিল সেগুলোও ২৬ তারিখ বেলা ২টার মধ্যে সব ক্লিয়ার করে ফেলা হয়েছে, পালিয়ে চলে গেছে। মূল কিলার যারা ছিল, তারা রাতের বেলা বেরিয়ে গেছে। সম্ভবত অ্যাম্বুলেন্সগুলোয় করে বেরিয়ে গেছে। চারটা আনরেজিস্টার্ড অ্যাম্বুলেন্স ঢুকেছিল এবং বেরিয়ে গেছে। মূলত এ চারটা অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে মূল কিলার যারা ভেতরে ছিল তাদের বের করা হয়েছে।

অথরিটির পক্ষ থেকে অ্যাম্বুলেন্স ভেতরে ঢুকেছে। একইভাবে অথরিটির ক্লিয়ারেন্স নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স বের হয়েছে। তাদের গেটে চেক করার কথা, চ্যালেঞ্জ করার কথা, ভেতরে কে আছে; তাদের থামিয়ে দেখার কথা। কিন্তু কোনো রকম চ্যালেঞ্জ ছাড়া, থামানো ছাড়া অ্যাম্বুলেন্স বেরিয়ে চলে গেছে।

ওইদিন রাতে ২ ঘণ্টা দেরিতে প্লেন উড্ডয়ন করে। এগুলো প্রমাণের বিষয় প্লেনে কারা চলে গেলো। সরকারের সহযোগিতা না পাওয়ায় এসব প্রমাণ করা যায়নি। গাড়িগুলো কোথায় গিয়েছিল, কী হয়েছিল, কিচ্ছু বোঝা যায়নি।

বিডিআর হত্যাকাণ্ড তদন্তে আমি শেষ পর্যন্ত ছিলাম। কিন্তু শেষ ২০-২৫ দিন আমাকে নিষ্ক্রিয় রাখা হয়েছে। ওই সময়ে অনেক তথ্য, অনেক প্রমাণ ডকুমেন্টস থেকে বের করে নেয়া হয়। বের করে নিয়ে মোটামুটি একটি পছন্দমতো রিপোর্ট তৈরি করা হয়।

মইন ইউ আহমেদ তদন্তের ঘটনায় জড়িত না। এটায় আরো উপরের মহল জড়িত। সত্যিকার অর্থে সেনাপ্রধান হিসেবে উনি দায়িত্বে ব্যর্থ হয়েছেন। কোনো সন্দেহ নেই। উনি একটি নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন।

বিদ্রোহীরা আত্মসমর্পণের জন্য আসলে অপেক্ষায় ছিল না। যারা নিরীহ তারা ছিল। প্রকৃত দোষীরা কেউ ছিল না। ওই সংখ্যাটা যদি বের করা যায়, কতজন সৈনিক পাওয়া গেছে। তাহলে বের হবে আসলে অপরাধী কেউ ছিল কিনা।

মইন ইউ আহমেদ আদেশ দিতে পারতেন। যখন উনার সৈনিক একজন মারা গেছেন, একজন আহত হয়েছেন। অপারেশনে চলে যাওয়ার জন্য একজন লোকাল কমান্ডার যথেষ্ট ছিল। আপনার উপর ফায়ার এসেছে। আপনার কারো আদেশের প্রয়োজন নেই। আমার সৈনিক মারা গেছে, এটা সাধারণ জ্ঞানের বিষয়। এর জন্য আইনকানুন দেখার প্রয়োজন নেই। আপনি রাস্তা দিয়ে চলছেন। কেউ আপনার উপর আক্রমণ করেছে।

সেনাবাহিনীর প্রথম ডিটাচমেন্ট গেটে পৌঁছার পর ভেতর থেকে গুলি আসে। সেটায় একজন সৈনিক মারা যান, একজন গুরুতর আহত হন। কিন্তু বলা হয় যে সেনাবাহিনীকে অপারেশন করতে নিষেধ করা হয়েছে।

প্রথম কথা হচ্ছে আদেশ দেয়ার প্রয়োজন আছে কিনা। লোকাল কমান্ডার নিজে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তিনি যদি কোনো কারণে আদেশ দিয়ে থাকেন, তাহলে ঊর্ধ্বতনের উচিত ছিল না করা। তোমার সৈনিক মারা গেছে, তুমি সরাসরি অ্যাকশনে চলে যাবা। এটাই স্বাভাবিক নিয়ম।

৪৬ ব্রিগেড মোতায়েন করেও অ্যাকশনে না যাওয়া কি উনার মইন ইউ আহমেদের ব্যর্থতা বললে খুব কম হবে। ওটা উনার জন্য লজ্জা।

সূত্রঃ বণিক বার্তা

এম.কে
০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আরো পড়ুন

হাসিনার পতনে যেসব চ্যালেঞ্জের মুখে ভারত

সিলেটে চিনি চোরাচালান চক্রের হোতা ছাত্রলীগের শীর্ষ ৪ নেতা

জের বিমান ভাড়া নিয়ে অসত্য তথ্য দিলেন বাংলাদেশ বিমানের এমডি