মন্দা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশটির জিডিপি দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে, যা গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ব্রিটেনের সরকারি পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির ফলে গত বছরের শেষদিকে মন্দার কবলে পড়ে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি, যা চলতি বছরে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের জন্য বড় ধাক্কা বলে মনে করছিলেন বিশেষজ্ঞরা। তবে সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান কনজারভেটিভ নেতাকে সে ধাক্কা সামলে নিতে সহায়তা করবে বলে মনে করেছেন অনেকে।
সাধারণত পরপর দুই প্রান্তিকে অর্থনীতি সংকুচিত হলে তাকে মন্দা বলা হয়। স্বাভাবিক সময়ে সাধারণত অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হয়। গড়পড়তা হিসাব অনুসারে, উৎপাদিত পণ্য ও সেবার মূল্য সাধারণত বৃদ্ধি পায় এবং তাতে মানুষের হাতে কিছুটা অর্থ জমে। অর্থাৎ জিডিপির প্রবৃদ্ধি হয়। কিন্তু কখনো কখনো উৎপাদিত পণ্য ও সেবার মূল্য হ্রাস পায়। পুরো এক প্রান্তিকে অর্থাৎ টানা তিন মাস যদি জিডিপি সংকুচিত হয়, তাহলে ধরে নেয়া হয় এটি সে দেশের অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত।
যুক্তরাজ্যের চ্যান্সেলর জেরেমি হান্ট সম্প্রতি বলেন, ‘ব্রিটেনের অর্থনীতি পূর্ণ মাত্রায় পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে।’ তবে বিরোধী লেবার পার্টির দাবি, মন্দা কাটিয়ে বিজয় ঘোষণা করার সময় এখনো আসেনি।
ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর অ্যান্ড্রু বেইলি সম্প্রতি বলেন, ‘বর্তমানে দেশের অর্থনীতি একটি পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে, তবে এখনো শক্তিশালী পুনরুদ্ধার হয়নি।’
ব্রিটিশ অডিট ফার্ম কেপিএমজি ইউকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ইয়ায়েল সেলফিন বলেন,”‘ব্রিটেনের অর্থনীতির সবচেয়ে খারাপ অবস্থা শেষ হতে শুরু করেছে। চলতি বছরের বাকি সময়েও প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে বলে আমরা আশা করছি। নিম্নগামী মূল্যস্ফীতি ও ক্রমবর্ধমান মজুরি”পারিবারিক আয়ের ক্ষত কিছুটা সারিয়ে তুলছে এবং ব্যয় বাড়াতে সহায়তা করছে।’
ব্রিটেনের জাতীয় পরিসংখ্যান দপ্তরের (ওএনএস) অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান শাখার পরিচালক লিজ ম্যাককিওন বলেন, ‘চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে যুক্তরাজ্যের রিটেইল খাত, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট, স্বাস্থ্যসহ প্রায় সব পরিষেবা খাত ভালো পারফর্ম করছে। এছাড়া গাড়ি নির্মাতাদের জন্যও দারুণ সময় ছিল জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিক। তবে নির্মাণ খাতের জন্য এটি ছিল সামান্য দুর্বল।’
যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি মন্দা থেকে বেরিয়ে আসার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রভাবক ছিল পরিষেবা খাত। এর মধ্যে রয়েছে আতিথেয়তা, শিল্প ও বিনোদন। এছাড়া মার্চের প্রথম দিকের ইস্টার হলিডেও প্রবৃদ্ধির পেছনে ভূমিকা রেখেছে। গত বছর ইস্টার হলিডে পড়েছিল এপ্রিলে।
ওএনএসের তথ্য বলছে, ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডের লেনদেনের তথ্য বিশ্লেষণে প্রমাণ পাওয়া গেছে, ভোক্তারা পোশাক ও বাড়ির আসবাবপত্রের জন্য বড় অংকের অর্থ খরচ করেছেন।
সূত্রঃ বিবিসি
এম.কে
১১ মে ২০২৪