14.9 C
London
May 6, 2025
TV3 BANGLA
Uncategorizedবাংলাদেশ

মিয়ানমারকে ঘিরে চীন-আমেরিকা প্রক্সি যুদ্ধ: বাংলাদেশ-ভারত-আসিয়ান অঞ্চলের ভবিষ্যৎ কী?

মিয়ানমারকে ঘিরে ক্রমশই জটিল হয়ে উঠছে ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে এখন চলছে এক প্রক্সি যুদ্ধ, যার আঁচ লেগেছে বাংলাদেশ, ভারত এমনকি আসিয়ান অঞ্চলের নিরাপত্তা ও কৌশলগত স্বার্থেও। বিশেষ করে ভারত এখন চাপে রয়েছে কাশ্মীর সীমান্তে পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনা, চীন-পাকিস্তান বন্ধুত্ব এবং আরাকান অঞ্চলে চীনা প্রভাব বৃদ্ধির কারণে।

বাংলাদেশের সম্ভাব্য লাভঃ

১. জ্বালানি নিরাপত্তা ও বাণিজ্যিক করিডোর: চীন যদি মিয়ানমার হয়ে বঙ্গোপসাগরে পোর্ট ও করিডোর তৈরি করে, বাংলাদেশ তাতে অংশগ্রহণের সুযোগ পেতে পারে। বিশেষ করে কক্সবাজার-টেকনাফ করিডোর ব্যবহার করে চীন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সংযোগ সৃষ্টি হলে, বাংলাদেশ নতুন ট্রানজিট ও বাণিজ্য সুযোগ পেতে পারে।

২. রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে চীনের প্রভাব: চীনের সাথে মিয়ানমারের গভীর সম্পর্ক থাকায়, বাংলাদেশ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চীনের মধ্যস্থতাকে কাজে লাগাতে পারে। যদিও চীন বরাবরই রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারকে পাশ কাটিয়ে এসেছে, তবুও বাংলাদেশ যদি কৌশলী ভূমিকা নেয়, চীনা স্বার্থ রক্ষার বিনিময়ে কিছু অর্জন সম্ভব।

৩. জলসীমা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা: বঙ্গোপসাগরে ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব বাড়ার ফলে, বাংলাদেশ তার নৌ-বাহিনী ও সামুদ্রিক নিরাপত্তায় বিনিয়োগ বাড়াতে পারবে এবং বড় শক্তিগুলোর সহায়তাও পেতে পারে।

ভারতের সম্ভাব্য ক্ষতিঃ

১. চীন-পাকিস্তান-তুরস্ক জোট: কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়ে চীন, তুরস্ক স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে তারা ভারতবিরোধী অক্ষ গঠন করছে। এতে ভারতের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান দুর্বল হচ্ছে।

২. নর্থ-ইস্টের বিচ্ছিন্নতাবাদ ইস্যু: মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে যদি চীনের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণে একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল গঠিত হয়, তা ভারতের ‘সেভেন সিস্টার’ রাজ্যগুলোর বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীদের আরও উস্কে দিতে পারে।

৩. জ্বালানি ও ট্রানজিট হারানো: চীন যদি মিয়ানমার হয়ে বঙ্গোপসাগরে সরাসরি প্রবেশের রুট শক্তিশালী করে, ভারত তার ট্রানজিট ও প্রভাব হারাতে পারে।

আরাকান স্টেট: গঠনের সম্ভাবনাঃ

আরাকান আঞ্চলিক সেনাবাহিনী (আরাকান আর্মি) ইতিমধ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বড় এলাকা দখল করেছে। চীনের পৃষ্ঠপোষকতায় একটি স্বায়ত্তশাসিত “আরাকান স্টেট” গঠনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এটি হলে, তা মিয়ানমারকে চীনের আরও ঘনিষ্ঠ করবে এবং ভারত-বাংলাদেশের দক্ষিণ সীমান্তে এক নতুন কৌশলগত চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।

সেভেন সিস্টার: অক্ষত থাকবেঃ

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল (সেভেন সিস্টার) বর্তমানে নানা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তের শিকার। আরাকান রাজ্যের স্বাধীনতা বা স্বায়ত্তশাসন এই অঞ্চলের নিরাপত্তাকে আরও বিপজ্জনক করে তুলতে পারে। বিশেষ করে যদি চীন এই অঞ্চলে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলিকে পরোক্ষ সমর্থন দেয়, তাহলে ভারতের সেভেন সিস্টার অঞ্চল অখণ্ড রাখা কঠিন হতে পারে।

মিয়ানমারকে কেন্দ্র করে যে কৌশলগত পুনঃবিন্যাস শুরু হয়েছে, তা শুধু চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বন্দ্ব নয়—এটি বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনার, ভারতের জন্য ঝুঁকির, এবং আসিয়ান অঞ্চলের জন্য পুনঃবিন্যাসের সময়। বাংলাদেশের উচিত হবে একটি ভারসাম্যপূর্ণ কূটনৈতিক অবস্থান বজায় রেখে বৃহৎ শক্তিগুলোর মধ্যে সমন্বয় তৈরি করা এবং জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষায় কৌশলগত বন্ধুত্ব গড়ে তোলা।

সূত্রঃ ইউরেশিয়া রিভিউ

এম.কে
০৬ মে ২০২৫

আরো পড়ুন

Property Mortgage with BENECO ll 1 October 2020 ll Limited company Buy To Let

পাথর পাচারের টাকায় ফুলে উঠছে উপরমহলের পকেট

অনলাইন ডেস্ক

বাংলাদেশ সহ বিশ্বের ১৮০ দেশে চালু গুগল বার্ড