মিয়ানমারের শাসন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে রাখলেও দেশটিতে স্বাধীনভাবে চলাফেরার সক্ষমতা হারাচ্ছেন জান্তা সরকার প্রধান মিন অং হ্লাইং। জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী ও তাদের সহযোগীদের সঙ্গে চলমান যুদ্ধ মিয়ানমারের অধিকাংশ এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে মিন অং হ্লাইংসহ জান্তার শীর্ষ কর্মকর্তাদের স্বাধীন ও নিরাপদ চলাচলের সুযোগও সীমিত হয়ে পড়ছে।
মিয়ানমারের ১৪টি প্রদেশ ও অঞ্চল এবং একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে নেপিদো জান্তার প্রধান কেন্দ্র। এছাড়া দেশটির রাজধানীতে জান্তা প্রধান চলতি বছর ছয়বারের বেশি প্রবেশ করতে পারেননি। এসব অঞ্চলের মধ্যে শুধু প্রদেশ ও আঞ্চলিক রাজধানীতেই তার চলাফেরা নিরাপদ। চলতি বছর এখন পর্যন্ত মিন অং হ্লাইং ইয়াঙ্গুন, বাগো, মান্দালয় ও সাগাইং অঞ্চলের পাশাপাশি রাখাইন ও শান প্রদেশ ভ্রমণ করেছেন। ইয়াঙ্গুন বাগো ও মান্দালয়ে তার সফর আশ্চর্যজনক কিছু নয়। অনেকের মতে নেপিতাওর পর এগুলোকে যৌথভাবে দ্বিতীয় নিরাপদ অঞ্চল হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
চলতি বছরের মার্চে জান্তা শাসনবিরোধী অঞ্চল সাগাইংয়ে ভ্রমণ করলেও এটি মিন অংয়ের জন্য কোনো সম্মানজনক বিষয় নয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে তিনি মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর নর্থ ওয়েস্টার্ন কমান্ডের সদর দপ্তর ও নিকটবর্তী আঞ্চলিক রাজধানী মনোয়ার বাইরে পা রাখার সাহস করেননি। রাখাইন প্রদেশও পরিদর্শন করেছেন জান্তা প্রধান। জুলাইয়ে শেষবার রাখাইন রাজ্যে গিয়েছিলেন মিন অং হ্লাইং। সে সময় রাখাইন বেশ শান্তিপূর্ণ ছিল। এর চার মাস পরই সেখানকার জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে।
এখন পর্যন্ত যেসব জায়গায় জান্তা প্রধান ভ্রমণ করেছেন সেগুলোর মধ্যে শান প্রদেশ সবচেয়ে অশান্ত ছিল। গত সপ্তাহে তিনি এ প্রদেশ পরিদর্শনে যান। অক্টোবরের শেষ দিক থেকে জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী, তাদের মিত্র ও জান্তা বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধের কারণে অঞ্চলটি আরো অশান্ত হয়ে ওঠে। জান্তা সরকার পরিচালিত গণমাধ্যমগুলোর তথ্যানুযায়ী, লাশিওতে সফরের মূল কারণ ছিল যুদ্ধে আহত সৈন্য ও বাস্তুচ্যুত লোকদের সান্ত্বনা দেয়া। লাশিওতে সাহসীভ্রমণ সত্ত্বেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিন অং হ্লাইংকে উপহাস করা হয়েছে। মূলত শান প্রদেশের কোকাং বা কারেনি (কায়া) প্রদেশের লইকাউয়ে যাওয়ার সাহস না দেখানোই এ উপহাসের কারণ।
অন্যদিকে জান্তার সঙ্গে যুদ্ধরত জাতিগত সংখ্যালঘু যোদ্ধারা গতকাল শান রাজ্যে একটি বাণিজ্য কেন্দ্র দখলে নেয়ার দাবি করেছে। অক্টোবরের শেষ দিকে আরাকান আর্মি, মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েনস আর্মি ও তায়াং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি যৌথ আক্রমণ শুরুর পর থেকে মিয়ানমারের উত্তর শান প্রদেশজুড়ে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়।
থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েনস জানায়, তারা চীনের সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থান ও সীমান্ত হাবগুলো দখলে নিয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ২০২১ সালে ক্ষমতা দখলের পর থেকে জান্তার কাছে এটিই সবচেয়ে বড় সামরিক চ্যালেঞ্জ।
সূত্রঃ দি ইরাবতী
এম.কে
১৭ ডিসেম্বর ২০২৩