টিভিথ্রি ডেস্ক: বিশ্ব মাতানো টিভি সিরিজ গেম অব থ্রোনসের নাম কে না জানেন! ক্ষমতার লড়াইকে কেন্দ্র করে বানানো এই সিরিজের সব চরিত্র কাল্পনিক হলেও বাস্তব ইতিহাসের চরিত্রদের উপর নির্মিত আরেকটি টিভি সিরিজ যেন কোনো অংশেই কম যায় না এ প্রতিযোগিতায়। সিরিজটির নাম ‘দিরিলিস আরতুগ্রুল’। ২০১৪ সালে সম্প্রচার শুরু হওয়া এই তুর্কি টিভি সিরিজটিকে বলা হচ্ছে, মুসলিম বিশ্বের গেম অব থ্রোনস।
সিরিজটি সৌদি আরব, পাকিস্তান, কুয়েত, কাতারসহ বিভিন্ন দেশে বিশেষত মুসলিম বিশ্বে সিরিজটি ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করে। এছাড়াও লাতিন আমেরিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও আফ্রিকাতেও এর জনপ্রিয়তা কম না। ২০১৭ সালে সিরিজটি ডাবিংসহ সম্প্রচার শুরু করে বাংলাদেশের মাছরাঙা টিভি।
দিরিলিস আরতুগ্রুল সিরিজটি উসমানী সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপনকারী মহানায়ক আরতুগ্রুল গাজীকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে। আরতুগ্রুল গাজী ছিলেন উসমানী সাম্রাজ্যের সুলতান প্রথম উসমানের পিতা। তিনি বাইজেন্টাইনের বিরুদ্ধে রোমের সেলজুকদের সাহায্য করার জন্য তুর্কমেনিস্তান থেকে আনাতোলিয়ায় পৌঁছান। পরবর্তীতে বেশ কিছু ধারাবাহিক ঘটনার মাধ্যমে তিনি উসমানীয় সাম্রাজ্য সৃষ্টিতে নেতৃত্ব দেন। রোম্যান্স, কমেডি, মিউজিক্যাল স্কোর এবং বহু রাক্তাক্ত যুদ্ধ দৃশ্যের সমন্বয়ে সিরিজটি মহাকাব্যিক বৈশিষ্ট বহন করে। এখানে ফুটে উঠেছে ইসলামিক আচার অনুষ্ঠান এবং মুসলিম দার্শনিকদের জ্ঞানের কথা যা চমৎকৃত করে দর্শকদের।
২০১৭ সালে ইংরেজি সাবটাইটেল যুক্ত করে সিরিজটি ছাড়ে নেটফ্লিক্স। ফলে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রসহ ইংরেজি ভাষী দেশগুলোর দর্শকদের কাছে পৌঁছে যায় সিরিজটি। বর্তমানে সিরিজটি ৬টি ভাষায় ডাবিং হয়েছে এবং সম্প্রচার হয়েছে ৭২টি দেশে। কেবল ইউটিউবেই এর ভিউ দেড় বিলিয়ন ছাড়িয়েছে।
এর নির্মাতা তুর্কি রেডিও টেলিভিশনের (টিআরটি) ভাষ্যমতে, মূল্যবোধ লেনদেনের মাধ্যমে সিরিজটি বিশ্বময় দর্শোকদের সংযুক্ত করেছে। এর আরেকটি বড় গুণ হচ্ছে, সিরিজটি দেখার সময় দর্শকরা নিজেকে এর নায়কের ভূমিকায় অবতীর্ন হওয়ার সুযোগ পায়। এছাড়া বিভিন্ন চলচ্চিত্র বা টিভি সিরিজে যেভাবে মুসলিমদের যে ‘গতানুগতিক’ ভাবমূর্তি ফুটিয়ে তোলা হয় এখানে তা ব্যতিক্রম। এমনকি তুরস্কের স্থানীয় রাজনীতিতেও এর প্রভাব রয়েছে বলে মনে করেন অনেকে।
সম্প্রতি লকডাউন চলাকালীন সময়ে সিরিজটি নতুন করে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ২০১৯ সালের অক্টোবরে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সিরজি উর্দু ভাষায় ডাবিং করে সম্প্রচারের নির্দেশ দেন পিটিভিকে। কারণ তিনি মনে করেন ইতিবাচক ইসলামি মূল্যবোধ প্রচার ও ইসলামভিতীর প্রতিষেধক হতে পারে সিরিজটি। গত এপ্রিলে পিটিভি ইউটিউবে সিরিজটি আপলোড করার পর চ্যানেলটির সাবস্ক্রাইবার ৫৭ লাখ ছাড়িয়ে যায়।
পাঁচ সিজনের এই সিরিজের মূল ভূমিকায় অভিনয় করেছেন এনজিন আলতান দোজায়তান। নির্মাণ করেছেন মেহমেত বোজদাগ ও কেমাল তেকদেন। প্রসঙ্গত, বিশ্বব্যাপী টিভি সিরিজ রফতানিতে বিশ্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরের (দ্বিতীয়) অবস্থানেই রয়েছে তুরস্ক।
১৬ আগস্ট ২০২০
এনএইচটি