গুম ও নির্যাতনের অভিযোগে দায়ের করা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলায় অভিযুক্ত ৩০ জনের মধ্যে ১৫ জন সেনা কর্মকর্তাকে হেফাজতে নেওয়ার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। তবে ট্রাইব্যুনালের জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানা এখনো সেনা সদর হাতে পায়নি বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
শনিবার বিকেলে ঢাকার আর্মি অফিসার্স মেসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সেনাবাহিনীর অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান।
তিনি জানান, দুটি মামলায় মোট ৩০ আসামির মধ্যে ২৫ জন সেনা কর্মকর্তার অন্তর্ভুক্ত—যার মধ্যে ৯ জন অবসরপ্রাপ্ত, একজন এলপিআরে এবং ১৫ জন বর্তমানে কর্মরত। “আইনি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে” এই ১৫ জন কর্মকর্তাকে সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
মেজর জেনারেল হাকিমুজ্জামান বলেন, “গ্রেফতারি পরোয়ানা এখনো হাতে আসেনি, পুলিশের পক্ষ থেকেও কোনো যোগাযোগ হয়নি। তবে আইন অনুযায়ী আমরা নিজেরা ব্যবস্থা নিয়েছি।” তিনি আরও জানান, “একজন বাদে ১৬ জন কর্মকর্তার সবাই সেনা সদরে রিপোর্ট করেছেন; মেজর জেনারেল কবির আহাম্মদ যোগাযোগ করেননি এবং তাকে ‘ইললিগ্যাল অ্যাবসেন্ট’ ঘোষণা করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “মেজর জেনারেল কবির বাসা থেকে আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করতে বের হন, এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ। সকল বন্দর ও পোর্টে তার বিদেশ গমন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।”
সেনা হেফাজতে থাকা কর্মকর্তারা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন না বলেও জানান মেজর জেনারেল হাকিমুজ্জামান। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “তারা হেফাজতে আছেন, তবে প্রশাসনিক হিসাব ও রেশন সুবিধার জন্য সংযুক্তির আদেশ দেওয়া হয়েছে।”
গুমের ঘটনায় সেনা বাহিনীর অভ্যন্তরীণ তদন্ত হবে কি না—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “গুম কমিশন কাজ করছে, তাই সেনাবাহিনী আলাদা কমিশন গঠন করলে তা আন্ডারমাইন হবে। আমরা কমিশনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছি।”
তিনি বলেন, “সেনাপ্রধান স্পষ্ট করে বলেছেন—আমরা ন্যায়ের পক্ষে, ইনসাফে কোনো আপস নেই। গুমের শিকার পরিবারগুলোর প্রতি আমাদের সহানুভূতি আছে।”
ছয় অক্টোবরের সংশোধনী অনুযায়ী, ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল হলে কোনো সরকারি চাকরিজীবী ওই পদে থাকতে পারবেন না। এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে মেজর জেনারেল হাকিমুজ্জামান জানান, “প্রজ্ঞাপনের ব্যাখ্যা আমরা চাইব। বিষয়টি স্পষ্টভাবে বুঝে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের বিষয়ে তিনি বলেন, “তারা সেনা আইনের আওতায় পড়েন না। তারা চাইলে সেনা হেফাজতে আসতে পারেন অথবা আদালতে আত্মসমর্পণ করতে পারেন। পুলিশ চাইলে তাদের গ্রেফতার করতে পারে।”
ডিজিএফআই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এই সংস্থা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে। তাই সেনা সদর থেকে এর বিষয়ে মন্তব্য করার এখতিয়ার নেই।”
২২ অক্টোবরের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা সম্ভব হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সবকিছু আইনি প্রক্রিয়ায় সমাধান করা হবে।”
সূত্রঃ বিবিসি
এম.কে
১১ অক্টোবর ২০২৫