TV3 BANGLA
যুক্তরাজ্য (UK)

যুক্তরাজ্যের অভিবাসন তথ্যঘাটতি নীতি প্রণয়নকে বাধাগ্রস্ত করছেঃ অক্সফোর্ড গবেষণা

যুক্তরাজ্যের অভিবাসন ব্যবস্থা নিয়ে জনআলোচনা ও নীতি প্রণয়নে গভীর প্রভাব ফেলছে সরকারি পরিসংখ্যানে বড় ধরনের তথ্যঘাটতি— এমনটাই জানাচ্ছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইগ্রেশন অবজারভেটরি। সংস্থাটি বলছে, বিশেষ করে মানবাধিকার আইন (ECHR)–সংক্রান্ত মামলার ক্ষেত্রে সরকার কতটা তথ্যহীন অবস্থায় রয়েছে, তা উদ্বেগজনক।

 

গবেষণায় ১০টি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে তথ্যের অভাব চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে অভিবাসন আইন প্রয়োগ, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া, এবং যুক্তরাজ্যে বসবাসরত অনিবন্ধিত মানুষের প্রকৃত পরিসংখ্যান। থিংকট্যাঙ্ক জানিয়েছে, বর্তমান তথ্যের ভাণ্ডারে কোথাও উল্লেখ নেই কত মানুষ মানবাধিকার সনদের (ECHR) ভিত্তিতে দেশে থাকার আবেদন করছেন বা সফলভাবে আপিল করছেন।

মাইগ্রেশন অবজারভেটরির পরিচালক মাদেলিন সাম্পশন বলেন, ECHR–এ যুক্তরাজ্যের সদস্যপদকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক বিতর্ক তীব্র হলেও এর বাস্তব প্রভাব কতটা এবং কোথায়— সে বিষয়ে পরিসংখ্যান অপ্রতুল। তার ভাষায়, “নির্ভরযোগ্য তথ্য না থাকলে দীর্ঘমেয়াদি জাতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।”

এই পর্যবেক্ষণ প্রকাশিত হলো এমন এক সময়ে যখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাবানা মাহমুদ আশ্রয় ব্যবস্থা ও অভিবাসন নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি কিয়ার স্টারমারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে মোট অভিবাসন সংখ্যা কমানোর উদ্যোগ নিচ্ছেন। সরকারের পরিকল্পনা হলো মানবাধিকার আইনকে নির্বাসন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার ঠেকাতে নতুন আইন আনা।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, অভিবাসন ব্যবস্থায় মানুষের পুরো যাত্রাপথের তথ্য একত্রে সংযুক্ত নয়। ফলে আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদন প্রত্যাখ্যানের পর তাদের কী হয়, কী ধরনের আপিল করেন বা আদৌ দেশে ফেরত পাঠানো হয় কি না— এসব পর্যবেক্ষণ করা প্রায় অসম্ভব।

থিংকট্যাঙ্কের সিনিয়র গবেষক পিটার ওয়ালশ বলেন, “যাদের আবেদন নাকচ হয় কিন্তু ফেরত পাঠানো যায় না, তাদের অবস্থা সরকার ঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে না। একইভাবে আপিল প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতাও অজানা।” এই পরিস্থিতিতে সরকার যে অভিবাসন ও আশ্রয় আপিল ব্যবস্থাকে পুনর্গঠনের পরিকল্পনা করছে, তা আরও গভীর প্রশ্নের জন্ম দেয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বিরোধী দলগুলো এ নিয়ে সরকারকে তীব্র সমালোচনা করেছে। লিবারেল ডেমোক্র্যাটসের হোম অ্যাফেয়ার্স মুখপাত্র ম্যাক্স উইলকিনসন বলেন, “হোম অফিস নিজেই যখন তথ্য ঠিকমতো সংরক্ষণ করে না, তখন পুরো ব্যবস্থাই ভেঙে পড়ার ঝুঁকিতে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে পড়া আরও সহজ হয়ে যায়।”

শ্যাডো হোম সেক্রেটারি ক্রিস ফিলিপ অভিযোগ করেন, লেবার সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করছে না। তার দাবি, “সত্য প্রকাশ পেলে সরকারের দুর্বল নীতি উন্মোচিত হয়ে পড়বে বলেই তারা দেশকে অন্ধকারে রাখছে।”

অপরদিকে হোম অফিস জানায়, তারা পূর্ববর্তী সরকারের “অব্যবস্থাপনা”র অংশ হিসেবে এই সংকট পেয়েছে। এক বিবৃতিতে বলা হয়, নেট মাইগ্রেশন ইতোমধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ কমেছে এবং অবৈধ অভিবাসী ফেরত পাঠানোর হার ২৩% বেড়ে প্রায় ৫০ হাজারে পৌঁছেছে।

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

এম.কে

আরো পড়ুন

যুক্তরাজ্যে নতুন অভিবাসন নীতিঃ কেয়ার সেক্টরে বিদেশিদের পথ রুদ্ধ

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন নিলেন বরিস জনসন

নিউজ ডেস্ক

ক্রিপ্টোতে লিভারপুল শীর্ষে, অনলাইন প্রেমে লন্ডন, টিকটকে শেফিল্ড—ব্রিটেনজুড়ে ডিজিটাল বৈচিত্র্য