সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে অভিবাসন ও অপরাধকে ঘিরে বিভ্রান্তিকর তথ্যের প্রচার নিয়ে বিতর্ক তীব্র হয়েছে। একাধিক উচ্চপদস্থ কনজারভেটিভ নেতা ও দলীয় ব্যক্তিত্ব এমন তথ্য ব্যবহার করেছেন, যা যাচাইয়ে ভুল বা অতিরঞ্জিত প্রমাণিত হয়েছে।
কনজারভেটিভ শ্যাডো জাস্টিস সেক্রেটারি রবার্ট জেনরিক দাবি করেন, “লন্ডনে যৌন অপরাধের ৪০% বিদেশিরা করে।” কিন্তু এই তথ্য এসেছে সেন্টার ফর মাইগ্রেশন কন্ট্রোল (CMC) নামের একটি অভিবাসন নিয়ন্ত্রণপন্থী থিংকট্যাঙ্ক থেকে। মেট্রোপলিটন পুলিশের দেওয়া পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এটি শুধুমাত্র অভিযুক্তদের সংখ্যা, দোষী সাব্যস্তদের নয়। তাছাড়া আফগান ও এরিত্রিয়ানদের যৌন অপরাধে ২০ গুণ বেশি দোষী হওয়ার দাবি পুরোনো জনসংখ্যার তথ্যের ওপর ভিত্তি করে, যা বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্যহীন।
অন্যদিকে, কনজারভেটিভ এমপি নিক টিমোথি সামাজিক মাধ্যমে অভিযোগ করেন, পুলিশ অবৈধ ডেলিভারু কর্মীকে রক্ষা করছে। তিনি একটি ছবি শেয়ার করে লেখেন, একজন “অবৈধ কর্মীকে” পুলিশ নিরাপত্তা দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। মেট্রোপলিটন পুলিশ জানায়, ব্যক্তি কেবল ডেলিভারি দিতে এসেছিলেন, অবৈধ কাজের কোনো প্রমাণ নেই। প্রতিবাদকারীদের ভিড় থেকে তাকে নিরাপদে সরাতে পুলিশ হস্তক্ষেপ করে।
এছাড়া দ্য টেলিগ্রাফ–এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, লন্ডনে প্রতি ১২ জনের ১ জন অবৈধ অভিবাসী। পরে জানা যায়, এই পরিসংখ্যান টেমস ওয়াটারের একটি গবেষণার ভুল ব্যাখ্যা থেকে এসেছে। গবেষণাটি পানির চাহিদা নিয়ে ছিল এবং অনিয়মিত (irregular) অভিবাসী ছাড়াও পর্যটক, দ্বিতীয় বাড়ির মালিক ও অনির্দিষ্ট বসবাসকারীদের অন্তর্ভুক্ত করেছিল।
অভিযুক্তদের জাতিগত পরিচয় প্রকাশ নিয়েও বিতর্ক চলছে। শিশুকে ধর্ষণের মামলায় অভিযুক্তদের ‘অপরাধী’ আখ্যা দেওয়ায় ওয়ারউইকশায়ারের কাউন্সিল নেতা জর্জ ফিঞ্চ সমালোচনায় পড়েছেন, যদিও তারা এখনও আদালতে দোষী প্রমাণিত হয়নি। এ বিষয়ে নাইজেল ফারাজ তাকে সমর্থন দিয়ে বলেন, “তিনি সামান্য আবেগপ্রবণ হয়েছেন, এটি ভালো।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অভিবাসন ও অপরাধ নিয়ে ভুল পরিসংখ্যান প্রচার জনমনে আতঙ্ক ও ঘৃণার পরিবেশ সৃষ্টি করছে। তথ্যের স্বচ্ছতা না বাড়ালে এবং রাজনৈতিক বক্তব্য যাচাই না করলে বিভ্রান্তি আরও বাড়বে।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
এম.কে
০৭ আগস্ট ২০২৫